আর্কাইভ  বুধবার ● ৫ নভেম্বর ২০২৫ ● ২১ কার্তিক ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ৫ নভেম্বর ২০২৫
তিস্তা ব্যারেজ থেকে দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘা

তিস্তা ব্যারেজ থেকে দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘা

৭ পদক্ষেপেই বদলে ফেলুন ‘ব্যর্থতা’র গল্প

৭ পদক্ষেপেই বদলে ফেলুন ‘ব্যর্থতা’র গল্প

আলু এখন কৃষকের বোঝা

আলু এখন কৃষকের বোঝা

সাক্ষী না আসায় ফের পেছাল আবু সাঈদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

সাক্ষী না আসায় ফের পেছাল আবু সাঈদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

অতিথি শেখ হাসিনাকে ভারত কি ধীরে ধীরে 'আনলক' করতে দিচ্ছে?

বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, রাত ১২:০০

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: প্রায় ন'মাস আগেকার কথা। ঢাকায় শেখ মুজিবের বাসভবন ৩২ নম্বর ধানমন্ডি ভাঙচুরের পর বাংলাদেশ সরকার একটি বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করে, ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাই সোশ্যাল মিডিয়াতে লাগাতার মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছেন এবং ভারতের উচিত তার মুখে রাশ টেনে ধরা। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে জানানো হয় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদও।

ঠিক তার পর দিনই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাল্টা বিবৃতি দিয়ে দাবি করে, শেখ হাসিনা যা বলছেন তা তিনি 'ব্যক্তি শেখ হাসিনা হিসেবে', মানে তার 'ইন্ডিভিজুয়াল ক্যাপাসিটি'তে বলছেন – এবং ভারত সরকারের সেখানে কোনো ভূমিকাই নেই।

ভারতকে 'নেতিবাচক' দৃষ্টিতে তুলে ধরলে বা বাংলাদেশের 'অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ব্যর্থতা'র জন্য ভারতকে দায়ী করলে তা যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য সহায়ক হবে না, মনে করিয়ে দেওয়া হয় সেটাও। যথারীতি পাল্টা তলব করা হয় দিল্লিতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকেও।

আসলে গত সোয়া বছর ধরে ভারতের আশ্রয় ও আতিথেয়তায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আদৌ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে যে পরিমাণ কূটনৈতিক তিক্ততা তৈরি হয়েছে তা এক কথায় নজিরবিহীন।

এমনকী বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তাও হয়েছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে।

এখানে বাংলাদেশের বক্তব্য হল, জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে ভাল কথা – কিন্তু দু'দেশের মধ্যেকার বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে ঢাকা তাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য হস্তান্তরের দাবিও জানিয়েছে।

এখন সেটার কোনো নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই যদি ভারত তাকে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেয় এবং তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে দলীয় নেতা-কর্মীদের উসকানি দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চান তাহলে তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

ততদিনে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অনলাইনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নিয়মিতই ভাষণ দিতে শুরু করেছেন। কখনো সেটা রেকর্ডেড, কখনো আবার 'লাইভ'।

'মুখ খোলা' নিয়ে মুখোমুখি দিল্লি ও ঢাকা

এই পটভূমিতে গত এপ্রিলে ব্যাংককে বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে যখন মুহাম্মদ ইউনূস যখন তাদের যুক্তি নরেন্দ্র মোদীর কাছে তুলে ধরেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জবাব ছিল – আজকের এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কারও মুখে লাগাম পরানোই সম্ভব নয়, এবং শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই ঘটছে।

আসলে শেখ হাসিনাকে মুখ খুলতে দেওযার প্রশ্নে ভারতের পাল্টা বক্তব্য হল, একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে ও সুরক্ষার প্রয়োজনে তাকে এ দেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে ঠিকই – কিন্তু তিনি কোনও 'রাজনৈতিক বন্দী' নন।

ভারতে রাজনৈতিক বন্দীদের মোবাইল ফোন বা অনলাইন অ্যাক্সেস পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক বিধিনিষেধ থাকে – কিন্তু শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়, তা ছাড়া তার খবরের কাগজ বা টিভি চ্যানেল অবাধে সার্ফ করারও সুযোগ আছে। এমনকী তার ব্যক্তিগত ফোনও প্রথম দিন থেকে তার কাছেই আছে।

এই পাল্টাপাল্টি যুক্তির মধ্যেই গত ২৯ অক্টোবর (বুধবার) বিশ্বের তিনটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া আউটলেটে (রয়টার্স, এএফপি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট) একযোগে শেখ হাসিনার তিন তিনটি আলাদা সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে।

যদিও সেই 'সাক্ষাৎকার'গুলো লিখিত বা ইমেইল প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে করা, তারপরও বিষয়টি যে শেখ হাসিনার 'হোস্ট' ভারত সরকারের সম্মতিতেই হয়েছে তা নিয়ে দিল্লিতে পর্যবেক্ষকদের কোনও সন্দেহই নেই।

মাসতিনেক আগে ভারতে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গেও শেখ হাসিনার সশরীরে সাক্ষাত পর্যন্ত হয়েছে, আর যথারীতি সেটাও ভারত সরকারের অনুমোদন ছাড়া হয়নি। দিল্লিতে এসে সম্প্রতি মায়ের সঙ্গে দেখা করে গেছেন শেখ হাসিনার আমেরিকা-প্রবাসী পুত্র সজীব ওয়াজেদও।

এই ঘটনাক্রম দেখে বিশ্লেষকরা অনেকেই ধারণা করছেন, একটা খুব বিশেষ পরিস্থিতিতে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হওয়া শেখ হাসিনার ওপর যে সব বিধিনিষেধ শুরুতে আরোপিত হয়েছিল তার অনেকগুলোই ধীরে ধীরে শিথিল করা হচ্ছে। এটাকেই অনেকে 'আনলকিং' বলে বর্ণনা করছেন।

কিন্তু কেন এখন এই 'আনলকিং'-এর প্রক্রিয়া? এর মধ্যে দিয়ে কী বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে?

আগামী দিনে কি তাকে 'ইন-পার্সন' বা সশরীরে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার দিতেও দেখা যাবে? এই প্রতিবেদন উত্তর খুঁজেছে সে সব প্রশ্নেরই।

খবর-বিবিসি বাংলা

মন্তব্য করুন


Link copied