স্টাফ রির্পোটার,নীলফামারী॥ নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার পূর্বাংশ দিয়ে বয়ে গেছে চাড়ালকাটা নদী। এ নদী জেলা থেকে বিভক্ত করেছে সদর উপজেলার রামনগর, জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি এবং খুটামারা ইউনিয়ন। ফলে কখনো হাঁটুপানি আবার কখনো নৌকায় যাতায়াত করতে হতো তিন ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার বাসিন্দাকে। বার বার একটি সেতুর দাবি জানালেও দীর্ঘ বছরেও নির্মাণ হয়নি। তাই নিজেদের উদ্যোগে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীর ওপর একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করেছেন এলাকাবাসী।
দৃস্টিনন্দন ২৯০ ফিট দৈর্ঘ্য রঙিন কাঠের সাঁকো তৈরী করে তাঁক লাগিয়ে দিয়েছে তারা। প্রতিদিন বিকাল হলে বিভিন্নস্থান হতে মানুষজন সাঁকোটি একনজর দেখতে ছুটে আসছে।
জানা যায়, চারালকাটা নদীর ঘুঘুমারী নাওঘাটে ১৯৭১ সালে একটি বাঁশের সাঁকো ছিল। বন্যায় সাঁকোটি ভেঙে গেলে স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও সেখানে নির্মাণ হয়নি কোন সাঁকো। এতে রামনগর, শিমুলবাড়ি ও খুটামারা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে জেলা সদরে যেতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হতো স্থানীয়দের। ঘুরে না গেলে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হতো নদী। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, সরকারি অফিস আদালতে যাতায়াতে পোহাতে হতো চরম দুর্ভোগ। কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ছিল না কোনো ব্যবস্থা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নীলফামারী-৩ আসনের সংসদ সদস্যরা ঘুঘুমারী নাওঘাটে ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেননি কেউ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সেখানে একাধিকবার ব্রিজ নির্মাণের জন্য মাপ নিলেও ফল আসেনি কোনো। বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর রানা মোহাম্মদ সোহেল (অব.) বাঁশের সাঁকো নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিলেও তা ছিল খুব সামান্য।
স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ঘুঘুমারী সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার উদ্যোগ নিয়ে এলাকাবাসীর ৭ লাখ টাকার চাঁদায় রড সিমেন্টের পিলার ও কাঠ দিয়ে বানানো হয় দৃষ্টি নন্দন সেতু। ৫৩টি খুঁটির ওপর দাঁড়ানো লাল সাদা সবুজ রঙ আকর্ষণীয় করে তুলেছে নাওঘাট এলাকার সেতুটিকে। কাঠের সেতুটি দেখতে সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। ছবি তোলা ও আনন্দের উচ্ছ্বাস বইছে।
ঘুঘুমারী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সেতু না থাকায় বিদ্যালয়ে আসতে শিক্ষার্থীদের নৌকায় করে বা নদীর মধ্যে হেটে আসতে হতো। এখন কাঠের এই সেতুটি হওয়ায় তাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। বিদ্যালয়ে আসতেও তাদের সময় কম লাগছে।
অপর শিক্ষক আব্দুল কাইউম বলেন, এখানে সেতু না থাকায় আমরা নদী পাড়ে খুব সমস্যায় পড়তাম, ব্যবসা বাণিজ্য করতে জেলা শহরে যেতে পারতাম না। পড়াশোনার জন্য যেতে হতো ৩০ কিলোমিটার পথ ঘুরে। কাঠের সেতুটা হওয়ার কারণে আমরা সহজে পার হতে পারছি। তবে একটা স্থায়ী সেতুর দাবি জানাচ্ছি।
ঘুঘুমারী সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সদস্য মোমিনুর রশিদ বলেন, ৭১ সালে এখানে একটা কাঠের সেতু ছিল। ওটা ভেঙে যাওয়ার পর আর হয়নি। এখন এলাকাবাসী টাকা দিয়ে কাঠের সেতু বানাইছে। এখন আমাদের দুই এলাকার মানুষ যাতায়াত করতে পারছি। আমরা অনেক খুশি। তিনি আরো বলেন, দুই গ্রামবাসীদের ডেকে আলোচনার মাধ্যমে সকলে চাঁদা তুলে এই কাঠের তৈরী সেতুটি তৈরী করা হয়। সরকারি ভাবে যদি দ্রুত স্থানীয় সেতু নির্মান করা হয় তাহলে স্থানীয়দের ভোগান্তি কম হবে।