আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ৮ জুলাই ২০২৫ ● ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ৮ জুলাই ২০২৫
এখনও শহীদ মীর মুগ্ধকে অজান্তে খুঁজে ফেরে তার পরিবার

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
এখনও শহীদ মীর মুগ্ধকে অজান্তে খুঁজে ফেরে তার পরিবার

রংপুরের  প্রিয় সহ জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
রংপুরের প্রিয় সহ জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার

রংপুরে তিনজন সহ গেজেটে নাম নেই ২৩ জুলাই শহীদের, অন্তর্ভুক্তির অপেক্ষায় পরিবার

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
রংপুরে তিনজন সহ গেজেটে নাম নেই ২৩ জুলাই শহীদের, অন্তর্ভুক্তির অপেক্ষায় পরিবার

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ দিবস পালনের আহ্বান

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ দিবস পালনের আহ্বান

ভুঁইফুড় অনলাইনশপ ফেসবুক পেজ অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণার ফাঁদ

সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫, বিকাল ০৫:৫৯

নিউজ ডেস্ক: আজকাল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন কেনাকাটা। বিশেষত করোনা মহামারীর দুঃসময়ে ঘরবন্দি মানুষের প্রয়োজন পূরণে অনলাইন শপগুলোর কার্যকর ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে ক্রেতার অসতর্কতা, বিক্রেতার প্রতারণার মনোভাব এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় প্রতারণার হারও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এতে ক্রেতারা যেমন অনলাইন শপিং থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, তেমনি প্রতারকদের সঙ্গে সৎ ব্যবসায়ীরাও ইমেজ হারাচ্ছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অনলাইন শপিংয়ে যেসব সংকট তৈরি হচ্ছে, তার সুন্দর ও যুগোপযোগী সমাধান দিয়েছে ইসলামি শরিয়ত। কোরআন, হাদিস ও ফিকহের মূলনীতিগুলো মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করলে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে এসব সংকট মূলেই বিনষ্ট হবে। ক্রেতা-বিক্রেতার কেউই কোনোভাবে প্রতারিত কিংবা বঞ্চিত হবেন না।

অনলাইনে কেনাকাটার সবচেয়ে বড় সংকট প্রতারণা। নানাভাবে গ্রাহকদের প্রতারিত করে যাচ্ছে কিছু ভুঁইফুড় অনলাইনশপ ফেসবুক পেজ , ল্যান্ডিং পেজ । যেমন অরিজিনাল প্রোডাক্টের দাম রেখে রেপ্লিকা ও নকল প্রোডাক্ট গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একজনের ভিডিও বিজ্ঞাপন পামিশন না নিয়ে কপি রাইট করে বুষ্ট বানিজ্যের মাধ্যমে গ্রাহকদের লোভনীয় করে যাচ্ছে। গ্রাহক আকৃষ্ট হয়ে বিশ্বাসের সহিত অর্ডার করে হচ্ছে প্রতারিত। বাজার মূল্যের তুলনায় বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। অফারের প্রলোভন ও ক্যাশব্যাকের মিথ্যা আশ^াস দিয়ে অযাচিতভাবে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে গ্রাহকের টাকা। ছবিতে দেখানো পণ্যের মানের সঙ্গে ডেলিভারিকৃত পণ্যে মিল থাকছে না। ক্যাশ অন ডেলিভারির সুযোগও রাখেনি অনেক প্রতিষ্ঠান। যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়ারও বিস্তর অভিযোগ আছে অনলাইন শপগুলোর বিরুদ্ধে।

ইসলামে প্রতারণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি জঘন্য অপরাধ। একবার রাসুল (সা.) (বাজারে) একটি খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি খাদ্যস্তূপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলে ভেতরে ভেজা পেলেন। তখন তিনি বললেন, সমস্যা কী হে পণ্যের মালিক? সে বলল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে হে আল্লাহর রাসুল। রাসুল (সা.) তাকে বললেন, তাহলে ভেজা অংশ শস্যের ওপরে রাখলে না কেন, যাতে তা দেখেই ক্রেতা ক্রয় করতে পারে। যে আমাদের প্রতারিত করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (সহিহ্ মুসলিম, হাদিস : ১০২)

