আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ৫ আগস্ট ২০২৫ ● ২১ শ্রাবণ ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ৫ আগস্ট ২০২৫
পাঁচ দিনে গোপন করা হয় ৩২২ মৃত্যুর তথ্য

চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান
পাঁচ দিনে গোপন করা হয় ৩২২ মৃত্যুর তথ্য

রাস্তায় নেমে এসেছিলেন বাবা-মাও

চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান
রাস্তায় নেমে এসেছিলেন বাবা-মাও

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ আজ, দিনব্যাপী যত আয়োজন

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ আজ, দিনব্যাপী যত আয়োজন

গণঅভ্যুত্থান দিবস উদযাপনে প্রস্তুত মঞ্চ

গণঅভ্যুত্থান দিবস উদযাপনে প্রস্তুত মঞ্চ

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি আজ

জুলাই তুমি স্বাধীন সকাল তুমিই বাংলাদেশ

মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট ২০২৫, রাত ০২:১৫

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: আজ রক্তে ভেজা বিপ্লবের দিন। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। জাতির মৃত্যুঞ্জয়ী সন্তানদের স্যালুট জানানোর দিন। সেই ৫ আগস্ট আজ। জনরোষ থেকে বাঁচতে ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা যেদিন দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে যে গণ-অভ্যুত্থানের কথা মানুষ কোনোদিন ভুলবে না। কারও ভাষায় চব্বিশের বর্ষা বিপ্লব। যে বিপ্লবের আইকন হিসাবে দুহাত প্রসারিত করা হুডখোলা বুকে বিপ্লবী আবু সাঈদের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। যে মহান শহীদি মৃত্যুর দিন নতুন এক ইতিহাসের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সে মৃত্যু বেঁচে থাকবে চিরকাল। দেশের জন্য জীবনদানের সেই গৌরবময় জীবনের মৃত্যু হবে না কোনোদিন।

স্বৈরশাসকদের রুখে দিতে বিপ্লবীদের মরণজয়ী মৃত্যু আমাদের জাগাবে বারবার। শত হতাশার ঘুম থেকে ফের জাগাবে মুগ্ধের সেই ভুবনজয়ী চির অমলিন হাসি। আমাদের রক্তে বারবার কাঁপন ধরাবে স্কুলপড়ুয়া আনাসের যুদ্ধে যাওয়ার সেই চিঠি। মাকে চিঠি লিখে যে আনাস আর ঘরে ফেরেনি। নাম লিখিয়েছে শহীদি কাফেলায়। শত্রুর তপ্ত বুলেটে সিক্ত আর গরম রক্তের গন্ধে সয়লাব অহংকারের ছত্রিশে জুলাই। আবার ঝলসে ওঠার প্রত্যয়দীপ্ত শপথে প্রস্তুত আমাদের তারুণ্য। এতসব গৌরবমাখা সেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলো আজ।

গত বছরের এই দিনে রক্তস্নাত জুলাই বিপ্লব বিজয়ীর বেশে ধরা দেয় কোটি কোটি জনতার মুষ্টিবদ্ধ হাতে, উদ্বেল-উচ্ছ্বাসে। এর মধ্যে পার হলো একটি বছর। আশা-নিরাশার শত স্বপ্নভঙ্গের ৩৬৫ দিন। এই গণ-অভ্যুত্থান ঘিরে জাতির সামনে এখন অনেক প্রশ্ন। কী চেয়েছিলাম আমরা, আর কী পেলাম। একজন মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তার জীবন। আর সেই জীবন তারা বীরের বেশে দেশের মানুষের জন্য অকাতরে বিলিয়ে গেছেন। এক দুজন নন, প্রায় দেড় হাজার বিপ্লবী রক্তাক্ষরে লিখে গেছেন তাদের নাম। আহত হয়েছেন হাজার হাজার জুলাই যোদ্ধা। যাদের অনেকে চিরদিনের জন্য অন্ধ ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন হাসিমুখে।

এখন তাই সবার সামনে একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সেটি হলো-জুলাই যোদ্ধারা যে ফ্যাসিবাদ থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন, সেই ঘেরাটোপ থেকে আমরা আদৌ কি মুক্ত হতে পেরেছি? ভবিষ্যতে কি সেই মুক্তির সোপান তৈরি হচ্ছে? না সেই পুরোনো বন্দোবস্তের পথেই হাঁটছে প্রিয় বাংলাদেশ।

