স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ রেলপথ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী এ্যাড. নূরুল ইসলাম সুজন এমপি বলেছেন, আজকে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। আজকে চিলাহাটি থেকে ট্রেন সকাল বিকাল ঢাকা যাচ্ছে আসছে, এ পথে খুলনা রাজশাহী অন্যান্য ট্রেন চলছে। আন্তদেশীয় ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলছে। এ এলাকার মানুষের চাহিদা ছিল মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে ভারত যাতায়াতের। যেটা কাঠামোর কারণে এতোদিন হয়ে উঠেনি। এখন স্টেশন ভবন নির্মানের ফলে সেটি বাস্তবায়ন হবে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এখানে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস চালু হবে। এরপর এখানে ট্রেনে উঠে ভারতের এনজেপি, জলপাইগুড়ি যাতায়াত করা যাবে। এজন্য চার থেকে পাঁচটি বগি এখানে থাকবে, বাকি ট্রেন ঢাকা চলে যাবে’।
তিনি আরো বলেন, আগামী ১১ তারিখ চট্টগ্রামের কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল উদ্বোধন হবে। ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর চিলাহাটি সীমান্ত থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত টেন চলবে। আগামী দিনে চিলাহাটিতে স্থলবন্দর হবে এবং এখান থেকে শুধু ভারত নয়, নেপাল-ভুটান পর্যন্ত ট্রেন চলবে। খুলনা-মঙ্গলা বন্দর থেকে সরাসরি মালামাল আসবে এ পথে।
শনিবার(৪ নবেম্বর) বেলা দেড়টার দিকে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি সীমান্ত রেলস্টেশনের আইকনিক স্টেশন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
রেলপথ মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন রাজনীতি করেছিলেন গরীব দুখি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ছিল যে ভিক্ষুকের জাতির কোন সন্মান নেই। আমরা আত্মনীর্ভরশীল, মর্যাদাকর একটি দেশ হিসাবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ আদাদের দিয়ে গেছেন ৩০ লক্ষ শহীদ দুই লক্ষ মা-বোসেনর সম্ভ্রমের বিনিময়ে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ দিয়ে গেলেন সত্যি কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেন নাই। বঙ্গবন্ধু দেশটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন সে কাজ করতে দেওয়া হয় নাই। আজ তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন সংগ্রাম করে দেশটাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার দিকে এগিয়ে নিয়েছেন। যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন তাহলে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা অনেক আগেই বাস্তবায়ন হতো।
তিনি বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, আন্দোলন আমরাও করেছি, আমরা মাইর খাইছি আমরা কোনদিন পুলিশকে মারি নাই। আমাদের লোকজন জীবন দিয়েছে, জেলখানায় গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কতবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কই খালেদা জিয়া একবারও হত্যা চেষ্টা করা হয় নাই। আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে জেলখানার মধ্যেও হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির কোন নেতাতো এইভাবে মারা যায় নাই। বিএনপি ভোটে আসতে চায় না। কারণ তারা জানেন ভোটে জনগণ ভোট তাদেরকে দিবে না। তারা যেসব কাজ করেছেন তাতে ভোট চাওয়ার মত মুখ নাই। এখন আন্দোলন করছেন করেন, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে আক্রমণ, ভাঙ্গচুর, পুলিশ হত্যা কেন ? পুলিশতে দায়িত্ব পালন করছেন নিরাপত্তার জন্য’। শেষে তিনি সামনের দিনে সকলকে শান্তির পথে, উন্নয়নের পথে, অগ্রগতির পথে থাকার আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা দেন রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার, জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ, পুলিশ সুপার মো. গোলাম সবুর পিপিএম, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি লিং রেলপথ নির্মানের প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহীম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বাংলাদেশের চিলাহাটি আর ভারতের হলদিবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৫৫ বছর পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য মিতালী এক্সপ্রেস উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে করোনা জটিলতায় আটকে যায় মিতালী এক্সপ্রেসের চলাচল। এরপর ২০২২ সালের পহেলা জুনে চালু হয় যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস ও ২০২১ সালের পহেলা আগষ্ট নিয়মিত চালু হয় পণ্যবাহী ট্রেন।