আর্কাইভ  শনিবার ● ২৩ আগস্ট ২০২৫ ● ৮ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ২৩ আগস্ট ২০২৫
রাজনীতিতে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ

♦ যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রেও
♦ নির্বাচনে আগ্রহীরা ঘুরছেন এলাকায়
রাজনীতিতে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ

মা–বাবার সঙ্গে দুই ছেলের একসঙ্গে যাত্রা, একসঙ্গেই মৃত্যু

কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনা
মা–বাবার সঙ্গে দুই ছেলের একসঙ্গে যাত্রা, একসঙ্গেই মৃত্যু

নারী কাণ্ডে চাকরি হারালেন বেরোবি সমন্বয়ক রহমত

নারী কাণ্ডে চাকরি হারালেন বেরোবি সমন্বয়ক রহমত

চীন যাচ্ছেন নাহিদসহ এনসিপির ৮ নেতা

চীন যাচ্ছেন নাহিদসহ এনসিপির ৮ নেতা

রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩০০ কিমি সড়কে হাজারো গর্ত

শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, দুপুর ১২:৩৭

Advertisement Advertisement

নিউজ ডেস্ক: রংপুর নগরীর প্রাণকেন্দ্র জাহাজ কোম্পানি মোড়। এই মোড় থেকে সাতমাথা হয়ে একটি সড়ক চলে গেছে কাউনিয়া উপজেলায়। কাউনিয়া উপজেলাসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার হাজারো মানুষ রংপুর শহরে যাতায়াত করেন এই সড়ক দিয়ে। কিন্তু জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে সাতমাথা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক শ ছোট-বড় গর্ত, উঠে গেছে কার্পেটিং। এতে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন যানের চালক ও যাত্রীদের। একই চিত্র দেখা গেছে রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) অন্য সড়কগুলোতেও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় যানবাহনের ক্ষতি তো হয়ই, দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন বাড়ে, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দ্রুত সংস্কার করা না হলে নাগরিক ক্ষোভ আরও বাড়বে।

রসিক সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশনে সড়কপথ রয়েছে ১ হাজার ৪৫৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৯৫৩ কিলোমিটার পাকা ও ৫০৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। ৯৫৩ কিলোমিটার পাকা সড়কের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার অংশ ভাঙাচোরা। সে হিসেবে পাকা সড়কের এক-তৃতীয়াংশই বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী। খানাখন্দে ভরা এসব রাস্তায় প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। দীর্ঘদিনেও সংস্কার না করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন নগরবাসী।

সরেজমিনে নগরীর জাহাজ কোম্পানি থেকে সাতমাথা, সিগারেট কোম্পানি থেকে হাই-টেক পার্ক, চারমাথা থেকে ইসলামপুর, তিনমাথা, স্টেশন রোড, নিউ জুম্মাপাড়া, কুকরুল, মিস্ত্রিপাড়া, বাবুপাড়া রোড, এরশাদ মোড়, হাজীরহাট, তাজহাট, মাহীগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের মাঝখানে বড় বড় গর্ত। কোথাও কোথাও পুরো সড়কের পিচ-খোয়া উঠে গেছে। সড়কে সৃষ্টি হওয়া গর্তে পানি জমে খালে পরিণত হয়েছে।

নগরীর তিনমাথা এলাকার বাসিন্দা মোনালী রায় বলেন, ‘প্রতিদিন আমার মেয়েকে এই সড়ক (জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে সাতমাথা) দিয়ে রিকশায় করে স্কুলে নিতে যাওয়া-আসা করা লাগে। কিন্তু রাস্তার অবস্থা এমন খারাপ যে প্রতিবার মনে হয় রিকশা উল্টে যাবে। বৃষ্টি হলে তো আর চলাচলই করা যায় না।’

একই অভিযোগ করেন মাহীগঞ্জ এলাকার অটোচালক জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একেকটি গর্ত বড় খালের সমান। এই রাস্তা দিয়ে দিনে ১০ বার যাই, প্রতিবারই মনে হয় গাড়ি উল্টে যাবে। সাসপেনশন তো আগেই শেষ। রাস্তাঘাট ঠিক না থাকলে আমাদের ক্ষতি হয়, যাত্রীও কমে যায়।’

রিকশাচালক কাচু মামুদ বলেন, ‘এক গর্ত শেষ না হতেই আরেকটা শুরু হয়। এসব রাস্তা দিয়ে গেলে রিকশার চাকা ভেঙে যায়, যাত্রীও পড়ে যায়। প্রতিদিন কারও না কারও গাড়ি উল্টে থাকে।’

সিগারেট কোম্পানি থেকে হাই-টেক পার্ক যাওয়ার সড়কটি পুরো অংশের পিচ-খোয়া উঠে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে হেলেদুলে চলাচল করছে যানবাহন। এ সড়কে কথা হয় স্কুলশিক্ষক সবুজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। হেঁটে যাওয়ার মতো উপযোগী নয়; কিন্তু সড়ক সংস্কারে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।’

ওই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী বাহারকাচনা এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন রিকশা উল্টে যাচ্ছে। ভাঙা গর্তে পড়ে গত মঙ্গলবার নগরীর শাহীপাড়ার বাসিন্দা মোটরসাইকেলের এক আরোহীর হাত ভেঙে গেছে। সড়কটি সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার কলেজছাত্রী রুমানা খাতুন বলেন, ‘রংপুর বিভাগীয় শহর, সিটি করপোরেশন, কিন্তু রাস্তা দেখে মনে হয় শহরে না, কোনো গ্রামে চলছি। শহরের থেকে ইউনিয়নের রাস্তাঘাট অনেক ভালো আছে। শহরে ভাঙাচোরা রাস্তার জন্য প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে।’

রংপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজম আলী বলেন, ‘সিটি এলাকায় ৩০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ভাঙাচোরা, খানাখন্দে ভরে গেছে। এগুলো জরিপ করে রুটিন মেইনটেন্যান্সের আওতায় আনার জন্য ২১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে; কিন্তু বরাদ্দ না পেলে আমরা কিছুই করতে পারি না। তবু ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করে অস্থায়ীভাবে মেরামতের চেষ্টা করছি।’

মন্তব্য করুন


Link copied