আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ৩ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
“ তিস্তা শুধু একটি নদী নয় একটি নায়ক ভিলেনের লড়াইয়ের মঞ্চ “

বাস্তবায়ন হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা
“ তিস্তা শুধু একটি নদী নয় একটি নায়ক ভিলেনের লড়াইয়ের মঞ্চ “

ফেলানী হত্যার এক যুগ পর-ছোট ভাইয়ের বিজিবিতে যোগদান

ফেলানী হত্যার এক যুগ পর-ছোট ভাইয়ের বিজিবিতে যোগদান

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় দ্বিতীয় তিস্তা সেতুরক্ষা বাঁধে ধস; হুমকিতে তিস্তা সেতু

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় দ্বিতীয় তিস্তা সেতুরক্ষা বাঁধে ধস; হুমকিতে তিস্তা সেতু

রংপুরে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সাবেক ইন্সটাক্টর ও পুলিশের এসআই'র বাড়ি ও সম্পদ ক্রোক

রংপুরে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সাবেক ইন্সটাক্টর ও পুলিশের এসআই'র বাড়ি ও সম্পদ ক্রোক

বাস্তবায়ন হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা

“ তিস্তা শুধু একটি নদী নয় একটি নায়ক ভিলেনের লড়াইয়ের মঞ্চ “

বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বিকাল ০৭:২৫

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: 

ঢাকার আকাশে হালকা ধোয়াসা ভোরের আলো ম্লান রাজধানীর কূটনৈতিক অঞ্চলে তখন সবেমাত্র শুরু হচ্ছে ব্যস্ততা ঠিক সেই সময় এক অদৃশ্য তরঙ্গ বইছে বিদেশী কূটনীতির অন্দরমহলে সেই তরঙ্গের কেন্দ্রে রয়েছে একটি নদী তিস্তা

 

তিস্তা যার বুকের পানি শুষে নিয়েছে খরা আবার বর্ষার উন্মত্ত স্রোতে গ্রাস করেছে ঘরবাড়ি জমি। একদিকে প্রাচর্য অন্যদিকে হাহাকার। এই নদীকে বাঁচাতে তাকে নতুন জীবন দিতে বাংলাদেশের বহু বছরের স্বপ্ন তিস্তা মহাপরিকল্পনা।

 

 কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে যতবার আলো জ্বলে উঠেছে ততবারই ছায়ার মত এসে দাঁড়িয়েছে ভারত। কখনো প্রতিশ্রুতির ফাঁদে কখনো কূটনৈতিক খেলায় আটকে গেছে প্রকল্প। অথচ নদীটা বাংলাদেশীদের। যাদের জমি ভাঙছে, যাদের ঘরহারা করছে প্রতিটি বন্যা। এমন এক সময়ে হঠাৎ নায়কের মত মঞ্চে প্রবেশ করে চীন। সোমবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মুখোমুখী বসেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম আর ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। বৈঠক শেষ হতেই খবর ছড়িয়ে পড়ে চীন শুধু আগ্রহ দেখাচ্ছে না স্বরে জমিন যাচাইয়ের জন্য পাঠাচ্ছে একটি কারিগরী বিশেষজ্ঞ দল। প্রকল্প নিয়ে যেন তাদের ভেতরে অদম্য উদ্দীপনা।

 

সূত্র জানাচ্ছে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই চীনের কাছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা

হয়েছে ৭৫ কোটি ডলার। বাকিটা আসবে সরকারি তহবিল থেকে। ২০২৬ সালে কাজ শুরু করে ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য। রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বৈঠকে স্পষ্ট বলেছেন, তিস্তা শুধু একটি নদী নয় এটি একটি কৌশলগত বন্ধন। বাংলাদেশের মানুষকে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা এবং কৃষিকে টেকশই করার জন্য এই প্রকল্প অপরিহার্য। তিনি আশ্বস্ত করেছেন চীন ইতিবাচকভাবে ঋণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের ভেতরে খবরটা পৌঁছাতেই মানুষের মনে এক ধরনের স্বস্তি ছড়িয়ে পড়ে। নদীর পাড়ে যারা জমি হারিয়েছেন তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু গল্পের

