সেন্ট্রাল ডেস্ক: নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় সাম্প্রতিক ইউপি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে হামলায় বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনার মূলহোতা ও মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতের নাম- মো. মারুফ হোসেন ওরফে অন্তিক। ঢাকার আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গত ২৮ নভেম্বর সারা দেশব্যাপী ৩য় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানাধীন গড়াগ্রাম ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র নং-৫৯, পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহিংসতার ঘটনায় বিজিবি সদস্য নায়েক রুবেল হোসেন নির্মমভাবে নিহত হন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ললিত চন্দ্র রায় কর্তৃক বাদী হয়ে গত ৩০ নভেম্বর ৯৫ জন আসামির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও অনেকের নামে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর অভিযানে গতকাল সোমবার রাতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিজিবি সদস্য নায়েক রুবেল হোসেনের হত্যাকাণ্ডের এজাহারনামীয় ১নং আসামি মো. মারুফ হোসেন ওরফে অন্তিককে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, গ্রেপ্তারকৃত মারুফ ভোটকেন্দ্রে হামলা এবং বিজিবি সদস্য হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. মারুফ হোসেন ওরফে অন্তিকের বাবা মৃত মোসাদ্দেক হোসেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গড়াগ্রাম ইউনিয়নের ১৯ বছর ধরে চেয়ারম্যান ছিলেন। গত ২০১৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করলে সে উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হয়।
গ্রেপ্তারকৃত মারুফকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, তার নির্বাচনী মূল্যায়ণ অনুযায়ী নির্বাচনে জয়লাভ করতে তার স্থায়ী নিবাস এলাকার গড়াগ্রাম ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র নং-৫৯, পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রায় সব ভোট প্রয়োজন। যেকোনো মূল্যে সে এই কেন্দ্রের প্রায় সকল ভোট তার অনুকলে যেন হয় তার জন্য সে প্রয়োজনে পেশীশক্তি ব্যবহার করবে বলে পরিকল্পনা করে। বিধায় মারুফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব থেকেই কেন্দ্র দখল এবং প্রয়োজনে হামলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব আরও জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোট চলাকালীন তার পক্ষের আনুমানিক ২০/৩০ জন সমর্থক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ভোটকেন্দ্রে অনাধিকার প্রবেশ করে জোরপূর্বক জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করে। ভোটকেন্দ্রের কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিতে চেষ্টা করলে তারা তাকে গালিগালাজসহ শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে।
পরবর্তী সময়ে প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মোবাইলে উক্ত ঘটনা অবহিত করলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ টহল দল ঘটনাস্থলে এসে আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ স্বাভাবিক করে।
অতঃপর বিকেল সাড়ে ৪টায় ভোটগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে ভোট গণনা শুরু করা হয়। সেই কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৯৭১ ভোটের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত প্রার্থীর পক্ষে ২ হাজার ৩৩৬ ভোট এবং অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা ৭০টি ও ছয়টি ভোট প্রাপ্ত হয়। ইতোমধ্যে অন্য আটটি কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণে সে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের তুলনায় সামান্য পিছিয়ে থাকায় সে ফলাফল পরিবর্তনের জন্য (সম্পূর্ণ ভোট তার পক্ষে প্রদানের জন্য) প্রিজাইডিং অফিসারকে আটকে রেখে চাপ দিতে থাকে।
প্রিজাইডিং অফিসার অপারগতা প্রকাশ করলে সে সহ তার প্রায় শতাধিক সমর্থকসহ বিভিন্ন ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার, অন্যান্য নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করে আহত করে। এ সময় নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত সরকারি যানবাহন ও নির্বাচন কেন্দ্রে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
আনুমানিক রাত ৮টা ৩০ মিনিটে বিজিবি টহল দল উপস্থিত হলে গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. মারুফ হোসেন ও তার সমর্থকরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিজিবি সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুরুতর জখমের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নায়েক রুবেল ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং আরও অনেকেই গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
সহিংসতার এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর মামলার প্রধান আসামি মো. মারুফ হোসেন নীলফামারী জেলার জলঢাকায় ও পরবর্তী সময়ে গত ৩০ নভেম্বর হতে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঢাকার আশুলিয়ায় আত্মগোপন করে ছিলেন বলেও জানিয়েছে র্যাব।