আর্কাইভ  বুধবার ● ২১ মে ২০২৫ ● ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ২১ মে ২০২৫

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত শিক্ষকরা বহাল তবিয়তে

মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, রাত ১২:০০

Advertisement

বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে নানান টালবাহানার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি গঠনের অর্ধ মাস পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি।

অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষকরা করছেন অফিস, নিচ্ছেন ক্লাস-পরীক্ষা। এতে ক্ষুব্ধ ওইসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. তানজিউল ইসলাম জীবন ও ওই  বিভাগের এক ছাত্রীর কণ্ঠ সদৃশ কথোপকথনের ৩ টি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। এছাড়া গত ২৪ এপ্রিল একই বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার বরাবর মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করেন। তাতে শিক্ষক জীবনের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতন, ভয়ভীতি দেখানো, যৌন হয়রানি ও মার্ক টেম্পারিং করে ফলাফল খারাপ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনেন তিনি।

অন্যদিকে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তার এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। গত ১৯ এপ্রিল  রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে শিক্ষক রশীদুল ইসলাম এবং ওই ছাত্রীর ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনের স্ক্রিনশটগুলো প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র সিংহ এবং অধ্যাপক ড.মো.রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ তুলে  উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলীর কাছে অভিযোগপত্র জমা দেন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের (১২ ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগের পর মার্ক টেম্পারিংয়ে বিষয়ে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। নির্দিষ্ট সময়ে মার্ক টেম্পারিংয়ের প্রতিবেদন জমা দিলেও যৌন হয়রানির কোনো আলাদা দুইটি তদন্ত কমিটি হলেও তার প্রতিবেদন জমা পড়েনি।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. তানজিউল ইসলাম জীবন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদ থেকে পদত্যাগ করলেও বহাল তবিয়তে তিনি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে আছে। ক্লাস পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া তিনি সব অ্যাকাডেমিক কাজ করছেন। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ওই বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও গত ১২ মে যৌন হয়রানি কোনো বিচার না পাওয়ায় পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন। তখন পরিস্থিতি সামাল দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর।  শিক্ষার্থীদের দাবি পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড.রশিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনিত যৌন হয়রানি কোনো বিচার না করে তাকে বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। তিনি বিভাগে আসছেন, ক্লাস পরীক্ষা নিচ্ছেন। এতে আশঙ্কা গ্রস্ত ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী খোকন ইসলাম বলেন, যথেষ্ট প্রমাণ থাকা স্বত্বেও প্রশাসন শিক্ষক রশিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে আমরা হতাশ। প্রশাসন বলছে তাদেরকে মৌখিকভাবে সব কিছু থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু লিখিত কিছুই আমরা পাইনি। এতে আমরা শঙ্কিত।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, যৌন হয়রানি ও মার্ক টেম্পারিংয়ের মতো অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে ক্লাস করা আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমরা উনাকে আমাদের ক্লাসে দেখতে চাই না। এছাড়া উনি নিয়মিত অফিস করছেন  বিভাগের সব কাজে যুক্ত। এতে আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা চাই তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত এর বিচার করা হোক। যাতে বিভাগে কখনো এমন ঘটনা না ঘটে।

এই ব্যাপারে ড. মো. তানজিউল ইসলাম জীবনের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড.মোছাঃ সিফাত রুমানা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

ড.রশিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, প্রতিবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে। জমা দিলে সবাই দেখতে পারবে।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, আমি এখনো রিপোর্ট পাইনি। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কীভাবে সিদ্ধান্ত নিব।

মন্তব্য করুন


Link copied