নিউজ ডেস্ক: রাজনীতির ময়দানে জাতীয় নির্বাচনের আলোচনা শুরু হয়ে গেলেও নতুন বাস্তবতায় তা থেকে বহু দূরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। বরং আওয়ামী লীগ বাদে বাকি শরিকরা রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াবে কীভাবে, কর্মসূচি নিয়ে আবার রাজনীতির মাঠে নামতে পারবে কিনা-এসব প্রশ্নে নিজেরাই সন্দিহান।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের তকমা পাওয়া জাতীয় পার্টিও রাজনীতির জমিন ফিরে পাওয়া আর নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছে। ভাঙনে নাস্তানাবুদ দলটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও হোঁচট খাচ্ছে বারবার। সর্বশেষ অগাস্টে আরেক দফা ‘ভাঙন’ ধরেছে জাতীয় পার্টিতে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রায় দুই দশকের পথচলায় ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর।
জোটের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তার দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সংস্কার উদ্যোগ বা নির্বাচনি প্রক্রিয়ার কোনো কিছুতেই ডাকা হয়নি জোটের কোনো শরিক দলকে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আলোচনায় জাতীয় পার্টি অংশ নিলেও পরে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতার মুখে পরবর্তী সময় আর কোনো উদ্যোগ-আলোচনায় দলটি রাখা হয়নি।
১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জেপি) এর সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে ১৪ দল (জোট) আসলে অকার্যকর। যেহেতু অকার্যকর, সুতরাং এটা নিয়ে এখন কোনো ভাবনাও নাই। ভবিষ্যৎ নিয়ে তো এখন কিছু বলা যায় না।”
গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন।
গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড় ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় প্রায় নিষ্ক্রিয় থেকেছে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা।
শেষ মুহূর্তে সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে অগাস্টের প্রথম থেকে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামারও পরিকল্পনা নেয় জোটটি। কিন্তু তার কিছুদিনের মধ্যে সরকারের পতন ঘটলে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারাও গা ঢাকা দেন।
সরকারের সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়াও ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু গ্রেপ্তার হয়েছেন। দুইজনই আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী।
জাতীয় পার্টি (জেপি) নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে আটক করার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের এই জোটের নেতাকর্মীরাও মামলার ভয়ে চুপসে যান। অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরেও পরিস্থিতি প্রায় একইরকম আছে।
১৪ দলের শরিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বছর ধরে হাতে গোনা দু-একটি ছাড়া দলগুলোর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই, কোনো কর্মসূচি নিতেও পারছে না। বলতে গেলে তাদের রাজনীতির বাইরেই থাকতে হচ্ছে।
নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি কোনো কোনো দল প্রায় অস্তিত্বহীন পড়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে রাজনৈতিকভাবেই দলগুলোর অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাদের অনেকে।