ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাব এখনো কাটেনি। গভীর নিম্নচাপ আকারে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল অতিক্রম করা অশনির প্রভাবে সৃষ্ট বিরূপ আবহাওয়ার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃহস্পতিবারও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টি আরও দুইদিন থাকতে পারে। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে দেওয়া দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত তুলে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে অস্থির পরিস্থিতি অব্যাহত আছে। অশনির পর আরেকটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে বলে ইতোমধ্যে পূর্বাভাস এসেছে। চেক প্রজাতন্ত্রকেন্দ্রিক আবহাওয়া সংক্রান্ত ওয়েবসাইট উইন্ডিডটকমে দেখা যায়, আগামী ২০ মে নাগাদ একটি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
কম্পিউটার মডেলে প্রথমে বাংলাদেশের দিকে চলে আসবে বলে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবারের মডেলে দেখা যাচ্ছে, এটি মিয়ানমারের দিকে চলে যেতে পারে।
২১ মে নাগাদ ছাউংথা উপকূলের কাছাকাছি অবস্থানের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এত আগে এ ধরনের পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। কেননা, পালটা পরিস্থিতিতে অনেক সময়ে লঘুচাপ বা নিম্নচাপ সাগরেই বিলীন হয়ে যায়। এজন্য তারা আরও অপেক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে অশনির কারণে কেবল বাংলাদেশই নয়, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল প্রচুর বৃষ্টি পেয়েছে। বিশেষ করে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বৃষ্টির পানি বাংলাদেশে চলে আসছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পানি। এসব মিলে সিলেট অঞ্চল টইটম্বুর।
এ কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা আর সারিঘাটে সারিগোয়াইন নদী বিপদসীমা পার করতে পারে। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হতে পারে। এছাড়া কুশিয়ারা, ভোগাই-কংস, ধনু-বাউলাই, মনু ও খোয়াই নদীর পানিও দ্রুত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডক্লিউসি)।
বিএমডির আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, অশনি ইতোমধ্যে গভীর নিম্নচাপ ও নিম্নচাপ পর্যায় পার করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় এটি অন্ধ্র উপকূলে অবস্থান করছিল। এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।
বিএমডি ২৪ ঘণ্টার এক পূর্বাভাসে সব বিভাগের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এফএফডব্লিউসির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে সর্বোচ্চ ১৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় সিলেটের লালখানে। আর সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে জারিয়াজঞ্জাইলে ৫০ মিলিমিটার। অন্যদিকে সংস্থাটি ভারতের পূর্বাঞ্চলের ৬টি স্থানের বৃষ্টিপাতের তথ্যও প্রকাশ করেছে।
এতে দেখা যায়, চেরাপুঞ্জিতে ২৪ ঘণ্টায় ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সবচেয়ে কম রেকর্ড করা হয় দিব্রুগড়ে ৩৫ মিলিমিটার। সাধারণ এই এলাকার পানি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। ২৪ ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বা এর বেশি বৃষ্টি হলে স্থানীয় বন্যা আর ৩০০ মিলিমিটার হলে ১০ দিনব্যাপী বন্যার সৃষ্টি করে।