 
                                                                        
                                                                        
                                        
স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, বিগত সরকারের সময়ে রংপুর বরাবরই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। গত ১৬ বছর ধরে উন্নয়নের কথা আমরা শুনেছি, কিন্তু বাস্তবে সেই কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। বরং পল্লী বন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে তিনি রংপুরে উন্নয়ন করেছে। তাই রংপুরে উন্নয়ন ফিরিয়ে আনতে জাতীয় পার্টির বিকল্প নেই।
শুক্রবার(৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা শহরের ড্রিমপ্লাস কমিউনিটি সেন্টারে নীলফামারী জেলা জাতীয় পার্টির আয়োজনে নীলফামারী জেলা, উপজেলা এবং পৌর জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভার সভাপতিত্ব করেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদ পারভেজ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির মহাসচিব আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কৌশলে জাতীয় পার্টিকে তছনছ করে দিয়েছে। কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না। ১৪, ১৮ ও ২৪ সালে দেশে কোনো স্বাভাবিক সরকার ছিল না। কোনো স্বাভাবিক নির্বাচন হয়নি। এখানে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করেছিল বাধ্য হয়ে, কখনো অংশ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দলটাকে টিকিয়ে রেখেছে। তবে সেদিন আর নেই, মাথার ওপর থেকে কালো মেঘ সরে গেছে। সময় এসেছে পল্লী বন্ধু এরশাদের জাতীয় পার্টিকে পুনরায় ঢেলে সাজানোর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাতীয় পার্টিকে পুনর্গঠনে কাজ করছেন নেতাকর্মীরা। দলের ঘাঁটি রংপুর সহ সারা দেশে জাতীয়পার্টিকে জনগনের কাছে নিয়ে যেতে চাই আমরা।
তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে সংকটমত অবস্থায় আছি। দেশ, জাতি, রাজনৈতিক দল সবাই একটি সংকটের মধ্যে পড়ে গেছে। দেশে নির্বাচন হবে কি না, কবে নির্বাচন হবে তা নিয়ে সংশয়ে আছি। ভোট গঠনমূলক ও সুষ্ঠু হবে কি না, জাতীয় পার্টিকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিবে কিনা, কোনটাই এখন সঠিক উত্তর দেওয়ার সময় আসেনি।
তিনি দাবি করে বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে দেশের মানুষ নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। জাতীয় পার্টিও কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এতদিন আওয়ামী লীগ সরকার নানা কূটকৌশলে জাতীয় পার্টিকে কোণঠাসা করে রেখেছিল সাধারণ মানুষ ফের ভোট উৎসবে মেতে উঠবে। এখন জাতীয় পার্টির ঘাঁটি রংপুর ফিরবে পুরোনো ঐতিহ্যে।
তিনি বলেন, আজকে জাতীয় পার্টিকে ছাড়া সংস্কার করার চেষ্টা করা হয়েছে। এখন সংস্কার করতে গিয়ে অন্তর্বতীকালিন সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। অন্তর্বতীকালিন সরকার ও ঐক্যমত কমিশন দেশকে ঐক্য না করে তিন ভাগ ভাগ করেছে। একভাগ ‘হ্যাঁ’ অন্য ভাগে ‘না’ আরেকভাগ বঞ্চিতদের। ২০০৮ সালে নির্বাচনের ফলাফল দেখলে বুঝা যাবে আওয়ামীলীগের বিপরীতে ৫৬ শতাংশ ভোট জাতীয় পার্টির পেয়েছে। এখন যদি আমাদের বাদ দিয়ে সংস্কার করেন তাহলে এটা সংস্কার হবেনা।
তিনি আরও বলেন, গনঅভ্যুত্থানে জাতীয় পার্টি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলো রংপুরে আমাদের দুই জন নেতা মারা গেছে। আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। আন্দোলনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা রয়েছে। তবে গনঅভ্যুত্থানের পরে কিছুদল মনে করলো জাতীয় পার্টি থাকলে তারা রাজনৈতিক সুবিধা হাসিল করতে পারবে না। তিনি বলেন, এখন নতুন দল হয়েছে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। তারা সার্কিট হাউজ ব্যবহার করেছে গাড়ী ব্যবহার করেছে।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এনসিপির দাবির মুখে শাপলা থেকে শাপলা কলি দিতে বাধ্য হলো। সেই এনসিপি ভোটের সময় জোর করে নির্বাচন আসনগুলোতে জিততে যাবে, তখন নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। তাই তিনি এ ব্যাপারে দলের নেতাকর্মী সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সজাগ থাকার আহবান জানান। 
তিনি বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। আজকে দেশে হত্যা, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ অনেক বেড়ে গিয়েছে। এর ব্যর্থতা কার, অন্তর্বতী সরকারের। তারা সঠিক সময় নির্বাচন দিতে পারছে না বলে দেশ আজ ধংসের দিকে যাচ্ছে। আর এটার সুবিধা নেয়ার পায়তারা করছে বিদেশী শক্তি। জাতীয় পার্টি তা হতে দিবে না।
কর্মী সভায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জাতীয় পার্টি এভাবে আর ঘরে ভেতর বা হলের ভেতরে আর কোনো সভা করবে না। বিভিন্ন দাবিতে বড় পরিসরে মাঠে-ময়দানে সভার আয়োজন করবে। ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত হয়ে আগামীতে ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।