ডেস্ক: দেশের অন্যান্য জেলায় তুলনামূলকভাবে বন্যা কম হলেও উত্তরাঞ্চলে এটি যেন নিয়মিত ব্যাপার। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট ও সিরাজগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় প্রতি দু’এক বছর পরপরই বড় ধরনের বন্যা দেখা যায়।
সবশেষ অবস্থা অনুযায়ী, ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে আসা পানির ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুরের কয়েকটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনো সেসব এলাকায় বন্যার পানি বাড়ছে।
অন্যদিকে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে রংপুর ও লালমনিরহাটের লক্ষাধিক মানুষ। বিশেষ করে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানির তোড়ে অনেক এলাকায় তিস্তা নদীর পাশে দেওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে এসব এলাকা দিয়ে বন্যার পানি ফসলি জমি এবং লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।
বন্যা ঠেকাতে উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট ও সিরাজগঞ্জের অনেক এলাকায় নানারকম প্রকল্প বা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বন্যা পুরোপুরি রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিবছর এসব এলাকার ফসলি জমি প্লাবিত হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতিও হয় অনেক।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলছেন, প্রতিবছর বন্যা হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, প্রথমত নদীগুলোর নাব্যতা কমে অনেক জায়গায় চর পড়ে গেছে। শুকনোর সময় প্রায় হেঁটে পার হওয়া গেলেও বর্ষার সময় এসব নদীতে উজান থেকে ১ লাখ কিউসেকের বেশি পানি চলে আসে। বিশেষ করে শুষ্ক সময়ে উজানে ভারতের অংশে পানি সরিয়ে নেওয়া হয় আর বর্ষার সময় সেই পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে বর্ষা আসলে নদীর গতিপথ পাল্টে যায়, দুকুল উপচে পানি পড়ে। এতে অল্প বৃষ্টি হলেই বা নদীতে পানি বাড়লেই বন্যা দেখা দেয়।
তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার মতো নদীগুলোর উজানে অনেক স্থানে মাইনিং হচ্ছে, সেসব কারণে নদীতে প্রচুর পলি, বালু বা পাথর এসে পড়ে। এগুলো পানির সাথে সাথে ভাটির দিকে চলে আসে। ড্রেজিং করেও পুরোপুরি মোকাবেলা করা যায় না।
প্রফেসর সাইফুল ইসলাম বলছেন, আমরাও অনেক জায়গায় জলাশয় ভরে ফেলছি, দূষণ আর দখলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হলে পানি সহজে বের হতে না পেরে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এবার চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে আমরা যা দেখেছি, গত বছর সিলেটেও এমন দেখা গেছে। সেখানেও দেখা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার পর পানি নদী দিয়ে নামতে না পেরে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি মনে করেন, এই সমস্যা সমাধানে নদীর নাব্যতা রক্ষা করা, দূষণ আর দখল ঠেকানোর ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আরও এক দিন বৃষ্টি হওয়ার পর কমে যাবে। ফলে আপাতত নদীতে পানি বাড়ার আশঙ্কা কম। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আবার বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র: বিবিসি