নিউজ ডেস্ক: পৌষের শুরুতেই দেশের ওপর জেঁকে বসেছে কনকনে শীত। ক্রমশ বাড়তে থাকা ঠান্ডার প্রভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পরশু থেকে টানা দুই থেকে তিন দিন দেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা।
এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৯ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। যশোরে চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও তেঁতুলিয়ায়ও পারদ ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় শীতের প্রকোপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ঘন কুয়াশায় ভোর থেকেই আচ্ছন্ন থাকছে সড়ক-মহাসড়ক ও ফসলের মাঠ। অনেক এলাকায় দিনের বেলাতেও সূর্যের দেখা মিলছে না। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা কাটছে না, ফলে শীতের অনুভূতি বাড়ছে আরো বেশি। যানবাহন চলাচলে হেডলাইট ব্যবহার করতে হচ্ছে, নৌপথেও সৃষ্টি হচ্ছে বিঘ্ন। কুয়াশার কারণে সন্ধ্যার পর পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া ও আরিচা–কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
উত্তরের জেলাগুলোতে দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি। টানা কয়েক দিনের শীত ও হিমেল হাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। শিশু ও বয়স্কদের ভোগান্তি বাড়ছে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। পঞ্চগড়ে হিমালয়ঘেঁষা হিমেল বাতাসে দিন ও রাতের পার্থক্য মিলছে না—দিনেও স্বস্তি নেই, রাত নামলেই শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাবে দেশের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এই বলয়ের বর্ধিতাংশ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। অন্যত্রও হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশার সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা থাকবে নিম্নমুখী।
রাজধানীতেও শীতের দাপট স্পষ্ট। ঢাকায় শুক্রবার সকালে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল প্রায় ৯৫ শতাংশ। হিমেল হাওয়ার সঙ্গে কুয়াশা মিলিয়ে নগরজীবনে শীতের চাপ বেড়েছে। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন এলাকায় খোলা আকাশের নিচে থাকা মানুষদের শীতে জবুথবু অবস্থায় দেখা গেছে। একই সঙ্গে শীতের পোশাকের দোকান ও ফুটপাতের বাজারে বেড়েছে ক্রেতার ভিড়।
আবহাওয়াবিদ ড. মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেলে শীতের অনুভূতি বাড়ে। বর্তমানে রংপুর, দিনাজপুর ও তেঁতুলিয়ায় এই পার্থক্য ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় সেখানে শীতের তীব্রতা বেশি। তাঁর মতে, ২৯ ডিসেম্বর থেকে আবারও শীতের দাপট বাড়তে পারে এবং তখন টানা দুই থেকে তিন দিন তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের সতর্কতা—আগামী কয়েক দিন কুয়াশা ও শীত মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।