স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ জাল সনদে নীলফামারী জেলায় ২৪ জন শিক্ষক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের জাল সনদে চাকরি নেওয়া শিক্ষকদের তালিকায় এ জেলার ২৪ জনের নাম পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১৯ শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। আর বাকি ৫ জন ননএমপিওভুক্ত শিক্ষক। তারাও এমপিওভুক্তের জন্য আবেদন করেছে!
রবিবার(১৮ সেপ্টেম্বর) এক নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ (ডিআইএ) রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের জাল সনদে চাকরিরত শিক্ষকদের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বে যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে এই দুই অঞ্চলের ৩২৩ জন শিক্ষক রয়েছে। তাদের মধ্যে নীলফামারীর ২৪ শিক্ষকের নাম পাওয়া যায়।
ডিআইএর তথ্যমতে, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের ২৫ মে পর্যন্ত দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুদ্ধি অভিযানে ১ হাজার ১৫৬ জন শিক্ষকের শিক্ষাগত ও যোগ্যতার সনদ ভুয়া পেয়েছেন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ (ডিআইএ)। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জাল সনদধারী শিক্ষক রয়েছেন ৪৪৩ জন। এ জন্য ওই সব শিক্ষককে দেওয়া বেতন-ভাতা ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
ডিআইএ“র প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী নীলফামারী জেলার জাল সনদধারী চাকুরি করা ২৪ জন শিক্ষকরা হলেন নীলফামারী সদরের চাঁদের হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক রাদিফা বেগম, দুহুলি উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মোছা. ছাবিনা ইয়াছমিন ও মোছাঃ রওশন আক্তার।
জলঢাকা উপজেলার জলঢাকা দ্বি-মুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক মুকুল হোসেন, মীরগঞ্জ হাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক আইয়ুব আলী, বালাপাড়া উচ্চ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনাথ চন্দ্র রায় ও ক¤িপউটার শিক্ষক আনারুল হক। কিশোরীগঞ্জ উপজেলার চাঁদ খানা উচ্চবিদ্যালয়ের কম্পিপউটার শিক্ষক শিরিনা আক্তার, মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক মো. লতিফুজ্জামান, মনিকা রানী রায় ও ইংরেজি শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক।
ডিমলা উপজেলার সোনাখুলী চাপানী সৈকত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আশরাফ হোসেন, জটুয়াখাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষক সাইফুর রহমান, ছাতনাই কলোনি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মফিজুর রহমান, খড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক নাজিয়া আলম, তিস্তা কলেজের কম্পিউটার প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক।সৈয়দপুর উপজেলার সাতপাই উচ্চ বিদ্যালয়ের আজিজুল ইসলাম ও ধর্মশিক্ষক আব্দুল মতিন। তারা এমপিওভুক্ত শিক্ষক বলে জানা গেছে।
এছাড়া নীলফামারী সদরের ছমির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা প্রভাষক মোছা. তামান্না সুলতানা, ডোমার উপজেলার কেতকি বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষক মোছা. আকলিমা বেগম, বামুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মো. জহুরুল হক, সৈয়দপুর উপজেলার লক্ষ্মণপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের জীব বিজ্ঞানের প্রভাষক মোছা. মেরিনা মান্নান ও সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক মো. মজিবুর রহমান, ডিমলা উপজেলা জটুয়াখাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক আলমগীর রহমানের নাম নন এমপিওভুক্ত তালিকায় রয়েছে। তারাও এমপিওভুক্তর জন্য আবেদন করেছে।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (ডিআইএ) প্রফেসর অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আমাদের কাছে ১০ বছরের কতগুলো প্রতিষ্ঠান পরির্দশন এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার একটি হিসাব চেয়েছেন। আমরা উত্তরে কতগুলো প্রতিষ্ঠান পরির্দশন করেছি তা জানিয়েছি। ডিআইএর পক্ষ থেকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনে জাল সনদের বিষয় অনেক আছে। ওখানে বিশেষ করে এনটিআরসি সনদ, কম্পিউটার সনদ, গ্রন্থাগার সনদসহ এ রকম কিছু বিষয়ে ওই শিক্ষকদের সনদ ঠিক পাওয়া যায়নি।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ (ডিআইএ) প্রদত্ত জাল সনদে শিকদের চাকরি নেওয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনেছি। তবে এখনো কোনো অফিশিয়াল নির্দেশনা আসেনি। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। যদি ওপর থেকে নির্দেশনা আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।