শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর: " ঠান্ডায় হাত-পা ককড়া লাগি আইছে বাপ। খুবই জার করেছে। তারপরও কামত বেইর হবা হছে। কী করিমো পেট খায়! "
এমনি প্রলাপ দিনাজপুরে মানুষ বেচার হাট খ্যাত শহরের ষষ্টিতলা শ্রমবাজারে কাজের সন্ধানে অপেক্ষামান ষাটোর্ধ বয়সের আজাহার আলীর।
উত্তর হিমালয় পাদদেশ থেকে বয়ে আসা হিমশীতল বাতাস ও কুয়াশা আর শীতের তীব্রতায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুণ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে দিনাজপুরে মানুষ বেচার হাট খ্যাত শহরের ষষ্টিতলা শ্রমবাজারে কাজের সন্ধানে অপেক্ষামান ষাটোর্ধ বয়সের আজাহার আলী শুধু নয়,অনেক শ্রমিকের মুখে বেরিয়ে এসেছে একই কথা শীতের কারণে বিপর্যস্ত তাদের জীবন। গরম কাপড়ের অভাবে অনেকে নিদারুণ কষ্ট অনুভব করছেন। নেই কাজ-কর্ম। কাজ না পেয়ে সকাল সাড়ে ১০ টাও অনেকেই বসে ছিলেন সেখানে।
সোমবার (আজ) সকাল ৯'টা দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।একই সময়ে বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ।ফলে শীতের অনুভূতি আরও বেড়েছে। অনেক স্থানে দুপুর ১২ টার আগে দেখা মিলছে না সূর্যের মুখ।
'টানা ৩/৪ দিন ধরে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার দাপটে জবুথবু হয়ে পড়েছে জেলার মানুষ। সন্ধ্যার পর থেকেই শীতের তীব্রতা আরও বেড়ে যাচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সন্ধ্যার পরে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।
ছিন্নমূল ও গ্রামীণ এলাকার মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। কনকনে ঠাণ্ডার কারণে মাঠে কৃষিকাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই বাড়ির আঙিনা, ফুটপাত ও চায়ের দোকানের পাশে আগুন পোহাতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে শীতের কারণে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও। শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসকরা এ সময় গরম কাপড় পরা, গরম খাবার খাওয়া এবং বেশি করে শাকসবজি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঘন কুয়াশা ও শীতল বাতাসের কারণে সকাল থেকেই দিনাজপুরে শীতের প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ, দিনমজুর, শিশু ও বয়স্করা বেশি কষ্টে পড়েছেন। অনেককে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। শীতের কারণে সকালবেলা স্বাভাবিক জনজীবনেও কিছুটা স্থবিরতা নেমে এসেছে।
দিনাজপুর জেলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে শীতল উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় তাপমাত্রা কমে গেছে। এমাসের ২৮ তারিখ থেকে শীতের তীব্রতা আরো বাড়বে। মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাবে জেলার উপর দিয়ে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।