বেরোবি প্রতিনিধি: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যা যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের মেসগুলোর শিক্ষার্থীদের তুলনায় হলের শিক্ষার্থীদের খাবার খরচ প্রায় দ্বিগুণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল সংকট, হলের সিট ভাড়া বেশি, মেডিকেল চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা, বাস সুবিধায় সীমাবদ্ধতা, অডিটোরিয়াম নেই, ক্লাস সংকট, ল্যাব নেই বললেই চলে, মাঠ সংকট, ক্যাম্পাসে নেই কোনো দোকানপাট ও প্রশাসনিক সেবায় নানা ধরনের হয়রানিসহ বেশ কিছু সমস্যার সাথে যুক্ত হয়েছে হলের ডায়নিংগুলোর নিম্নমানের খাবার দিয়ে অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের মেসেরগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য বরাদ্দকৃত দুই হল বঙ্গবন্ধু ও শহীদ মুখতার ইলাহী হলের খাবার খরচ তুলনা করলে দেখা যায় মেসগুলোর চেয়ে হল দুটির খাবার ব্যয় বেশি প্রায় ৫০-১৫০ শতাংশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই হলের ডায়নিংয়ে প্রতিদিন দুই বেলার রান্নার আয়োজন করা হয়। প্রতিবেলা খাবার বিক্রি হয় ৪০ টাকা এবং সাথে ভর্তা বা পিয়াজি নিলে তা দাঁড়ায় ৫০ টাকায়। অর্থাৎ দুইবেলায় শিক্ষার্থীদের খরচ হয় ১০০ টাকা। এবং সকালের নাস্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় বা আবু সাঈদ চত্বরের দোকানগুলোতে গিয়ে গুনতে হয় ২০-৩০ টাকা সর্বনিম্ন।
এ অবস্থায় হলের শিক্ষার্থীদের ৩ বেলা খাবারের মূল্য দাঁড়ায় ১০০-১৩০ টাকা। তবে খাবার মূল্য বেশি হলেও খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়ে আছে নানাবিধ সমস্যা। হো ( WHO) এর মতে যে পরিমাণ খাবার ও আমিষ, শর্করা সরবরাহ করা প্রয়োজন তার থেকে কয়েকভাগ কম দেওয়া হয় এসব ডায়নিংয়ের খাবারে। মুরগি বা মাছের পরিমাণ খুবই সামান্য, মাত্র কয়েকগ্রাম এবং হলের ভাত পর্যাপ্ত থাকলেও তা পচা, পোকা ধরা ও বাসি ভাত থাকে বেশিরভাগ সময়েই। রান্না করা ডালে তো ডালের দানার পরিমাণ নেই বললেই চলে।
বঙ্গবন্ধু হলের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী হাবিব আহসান বলেন, হলের এসব চালের খাবার গ্রামে গরুগুলোকেও দেওয়া হয় না। তার ওপর দুপুরের বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো মিক্স করা হয় রাতের খাবারের সাথে। যেখানে মেসে এর চেয়ে অর্ধেক খরচে এর চেয়ে ভালো মানের খাবার দেওয়া হয় সেখানে আমাদের হলে নিজস্ব ব্যবস্থা থাকার পরও কেন দেওয়া যায় না সেসব নিয়ে প্রশ্নই থেকে যায়।
হলে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই টাকার তুলনায় এই খাবার কখনই মেনে নেয়া যায় না। অন্যান্য বিষয়ে তো যেমন তেমন। ডাল ঘন দেখানোর জন্য তারা ডালের দানা বেশি দেয়া লাগবে জন্য ভাতের মাড় দিয়ে দেয়। সবজি তো মুখেই দেয়া যায় না, মাছ ভেজে দেয় তবুও কাঁচা, পঁচা গন্ধ আসে।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের মেসগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ মেসে খাবার চালু রয়েছে ৩ বেলার জন্য। মেসগুলোতে খাবার মান ও সংখ্যাভেদে ৫০-৭০ টাকার মধ্যে মিলছে সারাদিনের খাবার। তবে হলের তুলনায় খাবারের পরিমাণ সেখানে কম থাকলেও মানে হলের তুলনায় মেস গুলো এগিয়ে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বেশ কয়েকটি মেসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫০-৭৫ টাকায় তারা ৩ বেলা খাবার পাচ্ছে। এসব মেসগুলোয় সকাল বেলা ভাতের সাথে ডাল ও আলুভর্তা বা ভাজি, দুপুরে মাছ বা মাংস, সবজি, ভর্জা, শাকভাজি ও ডাল এবং রাতেও প্রায় একই ধরনের খাবার দেওয়া হয়। এসব মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘পরিমাণ নিয়ে আমাদের কয়েকজনের মাঝে মাঝে সমস্যা হয় তবে খাবারের মান ও স্বাদ এই টাকায় যথেষ্ট পরিমাণ ভালো। আমরা হলে গিয়ে খাবার খেয়ে এসেছি, হলে যে খাবার দেয় তা দুইদিন কেউ খেলে পরদিন থেকে মুখে নেয়ার মত ইচ্ছে জাগে না সেই তুলনায় মেসে কম টাকায় ভালো খাবার পাচ্ছি। তবে তা আমাদের শরীরের চাহিদা মেটাতে পারে কিনা সেটা বলতে পারছি না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের খাবার মূল্য তুলনামূলক বেশি হলেও ডায়নিংগুলোতে নিম্ন মানের খাবার সরবরাহ করায় শিক্ষার্থীরা ডায়নিং বিমুখ। ফলে ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলার পর থেকে দুই হলে খাবার চলেছে মাত্র কয়েকদিন।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু হলে গত দুইমাসে ডায়নিং চালু ছিল মাত্র ৫-৭ দিন। বাকি সময় খাবার মানের ইস্যুতে ডায়নিংয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীরা না যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ তা বন্ধ করে দেয়। গত ৫ দিন থেকে হলের ডায়নিং এ খাবার ব্যবস্থাও বন্ধ রয়েছে। এদিকে এ সমস্যার পরিত্রাণ পেতে হল প্রশাসনের থেকে ডায়নিং ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরাই। শহীদ মুখতার ইলাহী হলে গত ৩ দিন থেকে এ দায়িত্ব রয়েছে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হলেও আগামী সপ্তাহ থেকে দায়িত্ব নিবে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে জানায়, কয়েকবছর থেকে হলে অবস্থান করার ফলে যা দেখছি তা হলো, খাবারের নিম্নমানের কারণে প্রায় প্রতিটা রুমে আলাদা করা রান্নার ব্যবস্থা করেছে শিক্ষার্থীরা। এর ফলে তাদের সময়ের ব্যয় হচ্ছে। যেহেতু শিক্ষার্থীদের খাবার মান কর্তৃপক্ষ বাড়াতে পারছে না এবং বেশিরভাগ সময়ই ডায়নিং বন্ধ থাকে তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা শিক্ষার্থীরাই এর দায়িত্ব গ্রহণ করব।
হলের খাবার মান ও ডায়নিং পরিচালনা বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ আমির শরিফ বলেন, ‘আমরা হলে দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। হলে খাবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দীর্ঘদিন থেকেই। তবে হলে শিক্ষার্থীরা আলাদা খাবার রান্নার ব্যবস্থা করছে তাই ডায়নিং এ খাবার চাপ কম, অল্প জনের রান্না জন্য হয়তো এরকম হতে পারে। তবে আশা রাখছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে মান ভালো হবে। তখন ভালো করে বলতে পারব।
শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আসলে এ বিষয়ে এখন বলতে পারছি না। প্রস্তুতি নিয়ে আপনার সাথে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।