আর্কাইভ  সোমবার ● ১৮ আগস্ট ২০২৫ ● ৩ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ১৮ আগস্ট ২০২৫

কুড়িগ্রামে একটি গ্রামে স্টেশন ছাড়াই থামে ট্রেন

সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, দুপুর ০৩:৪০

Advertisement Advertisement

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: তিস্তা-সিঙ্গারডাবরী রেলস্টেশনের মাঝামাঝি রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের পাঁচগাছি গ্রাম। এখানে নেই কোনো রেলস্টেশন। তবু ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে প্রতিদিন এখানে থামে ট্রেন। ট্রেন যাত্রীরা এখানে ট্রেনে উঠেন এবং ট্রেন থেকে নামেন। ট্রেনের জন্য তাদেরকে তিস্তা ও সিঙ্গারডাবরী স্টেশনে যেতে হয় না।

এই গ্রামের দুধখাওয়ার খালের ওপর ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে রেলওয়ের পুরনো ‘ফোর-জে’ সেতু। ২০২৩ সালের আগস্টে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেন চালকরা সেতুর আগে ট্রেন থামিয়ে গতি সর্বোচ্চ দুই কিলোমিটারে নামিয়ে দেন এবং প্রায় ৫০-৫৫ সেকেন্ড থামার পর ধীরগতিতে সেতুটি অতিক্রম করেন।

লালমনিরহাট রেলওয়ে সূত্র জানায়, তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলপথে প্রতিদিন এক জোড়া আন্তঃনগর, এক জোড়া মেইল, এক জোড়া কমিউটার ও এক জোড়া লোকাল ট্রেন চলাচল করে। তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন যেতে সিঙ্গারডাবরী ও রাজারহাট রেল স্টেশন রয়েছে। লোকাল ও মেইল ও কমিউটার ট্রেন মাঝপথের এ দু;টি স্টেশনে থামলেও আন্তনগন ট্রেন থামে না। কিন্তু তিস্তা ও সিঙ্গারডাবরী স্টেশনের মাঝপথে প্রায় দুই বছর ধরে পাঁচগাছিতে সকল ধরনের ট্রেন অনানুষ্ঠানিক বিরতি কেবল ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণেই দেয়া হচ্ছে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, প্রায় ৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি পুনর্র্নিমাণ করছে রাজশাহীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হলেও, কাজ শুরু হয় ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে।

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার চুক্তি আছে। যেহেতু এই রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে তাই সেতুর পুননির্মাণকাজ সতর্কাবস্থায় করতে হচ্ছে আর এতে সময় লাগছে।”
তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কাজের খুবই ধীর গতি। সেতুর কাজ দ্রুত শেষ হলে তারা যেমন নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন, তেমনি গ্রামে ট্রেন থামার এই ব্যতিক্রমী দৃশ্যও হয়তো আর দেখা যাবে না।
গ্রামের প্রবীণ মজিবর রহমান (৬৭) বলেন, ‘এক বছর ধরে কাজ চলছে, কিন্তু অগ্রগতি নেই। এর আগে বালুভর্তি বস্তা ফেলে সেতুর পিলার রক্ষা করা হয়েছিল। ট্রেন থামায় খুশি হলেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা আছে।’
ট্রেনযাত্রী মজিদুল ইসলাম বলেন, ‘ আমি অনেক দিন ধরে ট্রেনে যাতায়াত করছি। রাতে ট্রেন থামলে যাত্রীরা এখানে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েন। এছাড়া সেতুর কারণে দুর্ঘটনার ভয় সবসময় থাকে। অনেকদিন ধরে দেখছি সেতুর পুননির্মাণকাজ হচ্ছে কিন্তু কাজ শেষ হচ্ছে না।’

ট্রেন চালক আব্দুস সালাম বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তারা ট্রেন থামিয়ে ধীরগতিতে সেতু পার হন। ‘তিস্তা-কুড়িগ্রাম রুটে সাধারণত ৫৫-৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হয়, কিন্তু এখানে সর্বোচ্চ দুই কিলোমিটার গতিতে যেতে হয়।’

সোমবার (১৮আগষ্ট) রাজারহাট স্টেশন মাস্টার সুমন মিয়া বলেন, ব্রীজের কাজ চলছে তাই ট্রেন এখানে ধীরগতিতে চলে। ট্রেন থামানো হয় না।

মন্তব্য করুন


Link copied