পণ্যের দোষ-ত্রুটি গোপন করে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তা বিক্রি করা ইসলামে নিষিদ্ধ। দোষ-ত্রুটি থাকলে অবশ্যই ক্রেতাকে তা জানাতে হবে। বিক্রয়ের সময় পণ্যের দুর্বলতা উল্লেখ না করা হারাম। (ইসলামে হালাল হারামের বিধান, পৃষ্ঠা : ৩৬০)

প্রতারিত না হওয়ার জন্য ইসলাম ক্রেতার এখতিয়ার তথা অধিকারের কথা বলে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি ভঙ্গ করার এখতিয়ার থাকবে। যদি তারা উভয়েই সততা অবলম্বন করে এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে, তাহলে তাদের বেচাকেনায় কল্যাণ হবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং দোষ-ত্রুটি গোপন করে, তাহলে তাদের বেচাকেনায় বরকত উধাও হয়ে যাবে।’ (সহিহ্ বুখারি, হাদিস : ২০৭৯)

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পণ্য ডেলিভারির পর টাকা পরিশোধ করার আগে প্যাকিং খোলার সুযোগ থাকে না। ফলে, পণ্যের দোষত্রুটি দেখে নেওয়ার সুযোগ থাকছে না। এই ক্ষেত্রে ইসলাম পণ্যটি দেখে নেওয়ার এখতিয়ার দেয়। ফিকহের পরিভাষায় এটিকে খিয়ারে রুইয়াত বলা হয়। দেখার পর দোষ-ত্রুটি পাওয়া গেলে ফেরত দেওয়ার অধিকার গ্রাহকের রয়েছে।

তাই ঝামেলা এড়াতে অনলাইন শপগুলোতে পণ্যের সুস্পষ্ট বিস্তারিত বিবরণ থাকতে হবে। পণ্যের গুণগত মান, উৎপাদনের স্থান, তারিখ, ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টি, ওজন-সাইজ ইত্যাদির যথাযথ বর্ণনা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের লুকোচুরি করলে, তা প্রতারণা বলে গণ্য হবে। যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মন্দ পরিণাম তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং নিজের বিক্রয়ের জন্য ওজন করার সময় কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না, তারা পুনরুত্থিত হবে মহা দিবসে? ’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৫)

ক্যাশ অন ডেলিভারির সিস্টেম না রাখায় অনেক ক্ষেত্রে টাকা আগে পরিশোধ করে গ্রাহক নিরুপায় হয়ে পণ্য গ্রহণ করেন। তাই ইসলামি শরিয়ত মতে, ক্যাশ অন ডেলিভারি ও পণ্য পছন্দ না হলে ফেরত দেওয়ার নিয়ম থাকতে হবে। কারণ এ ক্ষেত্রে বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এ ক্ষেত্রে বিক্রেতা অবশ্যই ডেলিভারি চার্জ অগ্রিম রাখতে পারেন। এতে করে ক্যাশ অন ডেলিভারির সুযোগ গ্রহণ করে ক্রেতার পক্ষ থেকে কোনো প্রতারণার আশঙ্কা থাকবে না। ফলে বিক্রেতা লোকসান ও সময়ের অপচয় থেকে রেহাই পাবেন।

ক্রয়-বিক্রয়ের আরেকটি মূলনীতি হলো, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে। পণ্যের ডেলিভারির সময় উল্লেখ না করলে বেচাকেনা সহিহ্ হবে না। আর ডেলিভারির ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহে গড়িমসি করার কোনো সুযোগ নেই।

তাছাড়া কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত লোকদের মাধ্যমে মিথ্যা রিভিউ দিয়ে গ্রাহকদের প্রতারিত করা যাবে না। মিথ্যার ধ্বংস অনিবার্য। এটি এক ধরনের দালালি, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ক্রেতার বলা মূল্যের ওপর মূল্য বৃদ্ধি করে তোমরা মানুষকে ধোঁকা দিয়ো না।’ (রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস : ১৫৮১)

ব্যবসায়-বাণিজ্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ পেশা। সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ীরা কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবেন। আর যারা প্রতারণার পথ অবলম্বন করে, তাদের জন্য পরকালে রয়েছে ভয়ংকর শাস্তি। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহাঅপরাধী হিসেবে উত্থিত হবে, তবে যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করে তারা ছাড়া।’ (ইবনে মাজাহ : ২ / ২০৮)

মন্তব্য করুন


Link copied