আর্কাইভ  বুধবার ● ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ২ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রংপুরের পীরগাছা স্টেশন এলাকায় যাত্রীবাহী ট্রেনের পাঁচ বগি লাইনচ্যুত

১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার পদ্মরাগ
রংপুরের পীরগাছা স্টেশন এলাকায় যাত্রীবাহী ট্রেনের পাঁচ বগি লাইনচ্যুত

ইসলামি দলগুলোর যুগপৎ কর্মসূচিতে রাখছে নজর

রাজনীতিতে উত্তাপ চায় না বিএনপি
ইসলামি দলগুলোর যুগপৎ কর্মসূচিতে রাখছে নজর

পঞ্চগড়ে ছোবল দেয়া কোবরা সাপ হাতে হাসপাতালে বৃদ্ধা!

পঞ্চগড়ে ছোবল দেয়া কোবরা সাপ হাতে হাসপাতালে বৃদ্ধা!

‘ন্যানো বানানা এআই শাড়ি’ ট্রেন্ড, কীভাবে বানাবেন পছন্দের ছবি

‘ন্যানো বানানা এআই শাড়ি’ ট্রেন্ড, কীভাবে বানাবেন পছন্দের ছবি

১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার পদ্মরাগ

রংপুরের পীরগাছা স্টেশন এলাকায় যাত্রীবাহী ট্রেনের পাঁচ বগি লাইনচ্যুত

বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রাত ০১:২৫

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। পরে দীর্ঘ ১১ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় দুটি রিলিফ ট্রেনের সহায়তায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে বগি উদ্ধার কাজ শেষ হয়। ট্রেনটি উদ্ধারে লালমনিরহাট থেকে একটি ও পার্বতীপুর থেকে অপর একটি রিলিফ ট্রেন পাঠানো হয়।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার কথা জানান উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রেলওয়ে কর্মীরা।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেন ‘পদ্মরাগ’ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুরের পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। এ সময় পঞ্চগড় থেকে সান্তাহারগামী ‘দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস’ একই স্টেশনে আসায় ‘পদ্মরাগ’ ট্রেনটি দুই নম্বর লাইনে অবস্থান করে। পরে দোলনচাঁপা পীরগাছা ছেড়ে গেলে লালমনিরহাটের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ‘পদ্মরাগ’ ট্রেনটি। এ সময় এক নম্বর লাইনে থেকে দুই নম্বর লাইনে ক্রসিংয়ের সময় হঠাৎ ‘পদ্মরাগ’ ট্রেনের ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও লাইন ও সিগন্যালের ক্ষতি হয়েছে।

রেল লাইনের কাঠের স্লিপার পচে যাওয়া, পাথর না থাকা এবং দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়াকেই দুষছেন যাত্রীরা। অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, তাদের মালামাল খোয়া গেছে। ট্রেনটিতে দুর্ঘটনার অন্তত পাঁচ শতাধিকের বেশি যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার পরপরই বগি থেকে আতঙ্কিত মানুষ নামতে শুরু করেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অনেকেই বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।

এদিকে লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার মূল কারণ উদ্‌ঘাটনে কাজ করছে।

দুর্ঘটনাকবলিত পদ্মরাগ ট্রেনের বগির যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করেই ট্রেনটা থেমে যায়। পরে শুনলাম বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। আমরা আতঙ্কে পড়ে যাই। শেষমেশ পায়ে হেঁটে রাস্তায় উঠে বিকল্প পথে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।

আরেক যাত্রী নুরবানু জানান, তিনি তার পাশের সিটে ব্যাগ রেখে বাথরুমে যান। তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে। পরে এসে দেখেন ওই যাত্রী আর নেই।

প্রত্যক্ষদর্শী এমদাদুল হক জানান, মূলত যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানকার কাঠের স্লিপারগুলো পচে গিয়েছিল। এছাড়াও সেখানে কোনো পাথর ছিল না। রেলের পাতগুলো জং ধরে নষ্ট হওয়ার মতো ছিল। এ কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

অপর প্রত্যক্ষদর্শী শামসুল আলম জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশনের মিটার গেজগুলো বহু বছর ধরে মেরামত করা হয় না। বরাদ্দ হলেও রেলওয়ের একশ্রেণীর কর্মকর্তারা সেগুলো লোপাট করেন। যার কারণে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

আমিরুল ইসলাম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এই ট্রেনটিতে পাঁচ শতাধিকের বেশি মানুষ ছিল। স্টেশনে না হয়ে বাহিরে যদি ফুল স্পিডে থাকত এই ট্রেনটি তাহলে অনেক হতাহত হয়ে যেত। এটি এই পথে বড় দুর্ঘটনার একটি সিগন্যাল। অবিলম্বে এই বিভাগের মিটার গেজগুলোর পাতগুলো পরিবর্তন, কাঠের স্লিপারের পরিবর্তে লোহার স্লিপার এবং পাথর দেওয়ার পাশাপাশি ব্রডগেজে রূপান্তর করা না হলে বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে।

এদিকে বেলা ৪টার দিকে লালমনিরহাট থেকে একটি উদ্ধারগামী ট্রেন ঘটনাস্থলে আসে। প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত বগিগুলোর সামনের একটি বগি উদ্ধার করে কাউনিয়া রেলওয়ে জংশনে নিয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় লাইনচ্যুত বগিগুলোকে উদ্ধার করতে পার্বতীপুর থেকে একটি উদ্ধার ট্রেন ঘটনাস্থলে আসে। উদ্ধার কাজের সময় রুহুল আমিন নামে এক রেলওয়ে কর্মী গুরুতর আহত হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্টেশন মাস্টার কার্যালয় সূত্র জানান, ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় সারাদেশের সাথে আন্ত:নগর রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, বুড়িমারি এক্সপ্রেস, মেইল ট্রেন দোলনচাঁপা, করতোয়া, পদ্মরাগ, রামসাগর, কমিউটার এবং নাইনটিন আপ ট্রেনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই রুটে এসব ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার সম্পূর্ণ এবং নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়ের আংশিক যাত্রীরা শিডিউল অনুযায়ী গন্তব্যে পৌঁছোতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট ডিভিশনের ব্যবস্থাপক আবু হেনা মুস্তফা আলম জানান, পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশনের আউটার এলাকায় মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় পদ্মরাগ ট্রেনটির ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় লালমনিরহাট ডিভিশনের পরিবহন ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি কেন দুর্ঘটনা ঘটলো সেটি তদন্ত করছেন। প্রাথমিকভাবে লাইনে ত্রুটি ছিল কিনা অথবা বগিতে ত্রুটি ছিল কিনা অথবা সিগন্যাল ত্রুটি ছিল কিনা এই তিনটিকে মুখ্য ধরে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি জানান, দুটি আন্তঃনগর ট্রেন বগুড়ায়, দুটি আন্তঃনগর ট্রেন রংপুরে, একটি লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে আটকা পড়েছিল। এছাড়াও রংপুর, লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রাম থেকে যাতায়াতকারী সব ধরনের মেইল এবং লোকাল ট্রেন বন্ধ ছিল।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলেই আছে ১ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার রেলপথ। যার অধিকাংশই মিটার গেজের এবং সব মিটার গেজগুলোর অবস্থা করুন।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, ঘটনার সাথে সাথেই উপজেলা প্রশাসন এখানে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে রেলওয়েকে সাথে নিয়ে। এই ঘটনার কঠোর তদন্ত হবে এবং এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনায় রেলওয়ে সঙ্গে সমন্বয় করে সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে যারই গাফিলতি থাকবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় হতাহত না হয় আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।

মন্তব্য করুন


Link copied