আর্কাইভ  সোমবার ● ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ● ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৪ নভেম্বর ২০২৫
৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বৃহত্তর সুন্নি জোট: তাহেরি

৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বৃহত্তর সুন্নি জোট: তাহেরি

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং: আহত শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তি, তদন্ত কমিটি গঠন

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং: আহত শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তি, তদন্ত কমিটি গঠন

'চিকেনস নেক ঘিরে ভারতের উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক'

'চিকেনস নেক ঘিরে ভারতের উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক'

কনকনে শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়

কনকনে শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়

১২ হাজার কোটি টাকার তিস্তা প্রকল্প, সমাধান নাকি নির্বাচনী কৌশল?

সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, রাত ১২:০০

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুঃখ-সুখ, আশা-হতাশার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে তিস্তা নদী। বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা, আর শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানিশূন্যতা- এ দুই চরম বাস্তবতার মধ্যেই বহু বছর ধরে জীবনযাপন করছে নদী-তীরের মানুষ। নাব্য সংকট, চর জেগে ওঠা, কৃষি ক্ষতি এবং নদীভাঙনের মতো সমস্যাগুলো তাদের প্রতিদিনের সঙ্গী। এ বাস্তবতায় তিস্তা নিয়ে বড় কোনো উদ্যোগ এখন স্থানীয়দের কাছে টিকে থাকার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে আবারও আলোচনায় এসেছে বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা। প্রকল্পটির সম্ভাব্য অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে- এটি কী সত্যিই উন্নয়ন আনতে পারবে, নাকি নির্বাচনের আগে ভোটের সমীকরণ বদলানোর নতুন কৌশল মাত্র?

তিস্তায় পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের। ১৯৮৩ সালের অন্তর্বর্তী চুক্তি বা ২০১১ সালের খসড়া স্থায়ী চুক্তি- কোনোটিই এখনও বাস্তব রূপ পায়নি। বিশেষ করে ২০১১ সালের পরিকল্পনা শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের আপত্তিতে থেমে যাওয়ার পর বিষয়টি দুই দেশের কূটনীতিতে আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।

প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে আবারও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। চীনা দূতাবাসের প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করেছে। প্রকল্পের প্রথম ধাপে, যা ১০ বছর মেয়াদি, নদীভাঙন প্রতিরোধ, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও সেচব্যবস্থা উন্নয়নের কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এরইমধ্যে খসড়া চীনা সরকারের কাছে পাঠিয়েছে।

চীনের রাজনৈতিক বিভাগের পরিচালক জং জিং জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হতে পারে। এ ছাড়া চীনা প্রতিনিধিরা বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি এবং বিভিন্ন নদী–রক্ষা আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করেছে।

রিভারাইন পিপলের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর তিস্তার ভাঙন ও প্লাবনে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষের ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি। বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের মুখে পড়ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর বড় প্রকল্পের ঘোষণা এলেও বাস্তবায়ন হয়নি; তিস্তার উন্নয়ন বরং পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির হাতিয়ারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিস্তা এখন শুধু পানি বা নদী–ব্যবস্থাপনার সমস্যা নয়; এটি উত্তরবঙ্গের মানুষের আবেগ, টিকে থাকার সংগ্রাম এবং ভোট রাজনীতির কেন্দ্রীয় ইস্যু। নির্বাচন এলেই তিস্তা নিয়ে প্রতিশ্রুতির বন্যা নামে, কিন্তু মাঠপর্যায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি সীমিতই থেকে গেছে।

সূত্র জানায়, আগের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেই তিস্তা উন্নয়ন নিয়ে চীনের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছিল। ২০১৬ সালে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না পাওয়ার তিস্তার দুই পাড়ে আধুনিক স্যাটেলাইট শহরসহ ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়। সরকারও আগ্রহ দেখালেও পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সমস্যা ও কূটনৈতিক জটিলতার কারণে প্রকল্পটি এগোয়নি।

সব মিলিয়ে স্থানীয় মানুষের মুখে এখন একটাই প্রশ্ন- তিস্তা মহাপরিকল্পনা কি সত্যিই তাদের বহু বছরের দুঃখ- কষ্টের স্থায়ী সমাধান আনবে, নাকি এটি আবারও নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবেই থেকে যাবে?

মন্তব্য করুন


Link copied