আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ২৬ আগস্ট ২০২৫ ● ১১ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ২৬ আগস্ট ২০২৫
রংপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিশু হাসপাতালটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় অবকাঠামোসহ এসিগুলো নষ্ট

রংপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিশু হাসপাতালটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় অবকাঠামোসহ এসিগুলো নষ্ট

উগ্রবাদ নিয়ে সতর্ক বিএনপি

উগ্রবাদ নিয়ে সতর্ক বিএনপি

তদন্ত হবে আড়ি পাতার

রাজনৈতিক সরকার এ ব্যবস্থা ধরে রাখতে চায়
তদন্ত হবে আড়ি পাতার

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

কারমাইকেল কলেজ চতুর্থ দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

শিক্ষা উপদেষ্টার আগমন ও লিখিত আশ্বাস ছাড়া আন্দোলনে অনড় শিক্ষার্থীরা

বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, বিকাল ০৬:১২

Advertisement Advertisement

মমিনুল ইসলাম রিপন রংপুর।। রংপুরে কারমাইকেল কলেজে ৩৭ দফা দাবিতে টানা চতুর্থ  দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে আজও কলেজের প্রবেশ ফটক, প্রশাসনিক ভবনসহ সকল বিভাগের ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়।

সৃষ্ট সংকট সমাধানে শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সশরীরে কারমাইকেল কলেজে অনতিবিলম্বে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়। শিক্ষা উপদেষ্টার সরাসরি আগমন এবং লিখিত আশ্বাস ছাড়া এই আন্দোলন স্থগিত করা হবে না বলেও জানান তারা।

বুধবার (২৫ জুন) সকালে আন্দোলনের চতুর্থ দিনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে কারমাইকেল কলেজের প্রবেশ ফটক সম্মুখে উপস্থিত হন জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার ও সেনা কর্মকর্তাগণ। টানা দেড় এক ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সংকট সমাধানে সরকারের উর্ধ্বতনদের আলোচনা করে সংকট নিরসনের আশ্বাস দেন তারা।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলেজের প্রবেশ ফটকের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা- ‘শিক্ষা চাই, নিরাপত্তা চাই’, ‘শিক্ষকের অভাব দূর করো, ’ ‘ছাত্রাবাস চাই’, ‘বাস বাড়াও, ক্লাস চালাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবিগুলো হলো-  কলেজের সব খাতে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, মানসম্মত অডিটরিয়াম নির্মাণে পূর্ণ বরাদ্দ নিশ্চিত করা, কলেজের দখলকৃত জমি উদ্ধার এবং কলেজ চত্বরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে রাস্তা প্রশস্ত করা ও সৌন্দর্যবর্ধনমূলক ফটক নির্মাণ, কলেজের জমি অন্য কোথাও না দেওয়ার লিখিত নিশ্চয়তা, হল সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পুরোনো হলগুলোর সংস্কার, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য অন্তত ছয়টি বাস সরবরাহ, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ স্মার্ট ক্লাসরুমে রূপান্তর, কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরি ও উন্নত সরঞ্জাম প্রদান ইত্যাদি।

বেলা ১১টার দিকে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোম্মাদ রবিউল ফয়সাল, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী ও সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা দাবি-দাওয়া মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আশ্বাস দেন।

প্রায় দেড় এক ঘণ্টার আলোচনায় শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আশ্বাস নয়, তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং লিখিত প্রতিশ্রুতি চান। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা শেষে কলেজের সংকট, সমস্যা ও অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো ঘুরে দেখার জন্য অনুরোধ করেন। প পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের দলকে সঙ্গে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন।

জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে কথা হয়েছে। সময় ঠিক করে মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা উপদেষ্টা এই কলেজে আসবেন। যে দাবিগুলো শিক্ষার্থীরা তুলেছেন, তা পর্যাক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।

এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় গিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতনদের সাথে সরাসরি সাক্ষাতে দাবিগুলো তুলে ধরে আলোচনার আহ্বান জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার এই প্রস্তাবে সম্মত হননি।  

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। কিন্তু তার আগে চাই সমস্যার স্থায়ী সমাধান। ডিসি স্যার, কমিশনার স্যার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স্যারেরা এসেছেন, এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার সরাসরি আগমন এবং লিখিত আশ্বাস ছাড়া আন্দোলন স্থগিত করব না।

আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী আসাদ বলেন, ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শতবর্ষী কারমাইকেল কলেজ দীর্ঘসময় ধরে অবহেলিত। বর্তমানে এখানে ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। অথচ ছাত্রাবাসে জায়গা মাত্র ৮০০ শিক্ষার্থীর। আমাদের  শ্রেণিকক্ষগুলো জরাজীর্ণ, নেই ফ্যান নেই পর্যাপ্ত আলো। এমন বাস্তবতায় দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মেহেদী হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিগত সময়েও আমরা কলেজের বিভিন্ন সমস্যা ও সংকট তুলে ধরে আন্দোলন শুরু করেছি। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো অগ্রগতি হয়নি। এবার আমরা আর ছাড় দেব না। উন্নয়নের জন্য এই আন্দোলন চলবেই। এখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হচ্ছে।

বর্তমান শিক্ষার্থী পাশাপাশি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায় আন্দোলনে অংশ নিতে। এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম বলেন, আমি প্রথমে স্যালুট জানাতে চাই কারমাইকেল কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের। কেননা, আপনারা চার দিন আন্দোলন করে প্রমাণ করেছেন যে, শান্তিপূর্ণভাবে ও সহনশীলতার সাথে আন্দোলন করেও দাবি আদায়ের পথ খোলা থাকে। আপনাদের দাবিগুলো নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে।  

এদিকে কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতা স্বীকার করি। ইতিমধ্যে বেশকিছু দাবি বাস্তবায়নে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু শিক্ষা উপদেষ্টার সরাসরি উপস্থিতি চাইছে, সেহেতু তার একান্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

গত রোববার (২২ জুন) থেকে কলেজে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করে লালবাগ এলাকায় রেল ও সড়কপথ সাড়ে ৩ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সড়ক থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে যান। কিন্তু দাবি পূরণে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

মন্তব্য করুন


Link copied