নিউজ ডেস্ক: ৩৩ বছর পর দশমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। এতে ইসলামী ছাত্রশিবির জাবি শাখা সমর্থিত প্যানেল বেশিরভাগ পদে বিজয়ী হলেও লজ্জাজনক হার দেখতে হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে।
কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫ পদের বিপরীতে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ২০টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) দুটি এবং ভিপি পদসহ স্বতন্ত্র থেকে তিনজন জয়লাভ করেন। সেখানে একটি পদ তো নয়, বরং বেশিরভাগ পদে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল প্রার্থীর অবস্থান তৃতীয়, চতুর্থ কিংবা তারও পরে।
শনিবার (১১সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় ভোট গ্রহণের দুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জাকসু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, জাবি ছাত্রদলের মধ্যে থাকা নিজস্ব কোন্দল ও সিনিয়রদের ‘মাই ম্যান রাজনীতি’ এই হারের কারণ। এছাড়া হারের পেছনে গ্রুপিং, অনিয়ম এবং শাখার শীর্ষ নেতাদের জয়ের প্রতি অনিচ্ছাকে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটির বহিষ্কৃত এক নেতা।
বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা আল ইমরান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল অন্তত দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করেছিল। কিন্তু জাকসুতে সংগঠিত প্রস্তুতি না নেওয়ায় ভরাডুবি হয়েছে। অপরদিকে শিবিরের প্রার্থীরা ক্যাম্পাসে তেমন পরিচিত না হলেও দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ও তথ্য সংগ্রহের ফলে জয়ী হতে সক্ষম হয়েছেন।’
তার অভিযোগ, সিনিয়র নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান শিক্ষার্থীদের থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রার্থী নির্বাচনে চলমান ব্যাচগুলোর মতামত গ্রহণ করেননি। এতে ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন।
ইমরান শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, শীর্ষ নেতৃত্বের একটি অংশ আসলে চাইছিলেন না কেউ নির্বাচিত হোক, যাতে তাদের নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘস্থায়ী হয়। শিবির ও অন্যান্য সংগঠন কেন ছাত্রদলের তুলনায় খারাপ অপশন, তা ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে পারেনি ছাত্রদল। ফলে তারা ক্যাম্পাসে ইতিবাচক বার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। গ্রুপিং, ভেতরের দ্বন্দ্ব এবং বরাদ্দ ব্যবহারে অনিয়মও ছাত্রদলের ভরাডুবিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ছাত্রদল প্যানেল থেকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী আবিদুর রহমান নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ঘোষণা করা বিতর্কিত হল কমিটিকে পরাজয়ের কারণ বলে উল্লেখ্য করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বিতর্কিত হল কমটি ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এছাড়া প্যানেল ঘোষণা করা হয় শেষ মুহূর্তে। যে কারণে প্রচারণায় পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়নি।যার প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে।’
ছাত্রদলের পরাজয়ের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী রাউফু রহমান বলেন, ‘হল কমিটি দেওয়া নিয়ে ছাত্রদলের নিজেদের মধ্যে কোন্দল লাগে এবং বারবার ক্যাম্পাসে ঝামেলা করে। ৩৯-৪০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এখনো তাদের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে, যা তাদের ক্ষমতালোভী দেখায়। ছাত্রলীগের মতো রাজনীতি করায় তারা শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পারেননি।’
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রদলের চেয়ে ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বেশি কাজ করেছে। ছাত্রদল সেই জায়গা থেকে ব্যর্থ। জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থীকে না রাখায় তাদের এই পরাজয়।
এ বিষয়ে জানতে জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবরের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক নির্বাচনে ছাত্রদলের পরাজয়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।