শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর: " হিয়ালে হাত-পাওলা কাটি যাছে । কাম না করিলে খামো কী? হামার গরীবের বাঁচার উপায় নাই। তাতোইন্ন্যে বেহাল বেলায় আইচু।কামোত নামি পইছু। মুই একলায় নাহায়,দেখায়তো পাছেন-কতোজন কাম করচ্ছি। সবারেই এমন দশা। জাড়োত ককড়া লাগি যাছি সবাই।"
তীব্র শীতে জমিতে বোরো বীজতলা তোলার সময় এমনি অনুভুতি প্রকাশ করছিলেন,কৃষি শ্রমিক দীলিপ কুমার। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক মো. মতিউর রহমানের বোরো বীজতলা তোলার কাজে একই সঙ্গে প্রায় ৩০/৩৫ কৃষি শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের মধ্যে দীলিপ কুমারও রয়েছেন। দীলিপের বাড়ি বিরলের বহবহল দীঘি। প্রায় ৬ কিলো মিটার পথ বাইসাইকেলে পাড়ি দিয়ে কাজ করতে এসেছেন,কৃষক মতিউরের খামারে। অনেকেই এসেছেন, দুর-দূরান্ত থেকে কাজ করতে। কারণ কাজ নেই।
কৃষক মতিউর রহমান বলেন, 'ক্ষেতে কেউ কাজও করতে চায় না ঠান্ডার কারণে। কাজ করতে আসলেও দেরিতে কাজে নামে।আবার আগেভাগেই চলে যায়। সকাল ১০ টার আগে কেউ কাজে নামে না।বিকেল ৪ টা না বাজতেই কাজ ছেড়ে চলে যায়। দুপুরে এক/দেড় ঘন্টা খাবারের সময় নেয়। এতে আমাদের লজ। কিছু বলাও যায়না। যে হাঁড় কাঁপানো
ঠান্ডা পড়েছে,তাতে কিছু বলাও যায়না তাদের।মায়াও লাগে।কিছু করার নেই।এভাই পুষিয়ে নিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। প্রতি শ্রমিককে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে।সেই সঙ্গে দুপুরের খাওয়া। কৃষকের বাঁচার উপায় নাই। ঠান্ডায় তামাম শেষ। বোরো বীজলার বারোটা বাজি গেইছে। ঠান্ডা আর কুয়াশায় কোন্ড ইঞ্জুরি ধরেছে।চারা হলুদ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। এখনি না লাগালে আরো শেষ হয়ে যাবে।'
কৃষক মতিউর রহমান জানালেন,তিনি এবার ৮০ একর জমিতে বোরোধান লাগানোর জন্য সাড়ে ৪ একর জমিতে বোরো বীজতলা লাগিয়েছেন। তীব্র শৈত্য প্রবাহে তার বেশকিছু বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। পলিথিন দিয়ে ঢাকিয়ে আর পানি সেচ দিয়ে প্রতিদিন পানি পাল্টিও লাভ হয়নি।
তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসির একজন চুক্তিবদ্ধ চাষি।প্রতিবছর ভালোমানের ধানের বীজ তাকে বিএডিসিতে সরবরাহ করতে হয়। তার সেই বীজ সারা দেশের অনেক চাষি ব্যবহার করে ফসল ফলায়। একারণে তাকে প্রতি বছর ১৩০ একর থেকে ১৫০ একর জমিতে ধান চাষ করতে হয়। কিন্তু, এবার শীতের প্রকোপের কারণে তিনি বোরো ধান চাষাবাদের জমির পরিমান কমিয়ে দিয়েছেন। এবার ৮০ একর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা পরিপূরণ নাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন। কারণ, শীতে তার বেশকিছু বোরো বীজতলা নষ্ট হয়েছে।
প্রসঙ্গগত :তীব্র শৈত্য প্রবাহে কনকনে হাঁড় কাঁপানো শীতে দিনাজপুরে ছন্দপতন ঘটেছে।বেহাল দশা মানুষসহ প্রাণিকুলের। তীব্র শীতে কাবু প্রকৃতি ও পরিবেশ।
আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দেশের সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। লাগাতার তীব্র শীতে চরম দূর্ভোগে ছিন্নমূল হতদরিদ্র মানুষ। বিশেষ করে খেটে খাওয়া দিনমজুর নিন্ম আয়ের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। কাজ-কর্ম না থাকায় আয়-উপার্জনহীন তারা।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, আজ দেশের সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে।আদ্রতা ৮৮% বাতাসের গতি ২ নটস । তাপমাত্রা আরো কমে যাওয়ায় আশংকা রয়েছে।
রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার (২৭ জানুয়ারি )সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়।