নিউজ ডেস্ক: মেক্সিকো হয়ে দক্ষিণের সীমানা অতিক্রমের পরই যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসাইলাম (রাজনৈতিক আশ্রয় অথবা মানবিক) প্রার্থনার বহুল পরিচিত একটি ব্যবস্থাকে নিষিদ্ধ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন-সম্পর্কিত আরেকটি বিশেষ আদেশকে থামিয়ে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট জজ র্যান্ডোল্ফ মোস।
২ জুলাই প্রদত্ত ১২৮ পাতার এক রায়ে বিচারপতি উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট অথবা সংবিধান প্রেসিডেন্টকে এমন ক্ষমতা দেয়নি যে, তিনি অ্যাসাইলাম প্রার্থনাকে নিষিদ্ধ করার আদেশ দিতে পারেন।
এই মামলাটি দায়ের করেছিল আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন।
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদের জন্যে ক্ষমতা গ্রহণের পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসন-বিরোধী অনেক নির্বাহী আদেশের সাথে এসাইলাম নিষিদ্ধ করার এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। ট্রাম্প উল্লেখ করেছিলেন যে, মেক্সিকো হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার বিদেশি বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেই এসাইলাম প্রার্থনার মধ্যদিয়ে অবাধে বসবাসের সুযোগ লাভ করছিলেন। সে সংখ্যা বাইডেনের চার বছরে ২২ লাখে দাঁড়ায় বলে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনদের সুযোগ-সুবিধায় ভাগ বসাচ্ছেন। অনেকে অপকর্মে লিপ্ত হয়ে সামাজিক শান্তির হুমকি হয়ে উঠেছেন। এছাড়া, এমন বিদেশীদের কারণে বেশ কটি স্টেটের অর্থ সংকটও তৈরী হয়েছে। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের নির্বাচনী অঙ্গিকারের অন্যতম ছিল অবৈধ অভিবাসী তাড়ানো এবং সেই কাজটি তিনি অক্ষরে অক্ষরে সম্পাদনে পথে হাঁটছেন।
বিচারপতির এই রায়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে ১৪ দিনের মধ্যে আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সেন্ট্রাল আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের বহু মানুষ মিছিল করে দক্ষিণের সীমানা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনীভাবে প্রবেশের সময় সীমান্ত রক্ষী কর্তক গ্রেফতারের পরই এসাইলাম প্রার্থনার সুযোগ পেতেন। এটি অনলাইনে সাবমিটের পরই সংশ্লিষ্টরা ‘প্যারল’-এ মুক্তি পান এবং হোটেল মোটেলে অবস্থান করতে থাকেন। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে সিটি ও স্টেট প্রশাসন। এমন ধকল সবচেয়ে বেশী পোহাতে হয় টেক্সাস, আরিজোনা এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটকে। এক পর্যায়ের টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্ণর বিরাট এই জনগোষ্ঠির চাপ সইতে না পেরে ভাড়া করা বাসে বহু মানুষকে নিউইয়র্ক, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, বস্টন-সহ বিভিন্ন সিটিতে পাঠান। এ অবস্থায় সারা আমেরিকায় সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। যার জের পড়ে গত নির্বাচনে ডেমক্র্যাটদের ভোট ব্যাংকে।
উপরোক্ত রায়ে জজ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইন অসহায় মানুষদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাবার অধিকার সংরক্ষণ করেছে। এটি বিশেষ কোন ঘোষণায় রহিতের ক্ষমতা নেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানও তা দেয়নি।
উল্লেখ্য, রায় প্রদানকারী এই বিচারক নিযুক্ত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে। এই রায়ের ফলে কিছুসংখ্যক বাংলাদেশিও সুবিধা পাবেন অ্যাসাইলাম প্রার্থনায়। কারণ, দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ ঘুরে তারাও মেক্সিকো-তে অপেক্ষা করছেন যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেই অ্যাসাইলাম প্রার্থনার জন্যে। এ রায়ে যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন কোর্টে ঝুলে থাকা এসাইলামের মামলাগুলো কীভাবে প্রভাবিত হবে-তা অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।