আর্কাইভ  সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫ ● ১০ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫
সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

► এক চুক্তি, চার সমঝোতা স্মারক ও এক কর্মসূচি সই
একাত্তর ইস্যু দুবার মীমাংসিত, বললেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী
বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

উল্টো বাড়ছে দিনদিন, চলছে শুধুই আলোচনায়
রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

সকাল মানেই পাবজি”—গ্রামের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে মোবাইল গেম

শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, রাত ০২:০৭

Advertisement Advertisement

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : এক সময় ভোর মানেই মসজিদের আজান, হাঁস-মুরগির ডাক আর কুয়োর পানি তোলার শব্দ। এখন অনেক গ্রামে ভোর মানেই—“পাবজি শুরু কর!” বন্ধুদের ডাকে ঘুম ভাঙে, তারপর শুরু হয় গেমের যুদ্ধ। গ্রামে শহরের মতো নেটওয়ার্ক না থাকলেও, পাবজি-ফ্রিফায়ার খেলতে বাচ্চারা নতুন নতুন কৌশল শিখে ফেলছে। কিন্তু এর সঙ্গে বাড়ছে এক নতুন মানসিক রোগ—মোবাইল আসক্তি।

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জানান— “দেখি ছাত্র ক্লাসে নেই, কিন্তু টেবিলের নিচে বসে মোবাইল হাতে! জিজ্ঞেস করলেই বলে ‘গেম ডাউনলোড দিচ্ছিলাম স্যার’।”

পঞ্চম শ্রেণির শুভ গোপনে বলে— “সকাল ৬টায় উঠি, প্রথমে গেম, তারপর যদি সময় থাকে স্কুল যাই।” গোটা গ্রামে এখন এমন অনেক ‘শুভ’ আছে—যাদের বইপত্র কাঁধে থাকলেও, মন পড়ে থাকে ‘বোর্ডিং’ আর ‘লোবিতে’। কেউ কেউ ভাবে, গেম খেলা মানেই ছেলেরা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আসলে সমস্যা গেম নয়—সমস্যা হলো ‘মাত্রাতিরিক্ত সময়’, নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার, এবং অভিভাবকদের উদাসীনতা। পাবজির প্রতিটি ম্যাচ চলে প্রায় ৩০ মিনিট। দিনে ৪টা ম্যাচ খেললেই ২ ঘণ্টা চলে যায়। কিন্তু বাস্তবটা আরও ভয়াবহ—অনেকেই ৮–১০ ঘণ্টাও খেলে। “আমার ছেলে দিনে ৯ ঘণ্টা গেম খেলে। খাওয়াদাওয়া ভুলে যায়, পড়া লেখাও করে না। কিন্তু চিৎকার করলে বলে ‘তাহলে মোবাইল দাও না’,” — বললেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর এক কৃষক বাবা।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মতে,  “গেম খেলতে খেলতে একধরনের মানসিক বিকৃতি তৈরি হয়। মেজাজ খিটখিটে হয়, ঘুম কমে যায়, বাস্তব জীবনে মনোযোগ কমে যায়।” গ্রামে মানসিক চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং তো দূরের কথা, এই কথাগুলো বোঝার মতো কেউই নেই অনেক এলাকায়। শহরের তুলনায় গ্রামে শিক্ষা, অবসর বিনোদন, সৃজনশীলতা—সব কিছুর ঘাটতি। মোবাইল আর গেমই যেন একমাত্র ‘বিনোদন’।
বাড়ির বড়রা ফোন কিনে দেয়, কিন্তু গেম কিভাবে চলছে—তা আর দেখে না। অনেক সময় মাদ্রাসার ছাত্ররাও হোস্টেলে গোপনে গেম খেলে; কেউ আবার গেমের ভাষায় কথা বলে।

মোবাইল কেড়ে নিলেই সমাধান নয়। শিশুদের মন অন্যদিকে নিতে হবে— মাঠে খেলাধুলা, গান, আঁকা, গল্প লেখা, ছোটদের জন্য অফলাইন শেখার অ্যাপ, অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ, এসব ছাড়া তারা আবার মোবাইলে ফিরে যাবে—আরও গভীরভাবে।

পাবজি-ফ্রি ফায়ার-লুডো কিং—এগুলো শুধু মোবাইল গেম নয়, এটা আসক্তির একটা যন্ত্রণা। গ্রামীণ বাংলাদেশ এখন কেবল ইন্টারনেট পেয়েছে, কিন্তু প্রস্তুতি পায়নি। আর সে কারণেই মোবাইল এখন আনন্দ নয়, ধীরে ধীরে এক বিষে রূপ নিচ্ছে। আগে গ্রামের ছেলেরা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে গাড়ি বানাতো, এখন বানায় কনট্রোলার। প্রশ্ন হলো—এই ডিজিটাল গ্রামটা কার জন্য, কেমন হবে?

মন্তব্য করুন


Link copied