নিউজ ডেস্ক: অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোঃ আসাদুজ্জামান বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত সংগঠনেরও বিচারের এখতিয়ার রয়েছে। আওয়ামী লীগ একটি নিষিদ্ধ সত্ত্বার নাম। এ নিষিদ্ধ সত্ত্বার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যদি কেউ ভূমিকা পালন করে তাহলে তাকেও অপরাধী হিসেবে আইনের আওতায় আনা হবে। গত ফ্যাসিস্ট আমলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ যারা তথাকথিত সুশীল সমাজের নামে প্রতিনিধিত্ব করেছিল তাদের অনেকেই স্বৈরাচারের পদলেহন করেছে। এরা সরকারের সাথে একাকার হয়ে বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে।
শনিবার (৫ জুলাই) রাজধানীর এফডিসিতে জুলাই আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়নে করণীয় নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ছায়া সংসদে অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোঃ আসাদুজ্জামান এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আরো বলেন, জাতীয় ঐক্যমত গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে যে মত পার্থক্য রয়েছে তা মতবিরোধ নয়, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। তবে, ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে সবদলই ঐক্যবদ্ধ। মব সন্ত্রাস বিগত ১৭ বছরে স্বজন হারানোর বেদনা এবং নানা অনিয়ম ও অবিচারের বিরুদ্ধে এক ধরণের ক্ষোভ। তবে, কোনভাবেই মব সন্ত্রাস গ্রহণযোগ্য নয়। এটি জুলাই আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী। যে প্রক্রিয়ায় সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে মব সন্ত্রাস করা হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে আমাদের অনেক অর্জন ব্যাহত হবে। তবে, অন্যায়কারীদের বিচারের দাবি তুলতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না। এ আন্দোলনে প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডই পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি ছাড়া হয়নি। গত ১৫ বছরে আওয়ামী সরকার যেভাবে গুম-খুন, হত্যা, টর্চারসেল, আয়নাঘর তৈরি মাধ্যমে যে নির্যাতন করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। শেখ হাসিনা ছিলেন অত্যাচারী, নির্দয় ও কুৎসিত খুনী। স্বৈরাচারের অ্যাম্বাসাডার, ফ্যাসিস্টের গডমাদার। সারা বিশ্বের ফ্যাসিস্ট রেজিমের মুখপাত্র শেখ হাসিনা। এই উপমহাদেশের ৭০০ বছরের ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি জনরোষে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়েছেন। তিনি তার অন্যায়-অত্যাচার, দুনীর্তি-দুঃশাসনের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন জঘন্য অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন।
তিনি আরো বলেন, জনরোষে শেখ হাসিনা ও তার লেসপেন্সাররা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে দণ্ডিত হলে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বহু নেতাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাবেন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের পর জুলাই আমাদের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী দলিল, আমাদের ঐক্যের বন্ধন। জুলাই আমাদের অহংকার। তাই জুলাইয়ের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। অন্তর্ভূক্তিমূলক মানবিক রাষ্ট্র গঠনে জুলাইয়ের চেতনা বাংলাদেশের মানচিত্রে অংকিত হয়ে থাকবে। জুলাইয়ের চেতনা বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। প্রত্যেকটি দলেরই আকাঙ্ক্ষা স্বৈরাচারমুক্ত দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা। কিন্তু, কয়েকটি বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে ঐক্যমতের অভাব সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। আমরা আশা করবো, আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা ব্যতীত সকল রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। যাতে দেশে আর কোন ফ্যাসিস্টের আবির্ভাব না ঘটে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘জুলাই আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়নে সরকার অপেক্ষা নাগরিক সমাজের ভূমিকা বেশী’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকগণ বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, উপসচিব রোকেয়া পারভীন জুই, উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক হাসান জাবেদ, সংবাদিক আহমেদ সরওয়ার। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।