আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ● ২ পৌষ ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
হাদিকে গুলি করা অস্ত্রের ম্যাগাজিন উদ্ধার

হাদিকে গুলি করা অস্ত্রের ম্যাগাজিন উদ্ধার

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: মূল অভিযুক্ত ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গ্রেপ্তার

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: মূল অভিযুক্ত ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গ্রেপ্তার

সমাবেশ, ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ মার্কিন দূতাবাসের

সমাবেশ, ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ মার্কিন দূতাবাসের

কমে যেতে পারে মোবাইল ফোনের দাম

কমে যেতে পারে মোবাইল ফোনের দাম

বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ডের অভ্যুদয়ের দিন আজ

মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, সকাল ০৭:৫৬

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: মহান বিজয়ের ৫৪ বছর পূর্তির দিন আজ। একাত্তরের এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূ-খণ্ড আাত্মপ্রকাশ করে।দীর্ঘ ৯মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলার শোষিত মানুষ পেয়েছিল আত্মপরিচয়।  অবসান ঘটেছিল ২৪ বছরের পাকিস্তানি জান্তাদের দুঃশাসন। শোষণের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত স্বাধীন দেশে মুক্তির স্বাদ নিয়েছিল প্রথমবার। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সবচেয়ে কাঙ্খিত ও আবেগঘন দিন ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস।

 এদেশের ৩০ লাখের বেশি শহিদ আর লাখো মায়ের সম্ভ্রমের সঙ্গে মিশে আছে স্বাধীনতার ইতিহাস, বিজয়ের আনন্দ। আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর । একাত্তরের এই দিনে ৯২ হাজার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আÍসমর্পণ করে। জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজকের দিনটিতে বিজয়োল্লাসে ভাসবে দেশ, আনন্দে উদ্বেলিত হবে গোটা জাতি। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে দিনটি।

দিনটি উপলক্ষে মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা দু’জনই দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের আত্মত্যাগের কথা। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।

ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। লাখো মানুষের মিলনমেলা হবে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এর পর বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে ইতোমধ্যে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলোকে জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাদ্য বাজাবেন আজ।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় পর্যায় এবং জেলা ও উপজেলায় ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘরগুলো বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে।

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।

এ ছাড়া দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয় মেলা (চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের) এবং শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরতে কর্মসূচি নেওয়া হবে।

মহান বিজয় দিবস দেশব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের অংশ হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়া হবে। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী সকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে শহরের তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে পৃথকভাবে ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শন করবে। সেখানে একটি বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো আয়োজন করা হবে।

এছাড়াও, ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর উপলক্ষ্যে সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবে। যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হবে, যা একটি নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করবে।

দেশের অন্যান্য শহরেও সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা একই রকম ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শনী পরিচালিত হবে। এর পাশাপাশি, পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার বাহিনী দেশব্যাপী ব্যান্ড শো আয়োজন করবে। সমস্ত অনুষ্ঠান জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ওপর আবৃত্তি, প্রবন্ধ রচনা এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং দিবসটি উদ্‌যাপনের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

সকাল ৯টায় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করবে। এদিন সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত জাদুঘরগুলো প্রবেশ ফি ছাড়াই সারাদিন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, অন্যদিকে দেশের সকল বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকবে। এছাড়াও, চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা এবং পায়রা বন্দর, ঢাকা সদরঘাট, পাগলা এবং বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসি জেটিতে সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি নিয়েছে। বিএনপির কর্মসূচিতে রয়েছে– ভোরে দলীয় সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ ও সেখান থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ। জামায়াতে ইসলামীও দিনটি উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাকের পার্টিস বিভিন্ন দল ও তাদের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মহিলা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

মন্তব্য করুন


Link copied