নিউজ ডেস্ক: দীর্ঘ বছর ধরে উত্তরাঞ্চলের চারটি বিমানবন্দর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অতীতের সরকারগুলো এসব বিমানবন্দর বিভিন্ন সময়ে চালুর আশ্বাস দিলেও কেউ কথা রাখেনি। অথচ এসব বিমানবন্দর চালু হলে উত্তরাঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা পাল্টে যেত। আকাশপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঘটত বিপ্লব।
লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও ঈশ্বরদী বিমানবন্দর যুগ যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা থেকে পিছিয়ে রয়েছে উত্তরের মানুষ। বিমানবন্দরগুলো চালুর বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল না বলে জানান।
জানা গেছে, পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত লালমনিরহাট বিমানবন্দর। এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর এটি। এটি চালু হলে রংপুর অঞ্চলে ঘটবে অর্থনৈতিক বিপ্লব। যোগাযোগের ক্ষেত্রে যোগ হবে নতুন মাত্রা। পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের দৃশ্যপট। বিগত সরকারগুলো কয়েক দফা পরিকল্পনা করলেও বিমানবন্দরটি চালুর বিষয়টি আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটি চালুর আশ্বাসের কথা শোনা যাচ্ছে।
সম্প্রতি লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর জন্য বেবিচক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিদর্শক দল পাঠানো হয়। ১৯৩১ সালে বৃটিশ সরকারের আমলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ও হারাটি এলাকায় ১ হাজার ১৬৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এ বিমান বন্দরেই ছিল মিত্র বাহিনীর ভরসাস্থল। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নতুন করে ব্যবহার না হওয়ায় জৌলুস হারাতে থাকে। ১৯৮৩ সালে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ এখানে কৃষি প্রকল্প গ্রহণ করে। সরকারি মূল্যবান স্থাপনায় মিলিটারি ফার্মের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে খামার। সংরক্ষিত ভূমিতে কৃষি কাজ হচ্ছে।
এদিকে ১৯৪০ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে শিবগঞ্জ এলাকায় ৫৫০ একর জমির ওপর এই বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী হামলা চালালে বিমানবন্দরের রানওয়েটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিমানবন্দরটি সংস্কার করা হয় এবং কয়েক বছর কিছু বাণিজ্যিক ফ্লাইটও পরিচালিত হয়। ১৯৮০ সালে লোকসানের কারণ দেখিয়ে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে দাবির মুখে ১৯৯৪ সালে পুনরায় বিমান চলাচল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত দেশের পশ্চিম-মধ্যাঞ্চলীয় জেলা পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এখান থেকে ঢাকায় ফ্লাইটের আসা-যাওয়া ছিল। এরপর ১৭ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করলেও, আবারও বন্ধ হয়ে যায় ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে। অথচ, এ উপজেলায় নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
১৯৯১-১৯৯৬ তৎকালীন বিএনপি সরকার বগুড়াকে মডেল জেলায় পরিণত করার প্রকল্প গ্রহণ করে। সেই লক্ষ্যে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে এরুলিয়া মৌজায় ১০৯ দশমিক ৮১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য। প্রকল্পের আওতায় ছিল ৫ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০০ ফুট প্রস্থ রানওয়ে নির্মাণ, অফিস ভবন নির্মাণ, কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। ১৯৯৬ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০০০ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও সেটি আর চালু হয়নি। বর্তমান সরকার বিমানবন্দরটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
বিমানবন্দরগুলো চালুর বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. আনিসুর রহমান বলেন, বিষয়টি বেবিচক বলতে পারবে। তবে বেবিচক বলছে, এ বিষয়ে তারা কিছু জানে না।