বিশেষ প্রতিনিধি॥ নতুন সরকারের রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম আজ শনিবার(১৭ ফেব্রুয়ারি) দেশের বৃহত্তর নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারাখানা পরিদর্শনে আসছেন। অথচ রেলপথ মন্ত্রীর ক্ষণিকের আগমন উপলক্ষে সেই ভাঙাচোরা রাস্তা জোড়াতালি দিয়ে সংস্কারে দিন রাত লেগে আছে পৌরসভার কর্মচারীরা। যদিও অত্যন্ত নিম্নমানের ও পরিত্যক্ত ইটের খোয়া আর বালু দিয়ে কোন রকমে ঢাকা হচ্ছে বড় বড় গর্তগুলো। লোক দেখানো এমন কাজ দেখে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সৈয়দপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ১০টি প্রধান সড়কসহ পাড়া-মহল¬ার ভেতর আরও ৮০টির বেশি সড়ক রয়েছে। এসব সড়কের দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা ১৬০ ও কাঁচা ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার পাকা সড়কই বেহাল।
এদিকে রেলপথমন্ত্রীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা পরিদর্শনে আসা উপলক্ষে শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক রোডের স্মৃতি অ¤¬ান চত্বর থেকে কারখানা গেট হয়ে মিস্ত্রিপাড়া মোড় পর্যন্ত সৃষ্টি হওয়া গর্তগুলো ভরাট করা হচ্ছে। সৈয়দপুর পৌরবাসীদের অভিযোগ, সড়কগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। অথচ মন্ত্রী যে সড়ক দিয়ে যাবেন, সেই সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। নাগরিকরা নয়- মন্ত্রী, এমপি দলীয় নেতারাই সৈয়দপুর পৌর মেয়রের কাছে অগ্রগণ্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই সড়কের সাহেবপাড়ায় গির্জার সামনে সৃষ্টি হওয়া গর্তে পৌরসভার ট্রাকে করে ইটের পুরোনো খোয়া ফেলছিলেন কর্মচারীরা। এর আগের দিন গত বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, সড়কটির বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি সেচ দিতে। কোথাও কোথাও ফেলা হচ্ছিল পুরোনো খোয়া। পরে সেগুলোর ওপর বালু ফেলে রোলার দিয়ে সমান করা হয়।
স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করে বলেন, গত ৩ বছরে সৈয়দপুর পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী শহরের কোনো উন্নয়নের কাজ করেননি। ব্যক্তিগত সুবিধা নেয়ার জন্য মেয়র লোক দেখানো রাস্তা সংস্কার করছেন। সাবেক রেলপথ মন্ত্রী এ্যাড. নুরুল ইসলাম সুজন এমপিও সৈয়দপুর শহর দিয়ে কখনও আসেননি। তিনি গাড়িতে করে সৈয়দপুর রেলকারখানা পরিদর্শনে আসলে সৈয়দপুর-দিনাজপুর বাইপাস সড়ক দিয়ে আসতেন।
শহরের রিক্সাচালক মুরাদ ইসলাম বলেন, ২০২১ সালে মেয়র হওয়ার পর থেকে সৈয়দপুর পৌরসভার কোনো উন্নয়ন করেননি তিনি। সরকারের বরাদ্দের টাকা অর্ধেক নিজের রেখে আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে নি¤œমানের কাজ করেছেন। বর্ষাকার আসলেই শহর পানিবদ্ধ হয়ে যায়। চলাচলে অনেক কষ্ট হয়। এই কষ্টের সাথে পরিবারের কথা চিন্তা করে ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। অথচ মন্ত্রী আসার খবরে রেল কারখানার ডিএসের এক ঠেলায় চলছে গর্ত ভরাটের কাজ। মেয়রের এধরনের খামখেয়ালি কাজের দরকার নাই। স্থায়ী মেরামত চাই।
ইজিবাইক চালক মেরাজ উদ্দিন (৩২) বলেন, আমরা ভাঙা চোরা রাস্তায় কঠিন কষ্ট করে যানবাহন চালাচ্ছি। বছরের পর বছর এই দুর্ভোগ পোহালেও কেউ ফিরে তাকায়নি। কিন্তু ২ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ীর লাইসেন্স নিতে হয়েছে। না নিলে আটক করে জরিমানা আদায় করেছে। বিনিময়ে সড়কে সামান্য সুবিধা পাইনি। অথচ আজ মন্ত্রী আসবে দেখে মেয়রের মহাব্বত উছলে পড়ছে। তাইতো নামকাওয়াস্তে গর্ত পূরণ করতেছে।
সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী রেলওয়ে কারখানা পরিদর্শনে আসছেন। মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সড়কটি অস্থায়ী মেরামত করা হচ্ছে। তাই আমরা শহরের স্মৃতি অম্লান চত্বর থেকে কারখানা গেট হয়ে মিস্ত্রিপাড়া মোড় পর্যন্ত রাস্তার গর্তগুলো ভরাট করে সমান করছি। এতে কত টাকা বাজেট করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি মেয়রের সাথে কথা বলতে বলেন।
এবিষয়ে পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রেলওয়ের ডিএস'র অনুরোধে চলাচল যোগ্য করতে সামান্য মেরামত করা হচ্ছে। এতে কোন বরাদ্দ নেই। পৌর সভার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এটা করা হচ্ছে।
তবে একটি সূত্র মতে, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএসডাব্লিউ) সাদেকুর রহমান পৌর মেয়র কে স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন যে, মন্ত্রী আসার আগে যদি রাস্তার এবড়োখেবড়ো অবস্থা ঠিক করা না হয়, তাহলে পৌর কর দেয়া বন্ধ করে দেয়া হবে। একারণে বাধ্য হয়ে তড়িঘড়ি করে এই কাজ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
এবিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএসডাব্লিউ) সাদেকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কারের যেনো পৌরসভাকে বলা হয়েছে। কোনো সংস্কার করেনি। তাই নতুন মন্ত্রীর আগমনে আমরা রাস্তা দ্রুত মেরামতের জন্য মেয়রকে বলি।