আফিয়া ইবনাত লিথি: আগামী অক্টোবর মাসে ১৮ বছরে পা দিচ্ছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। প্রায় দুই দশক পার হলেও এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী আজও নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কেউ স্নাতকজীবন শেষ করে ফেলেছেন, কেউ মাঝপথে—তবুও ‘হলজীবন’ শুধুই থেকে যাচ্ছে স্মরণীয়, নয় অভিজ্ঞতার অংশ।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদের ২২টি বিভাগে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। তাদের জন্য আবাসিক আসন রয়েছে মাত্র ৯৩৭টি। চালু থাকা তিনটি হলের মধ্যে ছেলেদের বিজয় ২৪ হলে আসন ৩০৪টি, শহীদ মুখতার এলাহী হলে ২৪০টি। মেয়েদের জন্য রয়েছে শহীদ ফেলানী হল, সেখানে আসন ৩৪২টি। শেখ হাসিনা ছাত্রী হল নির্মাণাধীন থাকায় মেয়েরা আরও সংকটে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হলের বাইরে বসবাস করেন, যাদের অধিকাংশ পার্কের মোড়, সর্দারপাড়া, চকবাজার, সালামের মোড়, মর্ডান মোড় ও লালবাগ এলাকার বিভিন্ন মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। বাড়িওয়ালারা সুযোগ বুঝে বাড়িয়ে নিচ্ছেন ভাড়া, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—নিয়ন্ত্রণ নেই কোনো।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নশিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি তো পাবো ঠিকই, কিন্তু হলজীবন তোশিক্ষার্থীর অর্ধেক শিক্ষাজীবন। আর সেই অর্ধেক থেকেই আমরা বঞ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই থাকার জন্য একটি সুরক্ষিত হল, নিরাপত্তা আর এক ধরনের মানসিক স্বস্তি—কিন্তু সেই অনুভূতি আমরা পাইনি।”
স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থী হাসিব রেজাও বলেন, “চার বছর কেটে গেল মেসে থেকে। বৈধভাবে হলে ওঠা যেন এক বিলাসিতা, অথচ এটা তো প্রাথমিক অধিকার।”
অবস্থার উন্নয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বেরোবির জন্য ৫০ একর নতুন জমি বরাদ্দ দিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, জমির ঘোষণা যতটা সহজ, বাস্তবায়ন ততটাই ধীর। তারা চান, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দ্রুত নতুন হল নির্মাণ শুরু হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, “আবাসন সংকট একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এটি নিরসনে প্রশাসন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আবাসনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষা কেবল ক্লাসরুমে সীমাবদ্ধ নয়। থাকার সুরক্ষা, মানসিক স্থিরতা ও সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধন—সব মিলেই বিশ্ববিদ্যালয়জীবন পূর্ণতা পায়। আর সে পূর্ণতার আধা জুড়েই আছে হলজীবন, যার স্বাদ থেকে তারা আজও বঞ্চিত।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।