আর্কাইভ  শনিবার ● ২৪ মে ২০২৫ ● ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ২৪ মে ২০২৫

অস্থিরতা কাটাতেই পদত্যাগের কথা

শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, সকাল ০৯:৫৫

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: চলমান অস্থির পরিবেশ অনুকূলে নিয়ে আসা এবং তার প্রতি সবার আনুগত্য অটুট রাখতেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা চান, আগের মতোই তার প্রতি সবার আনুগত্য থাকুক। ৫ আগস্টের পরের পরিস্থিতিতে যেভাবে আনুগত্যের প্রকাশ ঘটেছে, দ্বিতীয়বারের মতো সেটি প্রকাশ্যে আসুক দেখতে চান তিনি। এ কারণেই পদত্যাগের কথা উচ্চারণ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মনে করেন, মতানৈক্যের রাজনীতি ভবিষ্যতে সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে। সরকারঘনিষ্ঠ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র এ কথা জানিয়েছে। সূত্র এ কথাও জানিয়েছে, পদত্যাগের কথা তিনি সিরিয়াসলি বলেননি।

সূত্রগুলো জানায়, জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে হঠাৎ করে দেশে সৃষ্টি হওয়া অস্থিরতায় বেশ ক্ষুব্ধ প্রধান উপদেষ্টা। বিএনপি, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন তাকে হতাশ করেছে। পদত্যাগের কথা বলে সবাইকে সতর্ক করেন তিনি। সূত্র জানায়, তার মতে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়াই আছে। সুতরাং নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ও আলোচনা তার কাছে অপ্রাসঙ্গিক।

দেশে শান্ত পরিবেশ বজায় থাকুক, চান প্রধান উপদেষ্টা। দাবিদাওয়া ও আন্দোলনের নামে ঢাকাকে অস্থির করে তোলা হোক, তা দেখতে চান না তিনি। তাই পদত্যাগের মতো কঠিন সিদ্ধান্তের কথা বলে সবাইকে সতর্ক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সিরিয়াসলি পদত্যাগ করবেন তিনি এ কথা কিন্তু জানায়নি সরকারি সূত্রগুলো।

আন্দোলনের কারণে ঢাকায় প্রায় প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিনিয়ত সমালোচিত হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এসব বিষয় আমলে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, যদি ঠিকভাবে কাজ করতে না পারেন, তাহলে আলংকারিক ব্যক্তি হয়ে থেকে কী লাভ? অনির্ধারিত আলোচনায় সহকর্মীদের এ কথাও বলেছেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা পর্বে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজের ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘কাজ করতে না পারলে পদত্যাগ করে চলে যাওয়াই ভালো।’

অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র বলেছে, সেনাবাহিনীর দরবার অনুষ্ঠানে সেনাসদস্যদের অবস্থান ও সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের গণমাধ্যমে আসা বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টা ভালোভাবে নেননি। দরবারে সেনাসদস্যদের অবস্থান তার সরকারকে আরও সমালোচনার মুখে ফেলেছে। এ সূত্রের দাবি, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ব্যাপারটি সেনাবাহিনীকেও এক ধরনের চাপের মধ্যে ফেলার ইঙ্গিত বহন করে।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ প্রসঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার এ ধরনের বক্তব্য বিএনপি শুনতে চায় না। তবে আবেগের বশে কেউ থাকতে না চাইলে নিশ্চয়ই বিকল্প বেছে নেবে দেশের জনগণ।

কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া ও মানবিক করিডরবিষয়ক আলোচনা দমিয়ে রাখতে সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যু সামনে আনছে। এটিও সে রকম একটা ব্যাপার।

কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ড. ইউনূস পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে ভুল করেছেন। পদত্যাগ করা হবে তার ব্যর্থতা, তার জন্য আত্মঘাতী। কোনো ব্যক্তি বা দল নয়, তার উচিত জনগণের ঐতিহাসিক অভিপ্রায়কে সম্মান করা, কোনো দল বা গোষ্ঠীর চাপে বিভ্রান্ত না হয়ে জনগণের ওপর আস্থা রাখা। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নয়, রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ড. ইউনূসকে নির্বাচিত করেছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। এটি ছাড়া জাতি পথ হারাবে। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা দরকার। এ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিকল্প নেই।’

গতকাল বিকেলে বিজয়নগরে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান বর্তমান জটিল পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের পদত্যাগ নয় বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষকে সমঝোতামূলক সমাধানে পৌঁছার আহ্বান জানিয়েছেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে নিজের আগের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড়। দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য। অভ্যুত্থানের সব শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাই। আশা করি, ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে। দেশপ্রেমিক জনগণের সামনে দীর্ঘ পরীক্ষা। এ পরীক্ষা উতরে যেতেই হবে।

ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, BAL, North & Delhi জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছে তা আপনাদের খাবে। You are not one of them, just co-opted temporarily. ‘আমাদের না আছে মরার ভয়, না আছে হারাবার কিছু। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধহয় এ দেশের ভাগ্য।’

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় লড়াই করে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। জুলাইয়ের বেঁচে ফেরা যোদ্ধারা এ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন হতে দেবে না। গণতান্ত্রিক এ যাত্রাকে ব্যাহত হতে দেবে না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গতকাল সারাক্ষণ উত্তেজনা বিরাজ করছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি পোস্টে কোরআনের সুরা আস-সফের ১৩ নম্বর আয়াতের একটি অংশ তুলে ধরেন তিনি ‘নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন ক্বারীব’ যার অর্থ, ‘আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন শুনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ সাক্ষাৎ হয়। খবর: দেশ রূপান্তর

মন্তব্য করুন


Link copied