আর্কাইভ  রবিবার ● ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ● ৪ কার্তিক ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ১৯ অক্টোবর ২০২৫
ভেতরে যাত্রীদের অপেক্ষা, বাইরে স্বজনদের

শাহজালালের কার্গো ভিলেজের আগুন
ভেতরে যাত্রীদের অপেক্ষা, বাইরে স্বজনদের

শাহজালালের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বড় বাধা ছিল বাতাস: ফায়ার সার্ভিসের ডিজি

শাহজালালের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বড় বাধা ছিল বাতাস: ফায়ার সার্ভিসের ডিজি

পাঁচ দিনে দেশে তিন ভয়াবহ আগুন

পাঁচ দিনে দেশে তিন ভয়াবহ আগুন

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন নেভাতে গিয়ে ২২ জন আহত

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন নেভাতে গিয়ে ২২ জন আহত

পরপর ঘটা অগ্নিকাণ্ডে ‘নাশকতার’ আঁচ

শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, রাত ০৯:৫৭

Advertisement

নিউজ ডেস্ক:  রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি পণ্য মজুত রাখার কার্গো ভিলেজে শনিবার (১৮ অক্টোবর) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর দুদিন আগে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) আগুন লেগে পুড়ে গেছে একটি পোশাককারখানা ভবন। পরপর ঘটা এসব অগ্নিকাণ্ড কেবল কাকতালীয় নয়, বরং এতে নাশকতার আঁচ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এত বড় আগুন অস্বাভাবিক
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মেদ খান  বলেন, দফায় দফায় এমন বড় অগ্নিকাণ্ড কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর একটি কেপিআইভুক্ত (গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) এলাকা, যেখানে সার্বক্ষণিক মনিটরিং থাকার কথা। সেখানে আগুন লাগলেও এতক্ষণ ধরে জ্বলার কথা নয়। বিমানবন্দরের ভেতরেই ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব ইউনিট রয়েছে। তারা সাধারণত বিমানের আগুন নেভাতে সক্ষম। এত শক্তিশালী ইউনিট থাকা সত্ত্বেও আগুন নিয়ন্ত্রণে এতটা সময় নেওয়া কর্তৃপক্ষের গাফিলতির দিকেই ইঙ্গিত দেয়।

আলী আহম্মেদের মতে, এ ঘটনাগুলোর দ্রুত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কেন আগুন লাগলো, কীভাবে লাগলো এবং আগুন নেভাতে বিলম্ব হলো কেন- তা স্পষ্টভাবে জানতে হবে। কারণ এসব আগুন দেশের ভাবমূর্তি ও অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে নড়বড়ে করার ইঙ্গিত হতে পারে।

থাকতে পারে নাশকতার আলামত
ফায়ার সার্ভিসের আরেক সাবেক ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহিদউল্লাহ বলেন, ঘন ঘন আগুন লাগার ঘটনায় নাশকতার আলামত থাকতে পারে। শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন নেভানোর সবকিছু থাকা সত্ত্বেও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া অপ্রত্যাশিত এবং অস্বাভাবিক। সম্প্রতি যেভাবে একের পর এক বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটছে, তাতে দেশের অর্থনীতি দুর্বল করার কোনো পাঁয়তারা চলছে কি না, সেটি এখন দেখার বিষয়। দুর্ঘটনার আড়ালে নাশকতা লুকিয়ে থাকতে পারে।

ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা
আবু নাঈম জানান, আগুন লাগার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, ফায়ার অ্যালার্ম ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সমন্বয়- সবকিছুই ব্যবস্থাপনার অংশ। সেখানেই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। বিমানবন্দরের মতো জায়গায় প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি থাকা উচিত নয়। ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের যৌথ মহড়া নিয়মিত হচ্ছে কি না, সেটি দেখা দরকার। কারণ এমন জায়গায় কোনো অনুশীলন না হলে বিপদের সময় সমন্বয় ভেঙে পড়ে।

জরুরি স্বচ্ছ তদন্তের দাবি
দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পরপর আগুন লাগার ঘটনায় এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিরপেক্ষ ও প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত। কে বা কারা এসব ঘটনার পেছনে জড়িত, কিংবা এটি নিছক দুর্ঘটনা কি না তা জানতে না পারলে এমন অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সাবেক এ দুই ডিজি।

শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে রওনা হয়। পরে আগুন ছড়াতে থাকলে ইউনিটের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানিয়েছেন, ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অগ্নিনির্বাপণে কাজ করছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিটসহ নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী।

সেই সঙ্গে বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনুমানিক এক হাজার আনসার সদস্য ঘটনাস্থলে উদ্ধার ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন। বিজিবির দুই প্লাটুন সদস্যও কাজ করছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে সিইপিজেডের অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিকেল কোম্পানির গুদামে ভয়াবহ আগুন লাগে। প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। অ্যাডামস তোয়ালে ও ক্যাপ এবং জিহং মেডিকেল সার্জিক্যাল গাউন তৈরির কারখানা।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, আগুন লাগা সাততলা ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ভবনের দুই পাশ দিয়ে আগুন নেভানোর সুযোগ পাওয়া যায়নি। অন্য দুই পাশ থেকে চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ভবনের আশপাশে যে ন্যূনতম জায়গা রাখতে হয়, সেটি দুই দিকে ছিল না।

মন্তব্য করুন


Link copied