আর্কাইভ  শনিবার ● ২৮ জুন ২০২৫ ● ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ২৮ জুন ২০২৫
আলোচনায় ফেরাতে ইরানকে ‘লোভ’ দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

আলোচনায় ফেরাতে ইরানকে ‘লোভ’ দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ইরান কখনও আত্মসমর্পণ করবে না: খামেনি

ইরান কখনও আত্মসমর্পণ করবে না: খামেনি

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে যেভাবে উসকে দিচ্ছে সমরাস্ত্রের ব্যবসা

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে যেভাবে উসকে দিচ্ছে সমরাস্ত্রের ব্যবসা

ইসরায়েলি হামলায় ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীসহ পরিবারের ১১ সদস্য নিহত

ইসরায়েলি হামলায় ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীসহ পরিবারের ১১ সদস্য নিহত

অনিয়ম তদন্তে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটি

গ্রেপ্তার আতঙ্কে নির্বাচন কমিশনার ইসি সচিবসহ অনেকে

শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, রাত ১২:০০

Ad

নিউজ ডেস্ক:  আতঙ্কে বিতর্কিত বিগত তিন সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার গ্রেপ্তারের পর অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসিরা আতঙ্কে রয়েছেন। এ ছাড়া তিন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় ইসির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব ও সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা; সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও আতঙ্কে রয়েছেন। ইতোমধ্যে বিগত তিন নির্বাচনের অনিয়ম তদন্তে সরকার উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে। এমনকি এ আতঙ্ক পৌঁছে গেছে তৃণমূলের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা তথা প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী স্কুল শিক্ষক পর্যন্ত। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা এসআই, এএসআই ও পুলিশ সদস্যরাও চিন্তায় রয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে গ্রেপ্তারও হতে পারেন। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের নজরদারিতে রেখেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিতর্কিত তিন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা সবাই ভালো পারফরম্যান্সের কারণে প্রমোশন ও প্রাইজ পোস্টিংও পেয়েছেন।

এদিকে ২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসিতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী ও মো. শাহ নেওয়াজ। সচিব ছিলেন ড. মোহাম্মদ সাদিক।

২০১৮ সালের নির্বাচনে সিইসি ছিলেন এ কে এম নূরুল হুদা। নির্বাচন কমিশনার ছিলেন প্রয়াত মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। সচিব ছিলেন হেলালুদ্দীন আহমদ। এর মধ্যে সিইসি ও সচিব বর্তমানে জেলে রয়েছেন। এ কমিশনে একমাত্র মাহবুব তালুকদারই সব অনিয়মের প্রতিবাদ করেছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় সিইসি ছিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান; রাশেদা সুলতানা; মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান। সচিব ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। এ কমিশনের সিইসি ও সচিব জেলে রয়েছেন। বিতর্কিত বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে অনিয়মে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি করছে সরকার। দ্রুত এ কমিটি কাজ শুরু করবে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এ কমিটিকে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ পেশ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব শামীম আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক (সুপণ), জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম হোসাইন ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আবদুল আলীম। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ তিনটি নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে এবং এসব নির্বাচনে নানা কৌশলে জনগণের ভোট প্রদানের অধিকার ভূলুণ্ঠিত করে সাজানো প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করার জোরালো অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগও এসব নির্বাচন পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে। এতে দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র এবং মৌলিক মানবাধিকার বিপন্ন হয়েছে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

 

‘জনগণের ভোট ছাড়া’ নির্বাচন সম্পন্ন করা এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিএনপির করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে ফের চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ গতকাল শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন। গত রবিবার গ্রেপ্তার করার পর সোমবার নূরুল হুদাকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিলেন আদালত। সেই রিমান্ড শেষে গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে পুনরায় ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান গত রবিবার শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা করেন। মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের পাশাপাশি তাদের সময়ের নির্বাচন কমিশনারদের আসামি করা হয়। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।

 

মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই তিন নির্বাচনে ‘গায়েবি মামলা, অপহরণ, গুম, খুন ও নির্যাতনের’ ভয় দেখিয়ে, বিএনপি নেতা-কর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার’ করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সত্ত্বেও সংবিধান লঙ্ঘন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, সরকারি কর্মচারী হয়েও অবৈধভাবে ভোটে হস্তক্ষেপ, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটের কাজ সম্পন্ন করা ও জনগণের ভোট না পেলেও সংসদ সদস্য হিসেবে মিথ্যাভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ওই ঘটনার সাক্ষী সব ভোট কেন্দ্র এলাকার ভোটাররা এবং ভোটারদের মধ্যে যারা ভোট প্রদান করতে বঞ্চিত হয়েছেন তারাসহ ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রে অনেক সৎ প্রিসাইডিং অফিসার, পুলিশ অফিসারসহ স্থানীয় লোকজন এবং অন্যরা ঘটনার সাক্ষী হবেন। ‘এ ছাড়া ব্যালট পেপারে যে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃতভাবে তারা ভোট দিয়েছেন কি না সে বিষয়ে উল্লিখিত ঘটনার সঠিক রহস্য তদন্তে সত্য উদ্ঘাটিত হবে।

’ এ মামলার পর পরই সাবেক দুই সিইসিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এজন্য তৃণমূলের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা পর্যন্ত এ মামলার কারণে আতঙ্কে রয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত বৃহস্পতিবার হাবিবুল আউয়ালের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দিনের ভোট রাতে করাসহ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় হাবিবুল আউয়ালের ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন করেছিল পুলিশ। শুনানি নিয়ে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

আজ তার রিমান্ড শেষ হওয়ার কথা। এদিকে বিগত তিন নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের আইনের আওতায় আনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এ উদ্যোগকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে নির্বাচন পর্যবেক্ষক মুনিরা খান গতকাল বলেন, সরকারের সদিচ্ছা এবং সহযোগিতা ছাড়া কোনো নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করলেও নির্বাচনটাকে পরিপূর্ণভাবে সুষ্ঠু-অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে পারে না। কেননা সেখানে সরকারের সম্পূর্ণ সহযোগিতা ও সদিচ্ছার প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। যারা রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়ে দেশে নির্বাচন পরিচালনার কথা বলেছেন। তাদের সেই শপথের মান যদি রাখতে হয়, তাদের সুষ্ঠু-অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতেই হবে। এর বাইরে যদি তারা করেন, তাহলে সেটা অপরাধ।

মন্তব্য করুন


Link copied