আর্কাইভ  রবিবার ● ২৪ আগস্ট ২০২৫ ● ৯ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ২৪ আগস্ট ২০২৫
জয়ের জটিল সমীকরণ

জয়ের জটিল সমীকরণ

হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ
সীমাহীন বর্বরতা
হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

হাসিনার পলায়ন উদযাপনের জনস্রোতে কেন এত গুলি, কেন এতো আক্রোশ

হাসিনার পলায়ন উদযাপনের জনস্রোতে কেন এত গুলি, কেন এতো আক্রোশ

ভোরে খালে পুঁতে রাখা মুনতাহার দেহ পুকুরে ফেলতে যান প্রতিবেশী নারী, অতঃপর...

রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, বিকাল ০৬:০৩

Advertisement Advertisement

 নিউজ পোর্টাল : শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন (৫) গত ৮ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে গত কয়েক দিন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা লক্ষ্য করা যায়। শিশু মুনতাহার মায়াময় নিষ্পাপ মুখ দেখে অনেকেই তাকে খুঁজে দিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। মেয়ে মুনতাহাকে ফিরে পেতে পাগলপ্রায় পরিবারের সদস্যরা নানাভাবে আকুতি জানাচ্ছিলেন।

এক পর্যায়ে অর্থ পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। অবশেষে মুনতাহার সন্ধান মিলল ঠিকই তবে প্রাণহীন নিহত অবস্থায়। মুনতাহা সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাটের সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।

 

আজ রবিবার (১০ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে কানাইঘাটে মুনহাদের বাড়ির পাশের পুকুরের পাড়ে মাটি চাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুনতাহার দাদা মো. ছালিক মিয়া। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিন নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
 

জানা যায়, মুনতাহা আক্তারকে অপহরণের দিন ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় হত্যা করা হয়। এরপর তাকে পার্শ্ববর্তী একটি খালে পুঁতে রাখা হয়।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা ও প্রতিবেশী মার্জিয়া আক্তারকে (২৫) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

 

সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. রফিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

মার্জিয়া আক্তার ছাড়াও গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মার্জিয়ার মা আরিফজান বেগম ও নানী কুতুবজান বেগম। আরিফজান বেগম পেশায় ভিক্ষুক।

মার্জিয়া স্থানীয় মাদরাসায় নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি মুনতাহাকে গৃহশিক্ষক হিসেবে কিছুদিন পড়িয়েছিলেন। মুনতাহা সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদল গ্রামের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।

 

পুলিশ ও মুনতাহার প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুনতাহাকে ৩ নভেম্বর কোনো একসময় অপহরণের পর সন্ধ্যার দিকে বস্তা দিয়ে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ বাড়ির পাশের একটি খালের কাদার মধ্যে পুঁতে রাখা হয়। গতকাল শনিবার রাতে সন্দেহভাজন হিসেবে মার্জিয়াকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। এ সময় ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে মার্জিয়ার নানি কুতুবজান বেগম ভোর রাত চারটার দিকে খাল থেকে মুনতাহার লাশ তুলে সেটি পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়রা বিষয়টি দেখে ফেলে এবং নানি কুতুবজান বেগমকে আটক করে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা আলিফজানের বাড়ি ভাঙচুর করে তাতে আগুন দেয়। পরে এসে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করে।

পুলিশ জানায়, লাশ উদ্ধারের সময় শিশু মুনতাহার শরীরে কাদায় লেপ্টে ছিল। গলায় রশি জাতীয় কিছু প্যাঁচানো ছিল।

কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে এক মহিলা মুনতাহার বাড়ির পাশের একটি খাল থেকে মরদেহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সম্ভবত পুকুরে ফেলে দেওয়ার জন্য এই মরদেহটি তোলা হচ্ছিল। তখন স্থানীয় লোকজন বিষয়টি দেখে ফেলে। আমরা আগে থেকে এলাকার কিছু মানুষকে বলে রেখেছিলাম পাহারা দেওয়ার জন্য। সে অনুযায়ী লোকজন পাহারায় ছিল। জড়িত থাকার সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে দীর্ঘ জিজ্ঞসাবাদের পর আজ বিকেলে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সিলেট জেলা পুলিশ প্রথম থেকেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বাচ্চা উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছে। আমাদের সব সোর্সকে কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। বাচ্চাটাকে আমরা জীবন্ত উদ্ধার করতে পারিনি।’

এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে একজনই প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তবে আরো জড়িত আছে। কিছু ক্লু আমরা পেয়েছি। যেগুলো তদন্তের স্বার্থে এখন বলছি না। খুব দ্রুত আমরা উদঘাটন করতে পারব এবং আপনাদের অবগত করতে পারব।শুধু প্রত্যক্ষভাবে নয় পরোক্ষভাবে যারা জড়িত তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব এবং সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে হয় সে চেষ্টা করব।’

এর আগে ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলা করতে গিয়েছিল মুনতাহা। কিন্তু বিকেল হলেও বাড়ি না ফেরায় খোঁজ নিতে গিয়ে মুনতাহার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। শিশুটি নিখোঁজের পর থেকে পরিবার দাবি করে আসছিল, পরিকল্পিতভাবে মুনতাহাকে অপহরণ করা হয়েছে। নিখোঁজের ঘটনায় কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছিল তারা। শিশুটিকে খুঁজে পেতে পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল পরিবার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও বাচ্চার সন্ধান চেয়ে পুরস্কার ঘোষণা করেন। তবে সবকিছুর শেষে আজ ভোরে শিশুটির লাশ পাওয়া গেল।

মন্তব্য করুন


Link copied