বেরোবি প্রতিনিধি : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আগামী ২০ ডিসেম্বর রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের বহুল প্রতীক্ষিত এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের নাম ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) প্রশাসনিক ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমাবর্তনের তারিখ এবং প্রধান অতিথির নাম ঘোষণা করে। উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী জানান, প্রথমে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি অপারগতা প্রকাশ করায় পরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রধান অতিথি করা হয়।
তবে উপাচার্যের এই ঘোষণার পরপরই ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে নানা রকম আলোচনা ও মতপার্থক্য। গ্র্যাজুয়েটদের একাংশ এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাদের মতে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে এবং এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একজন সাবেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া বলেন, আমরা খুশি যে শেষ পর্যন্ত সমাবর্তন হচ্ছে। যিনিই প্রধান অতিথি হন না কেন, এটা আমাদের জন্য একটা বড় অর্জন। তবে প্রধান উপদেষ্টার একজন উপদেষ্টা আসলে সেটা আরও মর্যাদাপূর্ণ হবে।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন। তাদের মতে, সমাবর্তন একটি শিক্ষা ও গবেষণামূলক অনুষ্ঠান। এখানে দেশের কোনো খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, গবেষক বা নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্বকে প্রধান অতিথি করা উচিত ছিল।
তারা বলেন, একজন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মূলত রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের মূল চেতনার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোগসেদুল ইসলাম এই সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে নাকি প্রধান অতিথি হিসেবে আচার্য বা সরকারপ্রধান (প্রধান উপদেষ্টা) থাকবেন না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন রিফাত বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদ শিক্ষার্থী আবু সাঈদ এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলেন, অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্ব (প্রধান উপদেষ্টা) কেন সমাবর্তনে আসতে পারছেন না।
এ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন রিফাত ফেসবুকে লিখেছেন, তাকে (পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন) কীসের ভিত্তিতে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? আমার সত্যিই বুঝে আসে না—এমন বিদঘুটে সিদ্ধান্ত কার মাথা থেকে বের হয়! উনি কি রাষ্ট্রপতি, নাকি কোনো বিশেষ আলোচিত ব্যক্তি? বুঝলাম, বর্তমান রাষ্ট্রপতি নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কি একদিন সময় নেই বেরোবির সমাবর্তনে আসার মতো?
তিনি বলেন, কিছুদিন আগেই তো উনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। তাহলে রংপুরে আসার সুযোগ বা সময় নেই কেন? অথচ এই জুলাই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অবদান—নিজের জীবন উৎসর্গ করা শিক্ষার্থী আবু সাঈদ—ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী।
সমাবর্তন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. তাজুল ইসলাম জানান, তারা প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা এবং পরে আইন উপদেষ্টাকে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা দুজনই এই বিশ্ববিদ্যালয় একবার করে আসায় অপারগতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ পরিবর্তন করে নতুন করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ঠিক করা হয়েছে। ফলে সমাবর্তনের তারিখ নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে পরিবর্তন করতে হয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যদি আবার প্রধান অতিথি পরিবর্তন করতে হয়, তবে সমাবর্তন কবে হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর এটিই বেরোবির প্রথম সমাবর্তন। এতে প্রথম ব্যাচ থেকে দ্বাদশ ব্যাচ পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।