আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ● ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: দিনাজপুরে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ২       লালমনিরহাটে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত       রংপুরে জমজমাট গ্রীষ্মকালীন কবিতা উৎসব        দিনাজপুরে ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ড: আগুনে ভস্মীভূত চারটি যানবাহন       শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি      

 width=
 

দেশের মূল সমস্যা জামায়াত ও খালেদা জিয়া

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০১৩, বিকাল ০৫:২৯

স্বদেশ রয় : আশির দশকে একদিন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আবদুস সামাদ আজাদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, “আপনার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের এই পর্যায়ে এসে বাংলাদেশের মূল সমস্যাগুলো কি আপনি চিহ্নিত করেছেন? সেগুলো কি কি?” তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ সহজভাবে উত্তর দিলেন, বাংলাদেশের এই মুহূর্তে মূল সমস্যা তিনটি- ফ্লাড, আর্মি এ্যান্ড পপুলেশন। তাঁর ওই কথার সঙ্গে কোন দ্বিমত পোষণ করতে পারিনি। বরং ভাল লেগেছিল এই ভেবে যে, আমাদের বুদ্ধিজীবীরা যেমন পাকিস্তান আমলে আমাদের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের সমস্যা কি সেটা সহজ ভাষায় বোঝাতে পারেনি। বুঝিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সহজ ভাষায় কয়েকটি কথার ভেতর দিয়ে। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর সামাদ আজাদও বাংলাদেশের মূল সমস্যা তিনটি সেভাবে চিহ্নিত করলেন। আবদুস সামাদ আজাদ আজ পরলোকে। তবে তিনি নিশ্চয়ই ১৯৯৮-এর শেখ হাসিনা সরকারের বন্যা ম্যানেজমেন্ট কাজের সঙ্গী হিসেবে জেনে গেছেন, বাংলাদেশে বন্যা সমস্যার অনেক সমাধান হয়েছে। অন্তত ব্যবস্থাপনার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ এখন বন্যাকে মোকাবেলা করতে সমর্থ, যদি আওয়ামী লীগের মতো ভাল কোন সরকার ক্ষমতায় থাকে। এখন বাকি বন্যার পানি মোকাবেলা করা এবং পানি ম্যানেজমেন্ট করা। নদী ড্রেজিংসহ অন্য পথগুলো অবলম্বন করলেই সম্ভব হবে। জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজে আমরা শতভাগ সফল হয়নি। এর বড় কারণ, বিএনপির শাসন ও মৌলবাদ। তবে তার পরেও একটা সাফল্য এসেছে। অন্যদিকে গত পাঁচ বছরে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার যে নীতি নেয়া হয়েছে এই নীতি এগিয়ে চললে ও দেশে মৌলবাদ হ্রাস পেলে এ সমস্যাও আর মূল সমস্যা থাকবে না। বরং এখন অনেকখানি কমে গেছে। আর সামরিক শাসন ছিল এ দেশের একটি অন্যতম মূল সমস্যা। পাকিস্তান আমলে ভুগেছি ওই সামরিক শাসনে। এরপর স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ভেতর দিয়ে আবার ফিরে আসে সেই সামরিক শাসন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের সামরিক শাসন আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। দেশকে অনেক পেছনে ঠেলে দিয়েছে। সে প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে অনেক কিছু লিখতে হবে। কারণ, ওই ক্ষতি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক, মনোজাগতিকসহ অনেক, যা নিয়ে বিশাল গবেষণা করা যায়। অনেক বই লেখারও প্রয়োজন আছে। যাহোক এ বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে এ কলাম প্রসঙ্গান্তরে চলে যাবে এবং দীর্ঘ হবে। তাই বারান্তরে সে ইচ্ছা রেখে এখন মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। বাংলাদেশ নব্বইয়ের পর থেকে মোটামুটি প্রত্যক্ষ সামরিক শাসনের কবল থেকে বেরিয়ে এসেছে। সামরিক কালচার থেকে বেরুতে অনেক দেরি হবে। বলা যায়, আশির দশকে সব থেকে বড় যে তিন সমস্যা ছিল তা থেকে দেশ মোটামুটি বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু তার পরেও বাংলাদেশ স্থিতিশীলতা পাচ্ছে না। তাই এখন ভেবে দেখা দরকার এ মুহূর্তে বাংলাদেশের মূল সমস্যা কি কি? এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুত উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন মূল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ দীর্ঘ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ভেতরও ৬.