আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১০ অক্টোবর ২০২৫ ● ২৫ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১০ অক্টোবর ২০২৫
শনিবার ভোরে দেশে ফিরছেন শহিদুল আলম

শনিবার ভোরে দেশে ফিরছেন শহিদুল আলম

বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই

রংপুরে ডা. এ জেড এম জাহিদ
বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই

অনিশ্চয়তা বাড়ছে নির্বাচন নিয়ে?

অনিশ্চয়তা বাড়ছে নির্বাচন নিয়ে?

ইসরায়েল থেকে তুরস্কে পৌঁছেছেন শহিদুল আলম

ইসরায়েল থেকে তুরস্কে পৌঁছেছেন শহিদুল আলম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত নজরুল

‘এখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব না, আল্লাহ তোমাকে দেখে রাখবে’

শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, বিকাল ০৭:৫২

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: প‌রিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে রাশিয়া যান অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নজরুল ইসলাম (৪৭)। তবে ভাগ্য সহায় হয়নি। ইচ্ছা‌র বিরুদ্ধে সাম‌রিক প্রশিক্ষণ শেষে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে হয় তাকে। পরে নিহত হন নজরুল ইসলাম। এরপর থেকে চার সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তার স্ত্রী। এখন তার মরদেহ ফেরত চান স্বজনরা।

বুধবার (৮ অক্টোবর) নিখোঁজের প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত হয় নজরুল ইসলামের পরিবার।

এর আগে ভালো চাকরির প্রলোভনে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি দালাল ফরিদ হোসেনের মাধ্যমে রাশিয়ায় যান সাবেক সেনাসদস্য নজরুল ইসলাম। এরপর এক মাসের মতো পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও ৩০ এপ্রিলের পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে চার কন্যা সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে এবছর রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট দুই মেয়ের বয়স যথাক্রমে ৬ ও ৫ বছর।

নিহতের পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নজরুল ইসলাম একজন ভালো মানুষ ও ক্রীড়াপ্রেমী ছিলেন। সবার সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে আসার পর স্থানীয় শ্রীপুর বাজারে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কোলারহাটের দালাল ফরিদ তাকে ভালো বেতনের মিথ্যা প্রলোভনে ১৩ লাখ টাকা নিয়ে রাশিয়াতে পাঠান। ওখানে যাওয়ার পর জোর করে কাগজে সই নিয়ে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হয়। সবশেষ ৩০ এপ্রিল স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন নজরুল ইসলাম। ওইদিন দেশে তার ১৩ লাখ টাকা পাঠানোর কথা ছিল।

নিহত নজরুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চর রামকান্তপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। ২০২০ সালে সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল পদে কর্মরত থেকে তিনি অবসরে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার আগে ২০১৩ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন কঙ্গোতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। অবসরের পর নিজ এলাকায় ভুসি মালের ব্যবসা শুরু করলেও লোকসানে কারণে আর্থিক সংকটে পড়েন। এসময় স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেন তাকে রাশিয়ায় নিরাপত্তাকর্মী পদে চাকরির প্রলোভন দেখান।

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ায় যান নজরুল ইসলাম। সেখানে পৌঁছানোর পর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সামরিক প্রশিক্ষণে পাঠানো হয় তাকে। প্রশিক্ষণ শেষে পাঠানো হয় ইউক্রেন যুদ্ধে। সবশেষ এপ্রিল মাসের শেষের দিকে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত এই সেনাসদস্য। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ মেলেনি। বুধবার (৮ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার মৃত্যুর বিষয়টি পরিবারকে নিশ্চিত করে।

নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন ছোট ছোট চারটি মেয়ে নিয়ে আমি কী করবো বুঝতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘দালালের খপ্পরে পরে ফেব্রুয়ারিতে তিনি রাশিয়া যান। তবে ৩০ এপ্রিলের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। হঠাৎ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানতে পেরেছি তিনি মারা গেছেন।’

কান্না করতে করতে আইরিন আক্তার বলেন, “রাশিয়া যাওয়ার পর জোর করে কাগজে সই নিয়ে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হয়েছিল। ওখানে যাওয়ার পর তিনি আমাকে ফোনে বলেছিলেন, ‘এখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব না। চারটি মেয়েসহ তোমাকে আল্লাহর হাতে তুলে দিলাম, আল্লাহ তোমাকে দেখে রাখবে’। ৩০ এপ্রিল ছিল তার সঙ্গে আমার শেষ কথা।”

স্বামীর মরদেহ দেশে আনার আকুতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানরা যেন শেষবারের মতো তাদের বাবাকে দেখতে পারে। দেশের মাটিতে যেন তাকে দাফন করতে পারি। আমি ওই দালালের শাস্তি চাই। আর কোনো পরিবারকে যেন এভাবে শেষ করতে না পারে।’

নিহতের ভাই রহিম ও বোন নাছিমা বেগম বলেন, ‘১৩ লাখ টাকা নিয়ে দালাল ফরিদ আমার ভাইকে রাশিয়ায় পাঠিয়েছিল। তার সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সে কথা বলেনি। আমরা এই দালালের কঠিন শাস্তি চাই।’

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন


Link copied