নিউজ ডেস্ক: আবার সেই গল। এক যুগ পর আবার ভারত মহাসাগরের নীল জলরাশির পাশের গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে মুশফিকুর রহিমের সাফল্যের গল্প। ২০১৩ সালের মার্চে এই মাঠেই ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন তখনকার ২৫ বছরের যুবা মুশফিক। ১২ বছর পর সেই মাঠে আবার ১৬৩ রানের ইনিংস।
২০১৩ সালের মার্চে মুশফিকের ২০০ রানের ইনিংসের বড় অংশের সঙ্গী ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এবার মুশফিকের যাত্রাপথের সঙ্গী নাজমুল হোসেন শান্ত।
কেমন ছিল এক যুগ আগে মুশফিকের সেই ডাবল সেঞ্চুরি? এবারের সংগ্রামী ইনিংসটির সাথে ওই ইনিংসের পার্থক্য কোথায়? কোনটি বেশি আকর্ষণীয়? ১২ বছর আগের গল টেস্টের নানা স্মৃতি নিয়ে আজ ১৮ জুন বিকেলে ইংল্যান্ড থেকে মুঠোফোনে জাগো নিউজের সাথে আলাপে নানা কথা বলেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
বলে রাখা ভালো, ইংল্যান্ডের সাউদার্ন প্রিমিয়ার লিগে পোস্টমাউন্ট টাইগার্সের হয়ে খেলতে আশরাফুল এখন যুক্তরাজ্যে। এটা মূলত উইকএন্ড ক্রিকেট লিগ। এই লিগে ৫০ ও ১২০ ওভারের দুটি টুর্নামেন্ট হয়। ৫০ ওভারে ৯টি আর ১২০ ওভারে সমান সংখ্যক ম্যাচ।
আজ বুধবার ও গতকাল মঙ্গলবার তার নিজের দলের খেলা ছিল না, তাই প্রিয় জাতীয় দলের খেলা দেখতে পেরেছেন। মুশফিকের ব্যাটিং, তার পরিশ্রম, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, সাধনা আর আত্মনিবেদনের বরাবরই অকুণ্ঠ প্রশংসাকারী আশরাফুল।
এবারের ইনিংসটির সাথে আগেরবারের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার একটা কথা বলেছেন, ‘মুশফিকের টেকনিক শুরু থেকেই অসাধারণ। তার বেসিকও খুব স্ট্রং। গলের সেই টেস্টে ডাবল হান্ড্রেড করার পথে সত্যিই অসাধারণ খেলেছিল মুশফিক। আমার সেভাবে তাকে গাইড করতে হয়নি। আমি সিনিয়র পার্টনার হিসেবে হয়তো এটা-সেটা বলছিলাম। তবে মুশফিক ইনিংস সাজিয়েছিল নিজের মতো করে। তার পরিপাটি টেকনিক, গভীর মনোযোগ ও মনোসংযোগ দিয়ে। নিজের ইনিংসটা কিভাবে সাজাতে হবে, কখন রক্ষণাত্মক আর কখন খানিকটা আগ্রাসী হতে হবে, মুশফিক ওই বয়সেই তা খুব ভালো জানতো। তাই তেমন কিছু বলে দিতে হয়নি।’
আজকের মুশফিকের সাথে ১২ বছর আগের মুশফিকের তুলনা করতে গিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘টেকনিক, টেম্পারামেন্ট আর বেসিক তখনও দারুণ ছিল, এখনও তাই আছে। তবে যেহেতু দীর্ঘ সময় খেলেছে, তাই অভিজ্ঞতা ও পরিপক্কতা বেড়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে খেলার ক্ষমতাও অনেক বেড়েছে।’
মুশফিককে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের আদর্শ ব্যাটার আখ্যা দিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘একজন ক্রিকেটার, একজন ব্যাটার, একজন উইকেটকিপার মুশফিক। অনেকদিন ক্যাপ্টেনসিও করেছে। দলে তার নানা রূপ ও পরিচয়। কিন্তু ব্যক্তি ও ক্রিকেটার মুশফিকের রূপ এক ও অভিন্ন। নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলার অনুপম মূর্তি যেন মুশফিক। সেই ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডে অভিষেকের সময় যেমন দেখেছি, এখনো তেমনই আছে। রাত ১০টায় বিছানায় চলে যাওয়া, ফজরে উঠে নামাজ পড়ে দিন শুরু, বাকি সময় নিজের মতো করে অনুশীলনে ব্যস্ত হয়ে পড়া।’
‘আমার মনে হয়, আমাদের দেশে আর কোনো ক্রিকেটার ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের পুরো সময় এমন নিয়ম মেনে ও সুশৃঙ্খল জীবন নির্বাহ করেনি। এর বাইরে মুশফিক কঠোর পরিশ্রমী। আমাদের ক্যারিয়ারের শুরুতে যেমন ছিলেন পাইলট (খালেদ মাসুদ) ভাই, রফিক (মোহাম্মদ রফিক) ভাই; মুশফিকও শুরু থেকেই পরিশ্রমী। বেশি সময় ধরে অনুশীলন করা তার সবসময়ের অভ্যাস।’
ওই ডাবল সেঞ্চুরির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘এবারের দৃশ্যপটে আর ১২ বছর আগের ম্যাচের চালচিত্র এক ছিল না। সেবার আমি আর মুশফিক যখন জুটি গড়তে শুরু করি, তার আগেই আমার আর মুমিনুল হকের একটা ১০০+ রানের (১০৫) পার্টনারশিপ ছিল। আমরা তখন মোটামুটি একটা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। অভিষেকে হাফসেঞ্চুরি (৫৫) করেছিল মুমিনুল। মুশফিক যখন উইকেটে আসে, আমার রান তখন ৮০-এর ঘরে (৮৫)। আর আমি যখন রঙ্গনা হেরাথের বলে ১৯০ রানে আউট হই, তখন মুশফিকের রান দেড়শো পেরিয়ে (১৫৭) গেছে।‘
‘আমরা তৃতীয় দিন শেষে যথাক্রমে ১৮৯ আর ১৫৮ রানে অপরাজিত ছিলাম। আশা ও ইচ্ছে ছিল দুজনই ডাবল সেঞ্চুরি করবো। আমারটা হয়নি। লেফট আর্ম স্পিনার রঙ্গনা হেরাথকে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে মাঝ ব্যাটে করতে পারিনি। আউট হয়ে যাই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। এক বুক হতাশা নিয়ে ফিরলাম সাজঘরে। মুশফিক কিন্তু ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে ভুল করেনি। ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য ধরে বল দেখে খেলে ঠিক কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরিটাও অনেক ভালো স্মৃতি হয়ে আছে।’