 

প্রতিটি নায়কের বিপরীতে থাকে ভিলেন সেখানে সেই ভিলেন ভারত। ২০২৪ সালের মে মাসে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কুয়েতরা। তিনিও বলেছিলেন ভারত বিনিয়োগে আগ্রহী। কিন্তু বাস্তবতা হলো বছরের পর বছর কেটে গেছে। ভারত কখনো এগিয়ে আসেনি। বরং তারা চাইতোবাংলাদেশ যেন চীনের দিকে না তাকায়। ঠিক যেমন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বলেছিলেন চীন তো রেডি কিন্তু আমি চাচ্ছি যে এটা ইন্ডিয়া করে দিক। কিন্তু ভারত কি সত্যিই করতে চেয়েছিল নাকি শুধু প্রতিশ্রুতির ফাঁদে বেঁধে রাখতে চেয়েছিল বাংলাদেশকে।

 

এই প্রশ্ন আজ ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতিটি আলোচনায়। চীন কিন্তু ভিন্ন পথে হেঁটেছে। ঢাকায় রাষ্ট্রদূতের কথায় বোঝা গেছে তাদের আগ্রহ শুধু অর্থায়নে নয় তারা চায় নদীটিকে আধুনিক প্রযুক্তিতে পুনরুদ্ধার করতে। যেন খরা বন্যা উভয় সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়। চীনের কারিগরি দল শিগঘরি বাংলাদেশে এসে স্বরে জমিনে তদন্ত করবে। তাদের পরিকল্পনা শুধু পানি নিয়ন্ত্রণ নয় তিস্তার দুই তীরকে সাজানো হবে কৃষি, মৎস চাষ আর পর্যটনের জন্য। এক নতুন অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলা হবে নদীর বুকে। অন্যদিকে ভারত চুপ।

 

তাদের নীরবতা আসলে এক ধরনের চাপ। তারা জানে তিস্তার পানি ছেড়ে দিলে ভারতের উত্তরাঞ্চলের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই প্রকল্পে তারা যত দেরি করাবে ততই বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই রাজনৈতিক কুটোচালে ভারত বারবার নায়কের পোশাকে আসলেও বাস্তবে তারা হয়ে উঠেছে ভিলেন। অন্যদিকে নেপথ্যে চলছে আরেক খেলা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশের চীনের বিনিয়োগ বেড়েছে। হাসপাতাল নির্মাণ থেকে শুরু করে অবকাঠামো চীনের পদচিহ্ন ক্রমেই গভীর হচ্ছে। বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বেইজিং। অর্থাৎ সম্পর্কের সেতু প্রতিদিন আরো মজবুত হচ্ছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা যেন এই সেতুর সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রতীক। বাংলাদেশের আশা চলতি বছরের মধ্যেই আর্থিক চুক্তি সই হবে।

 

তারপর শুরু হবে প্রকল্প বাস্তবায়ন। রাত নামলে ঢাকার রাস্তায় এখনো আলো ঝলমলে থাকে। কিন্তু উত্তরের গ্রামে তিস্তার পাড়ের মানুষ বসে থাকে অন্ধকারে। তারা তাকিয়ে থাকে নদীর দিকে। যে নদী কখনো দেয় আবার কেড়ে নেয়। তাদের চোখে এখন নতুন আলো জ্বলছে। কারণ তারা জানে চীন যদি এগিয়ে আসে তবে বদলে যাবে তাদের জীবন। তিস্তা শুধু একটি নদী নয় একটি নায়ক ভিলেনের লড়াইয়ের মঞ্চ। একদিকে ভারত যে শুধু প্রতিশ্রুতির আড়ালে সময় নষ্ট করেছে। অন্যদিকে চীন যে হাতে কলমে এগিয়ে এসেবলেছে আমরা তোমাদের পাশে আছি। বাংলাদেশ আজ এক মোড়ে দাঁড়িয়ে। নায়কের হাত ধরা নাকি ভিলেনের ফাঁদে আটকে থাকা। সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি নেই। তিস্তার স্রোত যেমন থেমে থাকে না তেমনি থেমে থাকবে না ইতিহাসও। 

মন্তব্য করুন


Link copied