আর্কাইভ  সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫ ● ১০ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫
সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

► এক চুক্তি, চার সমঝোতা স্মারক ও এক কর্মসূচি সই
একাত্তর ইস্যু দুবার মীমাংসিত, বললেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী
বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

উল্টো বাড়ছে দিনদিন, চলছে শুধুই আলোচনায়
রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

গোপনে চলছে প্রশিক্ষণ!

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গারা

শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, রাত ১২:২১

Advertisement Advertisement

ডেস্ক: মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশের ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এরই মধ্যে প্রশিক্ষণও নিয়ে ফেলেছেন তাদের একটি অংশ। এসব প্রশিক্ষণ হচ্ছে মিয়ানমারের জঙ্গলে। গোপনে চলমান এই প্রশিক্ষণের সময় কয়েকদিন পর পর সরিয়ে নিতে হচ্ছে তাঁবুও। দিনের পর দিন প্রশিক্ষণ শিবিরের আকার বাড়ছে। আজ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট। 

মোহাম্মদ আয়াস নামের ২৫ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা যুবক ইনডিপেনডেন্টকে সশস্ত্র প্রস্তুতির আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তাদের লক্ষ্য জান্তা বাহিনী ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিহত করে নিজেদের ভূমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। আগে শুধু জান্তার সঙ্গে লড়াই করার চিন্তা ছিল, এখন প্রয়োজনে আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে তারা অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত বলে জানান তিনি।  

মোহাম্মদ আয়াস বলেন, তারা এ প্রস্তুতি দীর্ঘদিন ধরে নিচ্ছেন। বিশেষ করে মিয়ানমারে ২০২১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এ প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত হয়। এই প্রশিক্ষণ নেওয়া হচ্ছে মিয়ানমারের ভেতরেই। কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে তপ্ত রোদে অস্ত্র চালনা শিখছেন রোহিঙ্গারা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট বলছে, আয়াস কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুদের বার্মিজ ভাষা শেখান। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মতো শত শত যুবক যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী তাদের পথের বাধা হবে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তারা সবাই এক।

আয়াস বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। আমি আমার জনগোষ্ঠীর জন্য মরতে প্রস্তুত। নিজ মাতৃভূমিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। মিয়ানমারে আমাদের অধিকার ও স্বাধীনতার যুদ্ধে আমার কী হবে, এ নিয়ে আমি ভাবি না।’

কক্সবাজারের ক্যাম্পে কয়েক বছর ধরে থাকা হাজার হাজার রোহিঙ্গা যুবক স্ব-ইচ্ছায় সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দিচ্ছেন বলে দাবি আয়াসের। সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে নিজেকে কমান্ডার হিসেবে দাবি করা এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তারা গোপনে মিয়ানমারে যান। যেখানে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসব্যাপী সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন।

২০১৭ সালে বর্বর অত্যাচার ও নির্মম গণহত্যা চালিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে দেশটির সেনাবাহিনী। ওই সময় জীবন বাঁচাতে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তারা এখন কক্সবাজারের ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

রোহিঙ্গারা দাবি করছেন, তাঁদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। জান্তা বাহিনীর পাশাপাশি রাখাইনের স্থানীয় শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠীও নিপীড়ন করেছে রোহিঙ্গাদের। ২০২১ সালে অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে বন্দী করার পর এই নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। তিনি মুক্তি পেলে হয়তো এত নির্যাতন হতো না। এ কারণে তারা মাতৃভূমিকে ফিরে যেতে সশস্ত্র পথ বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তাদের দাবি, বিশ্ব এখন গাজা ও ইউক্রেন নিয়ে পড়ে আছে। তাদের দিকে কেউ নজর দিচ্ছে না।   

বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টকে জানান, প্রথমে ফিটনেস ট্রেনিং দেওয়া হয় গোপন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। এরপর তাদের কয়েকটি দলে ভাগ করা হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ অস্ত্র চালনা শেখেন। এ ছাড়া মার্শাল আর্টও শেখানো হয় ক্যাম্পে। অবশ্য এসব অস্ত্র কোথা থেকে আসে, সে ব্যাপারে প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। আরেকটি দল সোশ্যাল মিডিয়া, কাউন্টার সারভেইলেন্স ও শত্রুদের অবস্থান শনাক্ত করার কৌশল শেখে।  

এক রোহিঙ্গার ভাষ্য, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য শান্তি। আমরা বার্মায় অধিকার ও সুযোগ নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই, যেখানে সরকার ও বিদ্রোহীরা উভয়ই আমাদের ভূমি দখল করেছে। আমরা আমাদের মাতৃভূমি ফিরে পেতে চাই এবং এর জন্য লড়াই করব।’

কোন গ্রুপের অধীনে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে–সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি আয়াস। তিনি বলেন, ‘১ হাজারের বেশি লোক এখন যোগদান করেছে এবং প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। নিয়োগ হচ্ছে সব শিবিরে।’

রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প। ফাইল ছবি: সংগৃহীতইসলামিক মাহাজ নামের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত এক রোহিঙ্গাও ইনডিপেনডেন্টকে জানান, তারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এই ইসলামিক মাহাজ রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) একটি অঙ্গ সংগঠন।

সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট বলছে, বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ডজনখানেক সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বেশ কয়েকবার এ নিয়ে উদ্বেগও জানানো হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এসব গ্রুপ মাদক, মানবপাচার, হত্যা, চাঁদাবাজি ও ক্যাম্পের অন্তর্কোন্দলের সঙ্গে যুক্ত। এ তালিকায় রয়েছে ইসলামিক মাহাজ, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন (আরএসও), আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (এআরএসএ) ও আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)। 

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলছেন, তারা বছরের পর বছর ধরে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। যে শিবিরগুলোতে স্বেচ্ছায় ও জোরপূর্বক নিয়োগ চলছে, সেখান থেকে সাক্ষ্য, ভিডিও ও অডিও প্রমাণ সংগ্রহ করছেন তারা। 

জন কুইনলি বলেন, ‘ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জীবনের প্রতিটি দিকই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে, অনেক রোহিঙ্গা সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়কে মুক্ত করার চেষ্টা করছে।’ 

ফোর্টিফাই রাইটসের প্রতিবেদন অনুসারে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত একটি মানবিক সমন্বয় গোষ্ঠী একটি অভ্যন্তরীণ স্মারকলিপি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়, গত বছরের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে শরণার্থী শিবির থেকে প্রায় ২ হাজার লোককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রশিক্ষণের জন্য।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অফিসে এ ব্যাপারে মন্তব্য চেয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েও মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেছে তারা। কিন্তু কোনো পক্ষ থেকেই সাড়া পায়নি।

মন্তব্য করুন


Link copied