২ ভাগ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এগিয়ে চলছে। যার হার চীন ও ভারতের থেকেও ভাল। সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া মার্কিন দক্ষিণ এশীয়বিষয়ক পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলে গেছেন, বাংলাদেশ রানা প্লাজা দুর্ঘটনার মতো একটি দুর্ঘটনা মোকাবেলা করে বিশ্বে নজির স্থাপন করেছে। তাই অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এ মুহূর্তে সমস্যা নেই। এমনকি শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্য অনেক। কোন সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে না সরকারের দিক থেকে। তার পরেও এই মুহূর্তে প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশে কি ঘটছে? এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজপথে কোন গাড়ি, বাস, অটোরিকশা নিরাপদ নয়, নিরাপদ নয় রেললাইন ও রেলগাড়ি। দেশের চার কোটি শিক্ষার্থী বিপাকে। তারা জানে না সময় মতো তাদের পরীক্ষা হবে কি না। তারা জানে না পরীক্ষা দিয়ে তারা নিরাপদে ফিরতে পারবে কি না। গত বিশ দিনে দেশে রেল, বাস, অটোরিকশা, গাড়ির সব যাত্রী মিলে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমজীবী মানুষ। এর ভেতর পনেরোজনের বেশি ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আরও অনেকে এখনও হাসপাতালের বেডে। প্রতিদিন তাঁদের থেকে এক-দুইজন করে ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে। আর এই আগুন কোন আকস্মিক আগুন নয়। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ও তাঁর নির্দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদল-যুব দলের কর্মীরা এই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করছে। কত নির্মমভাবে তারা হত্যা করছে তা শরীরের ৯৫ ভাগ পুড়ে যাওয়া মনির মারা যাবার আগে যা বলে গেছে তা এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। গাড়িতে বসে থাকা কিশোর মনিরের গায়ে গানপাউডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়ার পরে কিশোর মনির যখন পুড়ে যাচ্ছিল তখন জামায়াত-বিএনপির ছেলেরা হাসছিল, উল্লাস করছিল। এমনিভাবে যাঁরা সুমীর পোড়া দেহ দেখেছেন টেলিভিশনের পর্দায় ও পত্রিকার পাতায়, যাঁরা ৯০ ভাগ পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া মন্টু পালের ছবি দেখেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই আর বলার প্রয়োজন নেই বেগম জিয়ার নেতৃত্বে শিবির কী করছে। শুধু এই নয়, গত দেড় বছরে তারা দেশের কত সম্পদ নষ্ট করেছে, কত মানুষকে হত্যা করেছে। এক কোটি হিন্দু এবং কয়েক লাখ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর জন্য একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে তারা। গত দেড় বছর ধরে একের পর এক তাদের বাড়িঘর, মন্দির, নারী-শিশু সবার ওপর আক্রমণ করেছে। হত্যা ও ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়েছে। বেগম জিয়া বার বার বলছেন, দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট হয়েছে বলে তিনি এ সব করছেন। রাজনৈতিক সঙ্কট তাঁর কাছে হয়ত মনে হচ্ছে, সকলের কাছে নয়। তার পরেও যদি রাজনৈতিক সঙ্কট হয় তাহলে সেটা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করুক। কিন্তু এভাবে একের পর এক মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বলে তাকে