বিশেষ প্রতিনিধি॥ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলার জামিন নিতে এসে আদালত চত্বরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার(২০ জুলাই) বিকাল ৩টার দিকে এ ঘটনায় ওই দুই পক্ষের অভিযোগও পাল্টাপাল্টি।
কামারপুকুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী সভাপতি আনোয়ার হাসেন এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিকো আহমেদের পক্ষের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আহত হওয়ার দাবি করেছেন। অপরদিকে জিকো আহমেদের দাবি তিনি ওই সময় মামলার হাজিরা দিতে আদালতের দো-তলায় অবস্থান করছিলেন।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার(২০ জুলাই) দুপুরে আদালত চত্বরে হাতাহাতির ওই ঘটনা ঘটে। এসময় উপস্থিত লোকজন উভয় পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। পরে জানাতে পারেন ওই দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ব জের এবং পাল্টাপাল্টি মামলা রয়েছে। উভয় পক্ষ বৃহস্পতিবার জামিনের জন্য আদতালতে এসেছিলেন।
এবিষয়ে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সাধারণ সম্পাদক ও সে সময়ের ইউপি চেয়ারম্যান জিকো আহমেদ। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এসময় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাঁকে সভাপতির পদ থেকে বহিস্কার করে দল।
এ অবস্থায় গত ১২ জুলাই বিকালে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পুরাতন সদস্য নবায়ন উপলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি সভা আহবান করা হয়। কামারপুকুর বাজারে দলীয় কার্যালয়ে ওই সভায় উপস্থিত হয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সহ ১০ থেকে ১৫ জন। তার এমন আগমনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুর রশিদসহ আটজন নেতা আহত হন। আহতরা সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনার পর গত ১৫ জুলাই আব্দুর রশিদ বাদি হয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনসহ ১৬ জনের নামে সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে একই ঘটনায় আনোয়ার হোসেনের প থেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুল মতিন বাদি হয়ে থানায় অপর একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কামারপুকুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জিকো আহমেদসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়।
পাল্টাপাল্টি এমন মামলায় বুধবার (১৯ জুলাই) সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মিমাংসায় বসেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু কোন সুরাহায় পৌঁছা সম্ভব হয়নি। ফলে উভয় পক্ষ বৃহস্পতিবার(২০ জুলাই) জামিনের জন্য আদালতে যান। এ সময় তাদের মধ্যে আদালত চত্বরে আবারও হাতাহাতি ঘটনা ঘটে।
এবিষয়ে কামারপুকুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিকো আহমেদ ও তার ছোট ভাই জসি আহমেদের নেতৃত্বে আদালত চত্বরে আমার ওপর হামলা করা হয়। হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ায় আদালতে হাজিরা দেওয়া সম্ভব হয়নি’।
অপরদিকে কামারপুকুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিকো আহমেদ বলেন, ‘মামলায় হাজিরা দিতে আমরা আদালতের দোতলায় দাড়িয়ে অপো করছিলাম। এ সময় আদালত চত্বরের নিচে কে বা কারা আনোয়ার হোসেনের ওপর হামলা করে তা আমার জানা নেই। তার কোন শত্রু এমন চড়াও হতে পারে। এখন সে দায় আমার ওপর চাপানো হচ্ছে’।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক বলেন,‘বুধবার সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে মিমাংসায় বসি। কিন্তু উভয় পক্ষ ঐক্যমতে সম্মত না হওয়ায় মিমাংসা হয়নি। আজকে (বৃহস্পতিবার) তারা উভয় পক্ষ আদালতে জামিন নিতে আসেন। তাদের হাতাহাতি হওয়ার খবরটি আমি পরে পেয়েছি। তবে আনোয়ার হোসেন ছাড়া তার পক্ষের ও বিপক্ষের সকলে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।