এক জুলাইয়ে যারা রাজপথে ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, তারা কি এখন ক্ষমতার রাজনীতির প্রতিযোগিতায় নেমে একে অপরকে নিশানা বানাচ্ছেন। এর ফলে গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিরা কি স্বাধীনতা ও মানবতার ‘কমন শত্রুকে’ ভুলে গেল। জাতির বুকের ওপর ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দেওয়া আওয়ামী দুঃশাসনকে ফিরিয়ে আনতে আমরা কি ‘কঠিন সময় এবং শত্রুর’ সঙ্গে গোপনে আপস ও আঁতাতের নোংরা রাজনীতি করছি। এসব প্রশ্ন যতই কঠিন কিংবা হোক না নিমর্ম-তবু আমাদের প্রতিনিয়ত করতেই হবে বৈকি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের সবার জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল পাখি হাসিমুখে জীবন দিয়ে নতুন এক ইতিহাস লিখে গেছে দেওয়ালে দেওয়ালে।

আমরা কি এখন জুলাই যোদ্ধাদের মাত্র কিছু অংশের বেইমানি আর খারাপ কাজের দৃষ্টান্ত দেখে হতাশ? সংস্কারের নামে জনগণের আসল বন্দোবস্ত বাদ দিয়ে আমরা কি শুধু বারোটি মাস হেলা-অবহেলায় হারিয়ে ফেললাম? না আমরা যা চিবুতে পারব না জেনেও একসঙ্গে অনেক কিছু গিলে ফেলার অপচেষ্টা করে যাচ্ছি। এসব প্রশ্নের সব উত্তর হয়তো এখনো আমরা জানি না। কিন্তু আমাদের প্রত্যেককে অক্ষরে অক্ষরে মনে রাখতে হবে-চব্বিশের বর্ষা বিপ্লব এ দেশের কোটি কোটি দেশপ্রেমিক মানুষের বুকের মধ্যে সাহসের যে আগুন জালিয়ে দিয়েছে, তা আর কোনোদিন নিভে যাবে না। নেভানোও যাবে না। সীমাহীন বৈষম্যকবলিত অত্যাচারিত ও শোষিত মানুষ রাজপথে শোষকের বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে যে অমিত সাহসের বীজ বুনে গিয়েছে, তা কেউ আর রুদ্ধ করতে পারবে না কোনোদিন। সাধারণ মানুষ এখন শিখে গেছে কীভাবে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে হয়, কীভাবে শোষকের টুঁটি চেপে ধরতে হয়। বাংলার ঘরে ঘরে এখন কোটি কোটি বিপ্লবী। যে তরুণ মেধাবী যুবক একসময় গভীর হতাশা থেকে শুধু দেশ ছেড়ে যেতে ব্যস্ত ছিল, সে এখন শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক। তারা এখন দেশ ছেড়ে আর যাবে না, দেশকে আরও বেশি করে ভালোবাসতে চায় নতুন এক প্রজন্ম। ভোট দিতে চায়, বানাতে চায় দেশ পরিচালনার আইনি সেবক।

ফলে গেল এক বছরে আমাদের অনেক না পাওয়ার বেদনা থাকতে পারে, জমতে পারে নানা যৌক্তিক প্রশ্ন ও হতাশা। তবু নতুন এক বন্দোবস্তের পথে দেশ এগিয়ে যাক। দূর হোক আধিপত্যবাদ। বিপ্লবের চেতনায় জেগে উঠুক কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র, প্রতিষ্ঠিত হোক নির্ভেজাল চিরস্থায়ী ভোট ও ভাতের অধিকার। অকল্যাণের অশুভ পাপ থেকে মুক্ত হয়ে পবিত্র হোক সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। জয় হোক নিপীড়িত মানুষের, জয় হোক জনতার। এই কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে যেতে হবে এখনো বহুদূর। তবে ক্লান্তিহীন এ পথের যাত্রা সহজ ও মসৃণ করতে এখন সবার আগে বেশি প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর একটি নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন। সব বাধা ও ষড়যন্ত্র দূর করতে প্রয়োজন শুধু জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে যুগান্তরের কাছে এভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে জুলাই যোদ্ধা, বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহলের অনেকে।

মন্তব্য করুন


Link copied