স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মনসুর চাভুশি বলেছেন, ‘তিস্তা ব্যারেজ বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা যে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্পটি পরিচালনা করছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইরান তিস্তা ব্যারেজ সহ বাংলাদেশকে সকল নদীর পানি ব্যবস্থাপনা, বাঁধ নির্মাণ এবং জলবায়ু অভিযোজন প্রযুক্তিতে সহযোগীতা করতে করতে আগ্রহী। দুই দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে এই খাতে সহযোগিতা আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশাবাদি।
শুক্রবার(১৭ অক্টোবর) দুপুরে দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প নীলফামারীর ডালিয়াস্থ তিস্তা ব্যারেজ এলাকার পরিদর্শনকালে উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি এসকল কথা বলেন।
এসময় রাষ্ট্রদূতের সফরসঙ্গী ছিলেন তার সহধর্মিণী জাহারা চাভোশি। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (উত্তরাঞ্চল) ড. মোহাঃ সরফরাজ বান্দা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আহসান হাবিব, নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় ইরানের রাষ্ট্রদূত তিস্তা ব্যারেজের প্রকৃতি, অবকাঠামো এবং বাংলাদেশের প্রকৌশল দক্ষতায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন এবং দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।পরিদর্শনকালে রাষ্ট্রদূত ও তার সহধর্মিণী তিস্তা নদী এবং ব্যারেজের ৫২টি সুইচ গেট সহ বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং পানি নিয়ন্ত্রণ, সেচ ব্যবস্থাপনা ও বন্যা প্রশমনে তিস্তা প্রকল্পের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত হন। কর্মকর্তারা ব্যারেজের গেট পরিচালনা ব্যবস্থা, সেচ চ্যানেল এবং চলমান রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের বিষয়ে রাষ্ট্রদূতকে ধারণা দেন। পাশাপাশি তারা তিস্তা পাড়ের সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যার কথাও শুনেন।
এরপর তিস্তা ব্যারেজ সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অবসর রেস্ট হাউজের সম্মেলন কক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে বিশেষ আলোচনা সভা করেন তিনি। সেখানে পাওয়ায় পয়েন্ট তিস্তা প্রকল্প নির্মাণ ও এর কার্যক্রম উপস্থাপন করা হয়। এতে প্রকল্পের ইতিহাস, নির্মাণ প্রক্রিয়া, কার্যকারিতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। পরিদর্শন শেষে বিকালে তিনি সড়ক পথে পুনরায় রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এরআগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের কাউয়া ধনীপাড়া গ্রামে জুলাই যোদ্ধা মোঃ আতিকুজ্জামান আতিকের পরিবারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন রাষ্ট্রদূত দম্পিতি। আতিকের বাড়িতে পৌঁছে রাষ্ট্রদূত দম্পতিকে স্বাগত জানান আতিকের পিতা মোঃ লেবু মিয়া, মা, বোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তাঁদের আন্তরিক অভ্যর্থনা, নিখাদ ভালোবাসা ও গ্রামীণ আতিথেয়তা রাষ্ট্রদূত দম্পতিকে গভীরভাবে মুগ্ধ করে।
রাষ্ট্রদূতের এই সফরের খবর দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হন জামায়াতে ইসলামীর নীলফামারী জেলা শাখার আমীর ও নীলফামারী-১ আসনের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, ডিমলা উপজেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক কাজী হাবিবুর রহমান ও উপজেলা সেক্রেটারি মোঃ কাজী রোকনুজ্জামান বকুল। তাঁরা ফুল দিয়ে রাষ্ট্রদূত দম্পতিকে বরণ করেন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এসময় সেখানে রাষ্ট্রদূত মানচুর জাভুসি বলেন, বাংলাদেশ আমার হৃদয়ের দেশ। এখানকার মানুষ অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ, ভদ্র এবং পরিশ্রমী। এই গ্রামের মানুষ, প্রকৃতি ও অতিথিয়তা আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আজ এখানে এসে এক অবর্ণনীয় শান্তি অনুভব করছি। তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধা মোঃ আতিকুজ্জামান আতিক একজন অসাধারণ মানুষ। তাঁর বিনয়, শালীনতা ও দেশপ্রেমে আমি সত্যিই মুগ্ধ। তাঁর পরিবারের সবাই খুব আন্তরিক ও অতিথিপরায়ণ। আমি তাঁদের জন্য দোয়া করি, ইনশাআল্লাহ আতিক একদিন দেশের জন্য আরও বড় কিছু করবেন।
নীলফামারী জেলা জামায়াতে ইসলামী আমীর অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, জুলাই যোদ্ধা মোঃ আতিকুজ্জামান আতিক আমাদের ডিমলা উপজেলার গর্ব। তাঁর মতো একজন দেশপ্রেমিক, বিনয়ী ও সমাজসেবী মানুষের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমাদের জন্য এক বিশাল সম্মানের বিষয়। তাদের আজকের এই সফর কেবল আতিকের নয়, সমগ্র ডিমলার জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন।