আর্কাইভ  শনিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৫

জাপায় এবার আলোচনা ‘লাঙ্গল’ বরাদ্দের এখতিয়ার নিয়ে

সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, দুপুর ০২:৪৯

Advertisement

ডেস্ক: চেয়ারম্যান হিসেবে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) পরিচালনার ক্ষেত্রে জি এম কাদেরের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় দলটির অভ্যন্তরে নতুন নতুন সংকটের জন্ম হচ্ছে। এখন জোর আলোচনা চলছে কাউকে দলের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ করা না করা নিয়ে। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের পক্ষে থাকা কয়েক নেতা চান তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করতে। এর মূল লক্ষ্য—বিএনপির এমপিদের সংসদ থেকে পদত্যাগের ফলে শূন্য হওয়া আসনগুলোতে উপনির্বাচনে রওশনপন্থিদের মনোনয়ন এবং দলীয় নির্বাচনি প্রতীক ‘লাঙ্গল’ বরাদ্দ পাওয়া। তবে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রওশন এরশাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার কিংবা ‘লাঙ্গল’ বরাদ্দ দেওয়ার কোনো সুযোগই নেই।

জাপার একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, আদালতের রায় অনুযায়ী জি এম কাদের আপাতত চেয়ারম্যান হিসেবে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে দল পরিচালনা করবে। জি এম কাদেরের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আগামী ৯ জানুয়ারি বিচারিক আদালতে শুনানি রয়েছে। দল আপাতত আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবে। আদালতের সিদ্ধান্ত না জানা পর্যন্ত কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। 

এ বিষয়ে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘১ নভেম্বর থেকেই জি এম কাদেরের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তখন থেকে দল যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে, আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্তও সেভাবেই পরিচালিত হবে। তাছাড়া এখন বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতোও তেমন কিছু নেই।’

চুন্নু বলেন, সংসদের শূন্য আসনগুলোতে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রশ্ন আসবে। তখনো যদি দলীয় চেয়ারম্যানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকে, সেক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টির মহাসচিব দল মনোনীত প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের চিঠি দেবেন।

জি এম কাদেরের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই রংপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মনোনয়ন দিয়েছে জাপা। সেক্ষেত্রেও মনোনয়ন দেওয়ার ফরমে স্বাক্ষর করেছেন পার্টির মহাসচিব চুন্নু। পরে দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ বরাদ্দের চিঠিও দিয়েছেন তিনি। যেটির ভিত্তিতে ‘লাঙ্গল’ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোস্তফা।

অবশ্য, নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার আগে ওয়েস্টিন হোটেলে গিয়ে রওশনের সঙ্গেও দেখা করেন মোস্তফা। তখন রওশনও তাকে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন জানিয়ে একটি চিঠি দেন। রওশন সেই চিঠি মোস্তফার হাতে তুলে দিচ্ছেন—এমন একটি ছবি প্রকাশ করে রওশনপন্থিরা প্রচারণা চালাতে থাকেন যে, রওশনই লাঙ্গল বরাদ্দের চিঠি দিয়েছেন। তবে বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে মোস্তফা বলেন, ‘ম্যাডামও আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে প্রতীক বরাদ্দের চিঠি দিয়েছেন পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সেটিই আমি নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছি।

সামগ্রিক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে আজ সোমবার জাপার জরুরি প্রেসিডিয়াম বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে আসন্ন উপনির্বাচন এবং দল পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা হবে। রওশনপন্থিদের একাধিকজন সঙ্গে আলাপকালে জানান, প্রেসিডিয়াম বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—সেটি দেখার পর তারা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।

জি এম কাদেরের ওপর নিম্ন আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বুধবার আপিল বিভাগেও বহাল থাকায় সেদিন রাতেই তড়িঘড়ি করে এবং সাংগঠনিক কোনো নিয়ম না মেনে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তার মুখপাত্র দাবিকারী কাজী মামুনুর রশীদ।

শনিবার রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে পার্টির সম্পাদকমণ্ডলী, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের এবং বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যৌথসভায় মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, জাপায় কোনো বিভেদ নেই। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাপা ঐক্যবদ্ধ আছে।

এদিকে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার গুলশানে আলোচনাসভার আয়োজন করেন। সেখানে ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া বক্তব্যে রওশন বলেছেন, জাপা সবসময় নির্বাচনমুখী। সে কারণে দেশের সব ক্রান্তিকালেও জাপা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, আগামীতেও সব নির্বাচনে জাপা অংশ নেবে। নেতাকর্মীদের সব বিভ্রান্তি ও ভেদাভেদ ভুলে দলীয় ঐক্য বজায় রেখে পার্টিকে শক্তিশালী করার আহ্বানও জানান রওশন। খবর-দৈনিক ইত্তেফাক

মন্তব্য করুন


Link copied