আর্কাইভ  শনিবার ● ৫ জুলাই ২০২৫ ● ২১ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ৫ জুলাই ২০২৫

বিএনপির বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরির লক্ষ্যে ইসলামি দলগুলো

শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫, বিকাল ০৫:৫৭

Ad

নিউজ ডেস্ক:  আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির বিপরীতে ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে একটা বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বাচনে সব আসনে একক প্রার্থী দেওয়া এবং ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের পাশাপাশি আরও কিছু দল সক্রিয় রয়েছে।

দলগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জোট গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। ইতোমধ্যে ইসলামপন্থী কওমি ঘরানার পাঁচটি দলের মধ্যে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠিত হয়েছে, যারা সম্ভাব্য সমঝোতার কাঠামো নির্ধারণে কাজ করছে।

এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, মানুষ এখন একটি বিকল্প শক্তিকে সামনে আনতে চায়। সে জন্য একটি সম্মিলিত জোটের চিন্তা চলছে। আমরা কারো বিপক্ষে না বরং নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভালো ফলের চেষ্টা করব। সর্বোচ্চ কৌশল নিয়ে এগোবো।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না-এমন ধারণা থেকে ইসলামপন্থী ও মধ্যপন্থী দলগুলো বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করছে।

এই দলগুলো সংবিধান সংস্কার, নির্বাচনী পদ্ধতির পরিবর্তন, সরকারপ্রধানের একক নিয়োগক্ষমতা হ্রাসসহ নানা বিষয়ে প্রায় অভিন্ন মত পোষণ করে। 

জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি ও খেলাফত মজলিসসহ অনেক দল সংসদের উচ্চকক্ষে এবং নিম্নকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির পক্ষে মত দিচ্ছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি বদলের বিষয়েও তাদের ঐকমত্য রয়েছে।

বিএনপি যদিও সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছে, তবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির জটিলতা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এখন সম্ভব নয়-এমন মত দিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে অবস্থানগত পার্থক্য তৈরি করেছে। এ ব্যবধানই ইসলামপন্থীদের মধ্যে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার জায়গা করে দিচ্ছে।

ইতোমধ্যে ইসলামী আন্দোলন ‘সংস্কার চাই’ দাবিতে এক মহাসমাবেশ করে, যেখানে জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু বিএনপির কেউ ছিলেন না। এতে বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে ইসলামপন্থী দলগুলো বিএনপির বিরুদ্ধে একটি বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরির দিকে এগোচ্ছে।

চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করীমের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন গত এপ্রিলে ইসলামি দলগুলোকে এক মঞ্চে আনার চেষ্টা শুরু করে। তখন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিস-এই চারটি নিবন্ধিত দল তার সঙ্গে সমঝোতায় আসে। এরপর জামায়াতের সঙ্গেও কয়েকবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন হবে জামায়াতসহ ইসলামপন্থীদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। তাই একটি নীতিগত সমঝোতার ভিত্তিতে আলোচনা চলছে। এখনো আনুষ্ঠানিক জোট হয়নি। নির্বাচনী তফসিল, প্রার্থী বাছাই ও মাঠপর্যায়ের অবস্থান বিশ্লেষণ করে জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। এবারের নির্বাচন হবে আলেম-উলামা পীর মাশায়েখসহ দেশ প্রেমিক জনতার উপর জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার নির্বাচন। 

আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীমও। তিনি বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে প্রতিটি আসনে ইসলামপন্থীদের একক প্রার্থী নিশ্চিত করা হবে। ইসলামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব আসনে প্রার্থী দেবে।’
 
এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেকোনো মূল্যে ইসলামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’

মন্তব্য করুন


Link copied