আর্কাইভ  বুধবার ● ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ● ১৪ কার্তিক ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ২৯ অক্টোবর ২০২৫
বেগম খালেদা জিয়া অথবা তারেক রহমানকে প্রার্থী চান নেতা-কর্মীরা

ভোটের হাওয়া
বেগম খালেদা জিয়া অথবা তারেক রহমানকে প্রার্থী চান নেতা-কর্মীরা

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের

অনৈক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে ঐকমত্য কমিশন: সালাহউদ্দিন আহমদ

অনৈক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে ঐকমত্য কমিশন: সালাহউদ্দিন আহমদ

তিস্তার ২৫টি চরের মানুষের একমাত্র ভরসা ভার ও নৌকা

তিস্তার ২৫টি চরের মানুষের একমাত্র ভরসা ভার ও নৌকা

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক

ত্যাগের গল্প শোনালেন তারেক রহমান

মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, বিকাল ০৭:৫১

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। কিন্তু প্রতিটি সংসদীয় আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে। সে জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে বসছে দলটি। গত দুই দিনে দলটির ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের শুনিয়েছেন ত্যাগের গল্প। এতে বৈঠকে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে দলের সব নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেন তারেক রহমান।
বৈঠক সূত্র জানায়, তারেক রহমান ছিলেন বেশ আবেগঘন।


তিনি দেশ, জাতি, দল ও দলের নেতাকর্মীদের জন্য খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা তুলে ধরেন। খালেদা জিয়া কিভাবে নিজের, নিজ পরিবারের সুখের কথা ভুলে গিয়ে শুধু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশের মানুষ ও নেতাকর্মীদের কথা চিন্তা করে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছেন, কারাবরণ করে নিয়েছেন, তা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে তুলে ধরেন।

গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পাঁচ সাংগাঠনিক বিভাগ ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সঞ্চালনা করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী। এর আগে গত রবিবার দলের সাংগঠনিক বিভাগ চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক হয়।

বৈঠকে থাকা বিএনপি নেতারা জানান, ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে হামলা, মামলা, গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীরা। বাদ যাননি দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও। ১/১১ কিংবা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় চাইলেও বিদেশে যেতে পারতেন খালেদা জিয়া।


কিন্তু দেশ, গণতন্ত্র, দেশের মানুষ ও নেতাকর্মীদের কথা বিবেচনা করে এর পরিবর্তে তিনি বেছে নিয়েছেন কারাবরণ, যেখানে বিনা চিকিৎসায় বেগম জিয়াকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হয়েছে, ভুগছেন চিকিৎসাবিহীন দীর্ঘ কারাবাসের যন্ত্রণা। গণতন্ত্রের স্বার্থে আপসহীন থাকায় সহ্য করতে হয়েছে নিজ পরিবারের ওপর নির্যাতনও। তার পরও তিনি মাথা নত করেননি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের দীর্ঘ এই লড়াই-সংগ্রামে বেগম জিয়া থেকে শুরু করে গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, জনি, চৌধুরী আলমসহ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার নেতাকর্মীদের ত্যাগের কথা আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দেশ, গণতন্ত্র ও দলের স্বার্থে ত্যাগ স্বীকারের মানসিক প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী দিনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় সবার জন্য বিদজ্জনক পরিস্থিতির সতর্কতাও দিয়েছেন তিনি।

বৈঠক সূত্র জানায়, দুজন মা একটি শিশুকে দাবি করার গল্পও শোনান তারেক রহমান। এরপর বিচারের জন্য গেলে কাজী ওই শিশুকে ভাগ করে দুজনকে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। এতে প্রকৃত মা সন্তানকে ভাগ না করে অন্যজনকে দিয়ে দিতে বলেন। এতেই কাজি বুঝে যান ওই শিশুর প্রকৃত মা কে। তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও দলের জন্য, ধানের শীষের জন্য ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুতি নিতে বলেন।

মেহেরপুর-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সদস্য মো. জাকির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবাইকে ইস্পাতকঠিন ঐক্য বজায় রাখতে বলেছেন। মনোনয়ন বড় করে না দেখে দলের স্বার্থ বড় করে দেখতে বলেছেন। দল যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখতে বলেছেন। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে কথা দিয়েছি।’

বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা আরো জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেছেন, প্রতিটি আসনেই একাধিক যোগ্য প্রার্থী তিনি পেয়েছেন। কিন্তু প্রার্থী করতে হবে একজনকে। এ জন্য অনেকে যোগ্য হলেও বাদ পড়বেন। কিন্তু এ জন্য যাতে দলের মধ্যে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব-বিভেদ তৈরি না হয়। সবার আগে দল ও দেশের স্বার্থ বিবেচনা করতে হবে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হলেও এখনো অদৃশ্য শক্তি ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ১/১১-র মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তাই যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে সবাই লাভবান হবে। কিন্তু বিভেদের কারণে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জানান, তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন, যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তিনি যেন মনোনয়ন পেয়ে এলাকায় আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ বা এ ধরনের কোনো কিছু না করেন। মনোনয়ন পেয়ে সবার আগে ছুটে যেতে হবে যিনি মনোনয়ন পাননি তাঁর কাছে। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। আবার যিনি মনোনয়নবঞ্চিত হবেন, তাঁকেও দলের কথা চিন্তা করে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিএনপি যদি নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারে, তাহলে সবাইকেই তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী স্থানে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু দ্বন্দ্ব-বিভেদের কারণে যদি ভিন্ন কোনো পরিস্থিতি আসে, তাহলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সভায় উপস্থিত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তারেক রহমানের ঐক্য ধরে রাখার নির্দেশনায় সম্মতি জানিয়ে সমস্বরে অঙ্গীকার করেন।

জানা যায়, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে সম্প্রতি তারেক রহমান দলের বাইরেও জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন পেশাজীবী, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেন। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রায় প্রতিটি আসনে তিনি একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা। তবে প্রতিটি আসনে বিএনপি একক মনোনয়ন দিতে চায়। এ জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে মতবিনিময়সভার আয়োজন করা হয়।

বরিশাল বিভাগ বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাকর্মীদের ওপর ১৭ বছর অমানুষিক নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়েছে। আমরা এর জবাব আগামী নির্বাচনে বিজয় উপহার দেওয়ার মাধ্যমে দিতে চাই। ধানের শীষের বিজয়ই হবে বড় প্রতিশোধ। তাই আমরা শপথ নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের ভালোবাসা নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনব।’

রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন, ‘দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপির প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সবাই ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকব। যদি ঐক্য ধরে রাখতে পারি, তাহলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত।’

মন্তব্য করুন


Link copied