উত্তর বাংলা ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে ‘কটূক্তি’ করে এবং ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে সম্প্রতি আলোচনায় আসেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি।
বরখাস্ত হওয়া ঊর্মির পরিচয় খুঁজে দেখেছেন উত্তর বাংলা ডটকমের এই প্রতিবেদক।
তিনি জেনেছেন, ঊর্মি ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে।
ঊর্মির বাবা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। তবে বর্তমানে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন।
ঊর্মির মা নাসরিন জাহান বর্তমানে জেলার মুক্তাগাছা থানায় হাজী কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে তারা ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের পেছনে কাশর জেল রোড এলাকায় নিজ বাসায় থাকেন। সেখানে গিয়ে তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি।
পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ঊর্মি ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ভর্তি হন।
সেখান থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে ২০২২ সালে ঊর্মি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। ছোট ভাই জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। এর বেশি জানা নেই, বলেন ওই ইউপি সদস্য।
সম্প্রতি ঊর্মির দুটি ফেসবুক পোস্ট আলোচনায় আসে। একটিতে তিনি লেখেন, ‘সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়। ’
আরেকটি পোস্টে আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে ঊর্মি লেখেন, ‘মানে কত বড় বোকার স্বর্গে আছি এইটা শুধু চিন্তা করি। আবু সাইদ! বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, সন্ত্রাসী একটা ছেলে যে কি না বিশৃঙ্খলা করতে গিয়ে নিজের দলের লোকের হাতেই মারা পড়ল সে নাকি শহীদ! এটাও এখন মানা লাগবে!’
তিনি আরও লেখেন, ‘আর এই আইন ভঙ্গকারী সন্ত্রাসীর জন্য দেশের অথর্ব অতি প্রগতিশীল সমাজ কেঁদে কেটে বুক ভাসিয়েছে। তখন যাকেই বলার চেষ্টা করেছি পুরো ঘটনা তদন্তসাপেক্ষ, সেই দশটা কথা শুনিয়ে দিয়েছে। প্রশাসনে থেকে সরকারের দালাল হয়ে গিয়েছি এ কথা বুঝানোর তো বাকিই রাখনি। ’
ঊর্মি লেখেন, ‘এই যে একটা সন্ত্রাসীর মৃত্যুকে অজুহাত বানিয়ে কত নিরীহ পুলিশ ভাইদের হত্যা করা হলো, তার দায়ভার কি এই অথর্ব সমাজ নেবে? এই ছেলের জন্য প্রধান উপদেষ্টা তার দলবল নিয়ে চলে এলেন রংপুর। লালমনিরহাট থেকে উপদেষ্টা দলের জন্য আবার পাঠাতে হয়েছে গাড়ি। রংপুরের বাকি সাত জেলা থেকেও গাড়ি পাঠাতে হয়েছে। ’
আবু সাঈদের বাড়িতে যাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে তিনি আরও লেখেন, ‘এই আহাম্মকি ভ্রমণের জন্য এত বড় গাড়িবহর পুরো বিভাগ থেকে যে গেল তার তেল খরচ কে দিয়েছে? যাই হোক, ভিডিওটা দেখুন। ভালো মতো দেখুন আর মুখস্থ করুন। আর কী বলব!’
ঊর্মির পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর মধ্যেই রোববার তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। এরপর সোমবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি পোস্ট দিয়েছি এটিই যথেষ্ট। অনলি মি করেছি, বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এ বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
এদিকে আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়া এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে ‘কটূক্তি’ করার প্রতিবাদে সোমবার মানববন্ধন করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
উত্তর বাংলা/ স.ম