হত্যা করে, তার বাড়িঘর, উপাসনালয় ধ্বংস করে এটা কোন ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা? রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করার নামে বাস্তবে তিনি সাধারণ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করছেন, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করছেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করছেন। ১০ হাজার ছেলে এবার ও-লেভেল পরীক্ষা দিতে পারেনি। বেগম জিয়া পারবেন তাদের একটি বছর ফিরিয়ে দিতে? একটি ছেলে ও-লেভেল পরীক্ষা দেবার জন্য কত রাত জেগে বই পড়ে, দিনের কতটা সময় বই পড়ে সেই পরিশ্রম কি বেগম জিয়া বুঝবেন? তিনি কি বুঝবেন ওই ছেলেমেয়েদের রাত জেগে অঙ্ক করা কোন মতেই রাত জেগে হিন্দী সিরিয়াল দেখার মতো নয়? তাছাড়া গত দেড় বছরে তিনি ও তাঁর নেতৃত্বে জামায়াত-শিবির দেশের যে ক্ষতি করেছে তার পরিমাণ কত? আর এই ক্ষতির মূল কারণ যতই এখন বলা হোক না কেন, রাজনৈতিক সঙ্কট, বাস্তবে মূল উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো, জামায়াতে ইসলামীকে রক্ষা করা। জামায়াতে ইসলামী ও যুদ্ধাপরাধীরা যে বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা সেটা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীপুত্র ফারুক মওদুদীও বলে গেছেন। আর এ দেশের মানুষকে এ সত্য বুঝতে হবে যে, জামায়াতে ইসলামীর মূল উদ্দেশ্য ১৯৭১-এ তারা যে পরাজিত হয়েছিল তার প্রতিশোধ নেয়া। বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে পাকিস্তানের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং এরা যদি বেগম জিয়ার নেতৃত্বে মানুষকে প্রতারিত করে ক্ষমতায় যেতে পারে তাহলে তারা এবার সে কাজই করবে। তারা পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন না করতে পারলেও তার কাছাকাছি কিছু একটা করবে। তাছাড়া বাংলাদেশটা আবার ২০০১ থেকে ২০০৬ অবধি যেমন আন্তর্জাতিক মৌলবাদের একটি অভয় অরণ্য হয়ে উঠেছিল, তেমনি আবার এটা আন্তর্জাতিক মৌলবাদ ও অস্ত্র চোরাচালানের একটি বড় অভয় অরণ্য হবে। অন্যদিকে আরও একটা বিষয় মনে রাখা দরকার- বেগম জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে যত সাধারণ সৈনিককে হত্যা করেছিলেন, এ কাজ আর কোন সরকার করেনি। তেমনি বেগম জিয়া যখনই ক্ষমতায় থাকুন আর বাইরে থাকুন দেখা যাচ্ছে তাঁর নেতৃত্বে নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি ১৭ নিরীহ কৃষককে হত্যা করেছিলেন। ২০০১-এ ক্ষমতায় আসার পরে সংখ্যালঘু, আওয়ামী লীগ কর্মী- সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ হত্যা করা হয়। নয় দশ লাখ হিন্দু দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আর এখন তিনি ক্ষমতায় নেই তার পরেও প্রতিদিন তাঁর নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। জামায়াতেরও একই কাজ- মানুষ হত্যা করা। তারা সেই ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য দেশের প্রগতিশীল মানুষ হত্যা করে আসছে। এ কারণে খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামী যেমন একই সূত্রে বাঁধা তেমনি তারা দেশেরও শত্রু। তাই এ কথা বলা যায়, বাংলাদেশ এখন অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে, বিদ্যুতে এগিয়ে চলেছে, শিক্ষা ও খাদ্যে এগিয়ে চলেছে। এ সব কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন সমস্যা নেই। আশির দশকের সেই তিন মূল সমস্যাও বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মূল সমস্যা এখন খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশ যতদিন না খালেদা জিয়ার হাত থেকে মুক্ত হবে এবং জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করতে না পারবে, ততদিন বাংলাদেশ সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারবে না। ডিনিউজ

মন্তব্য করুন


 

Link copied