আর্কাইভ  রবিবার ● ৬ জুলাই ২০২৫ ● ২২ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ৬ জুলাই ২০২৫
ছুটির দিনেও রাজপথ ছিল অগ্নিগর্ভ

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
ছুটির দিনেও রাজপথ ছিল অগ্নিগর্ভ

৭ জুলাই ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’র প্রিমিয়ার শো

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
৭ জুলাই ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’র প্রিমিয়ার শো

১৯ জুলাই 'মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ দিবস' ঘোষণার দাবি

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
১৯ জুলাই 'মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ দিবস' ঘোষণার দাবি

হাসিনার মুখে ছিল এক কথা, ভেতরে অন্য চিত্র

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
হাসিনার মুখে ছিল এক কথা, ভেতরে অন্য চিত্র

জুলাই অভ্যুত্থানে নৃশংসতা দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কাম্য

শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫, রাত ১০:৫৪

Ad

নিউজ ডেস্ক: জুলাই অভ্যুত্থানে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্রে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা এককথায় ভয়াবহ। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-জুলাই অভ্যুত্থানে উত্তাল ও ভয়াবহ ৫ আগস্টের দিনটিতে রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালায়। অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত রমনা জোনের সাবেক এডিসির নির্দেশে পুলিশ শুয়ে, বসে, কখনো হাঁটু গেড়ে, কখনো দাঁড়িয়ে একের পর এক গুলি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে। তাদের গুলিতে আন্দোলনকারীরা যখন শহীদ হচ্ছিলেন, তখন পুলিশ সদস্যরা উচ্চৈঃস্বরে উল্লাস করে বলছিলেন-‘গুলি লাগছে, লাগছে’, ‘শেষ’, ‘মরছে, মরছে’। এ মামলায় অন্যতম সাক্ষী কনস্টেবল অজয় ঘোষের কাছ থেকে জানা যায় এমন অনেক অজানা তথ্য।

জানা যায়, সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিল আটকাতে চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। তখন চাইনিজ রাইফেল হাতে অন্যদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন এই কনস্টেবলও। ঊর্ধ্বতনের নির্দেশ সত্ত্বেও তিনি অপ্রয়োজনে গুলি চালাতে অস্বীকার করেন। এতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম আখতারুল ইসলাম কনস্টেবল অজয় ঘোষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং হুমকি দেন। এরপরও কনস্টেবল অজয় ঘোষ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না করলে তার কাছ থেকে চাইনিজ রাইফেলটি কেড়ে নিয়ে সেটি কনস্টেবল সুজন হোসেনের হাতে দিয়ে তাকে গুলির নির্দেশ দেন। এরপর কনস্টেবল সুজন সেই রাইফেল দিয়ে কখনো শুয়ে, কখনো বসে, কখনো দাঁড়িয়ে একের পর এক গুলি করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করেন। একইভাবে আখতারুল ইসলাম অন্য পুলিশ সদস্যদেরও হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেন।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগে (ফরমাল চার্জ) সেদিনের মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বর্ণনা উঠে এসেছে, তা কল্পকাহিনিকেও হার মানায়। আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই-শাসকগোষ্ঠী কতটা নৃশংস হলে জনতার ওপর এভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, প্রাণসংহারের পর করতে পারে বীভৎস উল্লাস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে থাকা যেসব অস্ত্র দেশের জনগণের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করার কথা, সেসব অস্ত্রই অবলীলায় ব্যবহার হয়েছে নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষের প্রাণসংহারে। বিরুদ্ধ মত ও সমালোচনা দমনে বিগত সরকার যে স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছে, তা ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায় হয়ে থাকবে। গুম কমিশনের রিপোর্ট কিংবা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্রে যে ভয়াবহ বর্ণনা উঠে এসেছে, তা ক্রিমিনোলজির পাঠ্যে স্থান পাওয়ার মতো, সন্দেহ নেই।

বিগত সরকারের স্বৈরতান্ত্রিকতার মুখোশ উন্মোচন করলেই শুধু হবে না, সব অপকর্মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও নিশ্চিত করা জরুরি। আমাদের দেশে আইনি প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সময়ও যাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উত্থাপিত এসব মামলা ও বিচার কার্যক্রমে ব্যত্যয় না ঘটে, অন্তর্বর্তী সরকারকে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও মনে করি আমরা। যাদের নির্দেশে জুলাই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, শুধু তাদেরই নয়, যারা নির্দেশ পালন করেছে, যথাযথ তদন্তপূর্বক তাদেরও দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করা হবে-এটাই প্রত্যাশা।

মন্তব্য করুন


Link copied