নিউজ ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন-২০২৫ এ শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদে মুজিববাদের কবর রচনা' করার ইশতেহার দেওয়া প্রার্থী আহমেদ আল সাবাহ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) হল প্রশাসন থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) উদয়ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাবাহ ৪০৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওমর ফারুক পেয়েছেন ৩৮৪ ভোট।
গত ১৩ আগস্ট নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আহমেদ আল সাবাহ। ইশতেহারে তিনি বলেন, আল্লাহর প্রতি ভরসা করে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদে জিএস প্রার্থী। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ পালানোর পর হলে যা কিছু সংস্কারমূলক ও শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের কাজ সমূহের সাথে যুক্ত ছিলাম, কোনোটাই ডাকসুর উদ্দেশ্য নিয়ে করিনি।
ইশতেহারে তিনি বলেন, বিপ্লব পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটে উদ্বিগ্ন হয়ে নিজ দায়িত্বশীল জায়গা থেকে আমি হল সংসদে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পূরণের প্রচেষ্টাই হলো আমার ইশতেহার, মুজিববাদের কবর রচনা করাই আমার ‘নির্বাচনী’ ইশতেহার।
নির্বাচিত হয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করে আহমেদ আল সাবাহ বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে মূলত মুজিববাদকে ভিত্তি করে। মুজিববাদ হলো একটি ব্যক্তি–কেন্দ্রিক মতবাদ, যেখানে রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজকে এক ব্যক্তির আদর্শ ও চিন্তার চারপাশে ঘুরাতে বাধ্য করা হয়েছে। এই মতবাদ গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ, ভিন্নমত ও বহুমতের সংস্কৃতি ধ্বংস করে দিয়েছে। এক ব্যক্তি ও এক দলের পূজা থেকে জন্ম নিয়েছে এমন এক রাজনীতি, যেখানে দলই রাষ্ট্র, আর রাষ্ট্রই দল। এর মাধ্যমেই ফ্যাসিবাদী শাসনের পূর্ণ রূপায়ণ ঘটেছে।
তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে মুজিববাদের নেতিবাচক প্রভাব জাতির প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে এক হাজার ২৬১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনকে দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতাকে দমন করা হয়েছে কঠোর আইন ও নিপীড়নের মাধ্যমে। অর্থনীতিকে লুটপাট, সিন্ডিকেট ও টাকা পাচারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষ দুর্দশায় পতিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও রাষ্ট্রের ইতিহাসকে বিকৃত করে এক ব্যক্তি ও এক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে, যার ফলে জাতির ইতিহাস সত্যনিষ্ঠতা হারিয়েছে। সমাজকে শত্রু–মিত্রে বিভক্ত করে সহনশীলতা নষ্ট করা হয়েছে, আর ছাত্রসমাজকে সহিংসতা ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
আহমেদ আল সাবাহ বলেন, মুজিববাদের ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও দলীয়করণ থেকে মুক্তির শক্তি একমাত্র তাওহীদে নিহিত। তাওহীদ আল্লাহর একত্বকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিপূজা ও দলীয় আধিপত্য ভেঙে ন্যায়, দায়বদ্ধতা ও খোদায়ী নির্দেশনার ভিত্তিতে সমষ্টিগত নীতি প্রতিষ্ঠা করে। তাওহীদ আত্মপরিচয়কে জাতি/দলগত সীমার বাইরে টেনে এনে ব্যবস্থা ও নীতি নির্ধারণে খোদায়ী অনুশাসন ও ন্যায়ের নীতিকে আরোপ করে, যা দাঙ্গাভিত্তিক বিভাজন ও ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতির ভিত্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে। বিশ্বের যত পূর্বরাজনৈতিক ও মতবাদী ইজম আছে—প্রকৃতপক্ষে সবই তাওহীদের সামনে ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে