নিউজ ডেস্ক: মৌ শিখা তারকা অভিনেত্রী নন। কিন্তু পরিচিত মুখ। অভিনয় করতে করতে কেটে গেছে ২৫ বছর। স্বামীকে হারিয়েছেন, সন্তান বড় করেছেন, তাদের বিয়ে দিয়েছেন। আজও তিনি অভিনয় করে যাচ্ছেন। করে যাচ্ছেন বেঁচে থাকার সংগ্রাম। এখনও ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিকের জন্য দরকষাকষি করতে হয় তাকে।
এসব দুঃখের কথা এতদিন চেপে রেখেছিলেন শিখা। সম্প্রতি দুঃখগুলো চেপে বসেছিল বুকের ভেতর। তাই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অভিনেত্রী। জাগো নিউজকে শিখা মৌ বলেন, ‘গত আড়াই মাস ধরে হঠাৎ কাজ কমে গেছে। মাসে তিন-চারটা কল পাই। তারপরও দেখা যাচ্ছে রেমুনারেশন নিয়ে ঝামেলা। আমার পরে অভিনয়ে এসে অনেকেই আমার চেয়ে বেশি রেমুনারেশন পাচ্ছে। আমি ২৫ বছর কাজ করার পরও ৫ হাজার টাকা চাইলে অনেকে মনে করে বেশি চেয়ে ফেলেছি।’

কম পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে শিখা বলেন, ‘এই টাকা কি অনেক বেশি? নতুনরা এসেই তো কত টাকা নিচ্ছে! নতুন-পুরাতন সবাই যাতে আমাকে নিয়ে কাজ করতে পারে, এ জন্য রেমুনারেশন বাড়াই না। কেউ অসুবিধার কথা বললে আমি কম টাকায়ও কাজ করে দিই। বলি, “ঠিক আছে বাবা, যা পারো দিও।” বিশেষ করে উত্তরার মধ্যে হলে আমার তেমন খরচ হয় না। দূরে কোথাও হলে যদি গাড়ি না দেয়, উবার নিয়ে যেতে হয়। তখন তো চার হাজারে পোষায় না। তখন বলি পাঁচ দিও। অন্তত ওরাও যেন কাজ করাতে পারে, আমিও যেন কাজটা করতে পারি, কাজ যেন মিস না হয়।’
অষ্টম শ্রেণিতে শিখাকে বিয়ে দেন মা-বাবা। দুই ছেলে, এক মেয়ের মা হন। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানদের নিয়ে মায়ের বাসায় চলে গিয়েছিলেন। মায়ের কাছে সন্তানদের রেখে পড়াশোনা, থিয়েটার ও টিউশন করেন। অভিনেত্রী হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু হয় নাগরিক নাট্যঙ্গন থেকে। পরে কাজ করেছেন টিভিনাটক ও চলচ্চিত্রেও। গত আড়াই মাস কোনো কাজ পাচ্ছেন না এই অভিনেত্রী।

ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, ‘এখন নিজেকে অভিনেত্রী ভাবতে লজ্জা হচ্ছে। আগে মাসে ১৫ থেকে ২০ দিন কাজ করতাম। গত আড়াই মাস যাবত মাসে চার থেকে পাঁচ দিন কাজ করছি। কীভাবে মনে হবে যে, আমি অভিনয়শিল্পী? অথচ অভিনয় করেই আমার সংসার চলে।’ তিনি লিখেছেন, ‘বেঁচে থাকতে আমার মূল্যায়ন করা না হলেও জানি মৃত্যুর পর কিছু মানুষ আমাকে মনে রাখবে। হয়তো বলবে, আহারে মহিলা কত ভালো ছিল, কত সহজ-সরল ছিল, কারো সাথে-পাছে ছিল না। মহিলার আত্মা শান্তি পাক। কিন্তু তাতে কী লাভ? বেঁচে থাকতে তো দরকার কাজ। আমার অনুরোধ, মরে গেলে দয়া করে কেউ আফসোস করবেন না। আমাকে মনে করারও দরকার নেই।’
মানুষ আজীবন কাজ করে না। এক সময় অবসরে যায়। অবসরকালীন সময়ের জন্য সঞ্চয় করেননি? এমন প্রশ্নে শিখা বলেন, ‘আমি সিঙ্গেল মাদার। বিধবা, ডিভোর্সি নই। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ২৬ বছর, তখন অনার্সে পড়ি। ক্লাস এইটে বিয়ে হয়। ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছি। দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে, মেয়ে আছে আমার সঙ্গে। এদের পেছনেই সব টাকা শেষ হয়ে গেছে। একজন সিঙ্গেল মা কত টাকা ইনকাম করতে পারে?’
নিজের সংগ্রাম প্রসঙ্গে শিখা বলেন, ‘মিডিয়ায় যদি কেউ সৎভাবে থাকতে চায়, তার ইনকাম কম হবে। আমি বুটিকের কাজ পারি। শাড়ি বানিয়ে সেল করেছি। মায়ের সাপোর্টের কারণে অর্থের অভাব টের পাইনি। তার মধ্যে আমার চার-পাঁচবার অপারেশন হয়েছে। শিল্পীসমিতি থেকেও কোনো হেল্প নিইনি। কারো কাছ থেকেই কোনো হেল্প নিইনি। আমার সঞ্চয় আমার ছেলে-মেয়ে।’

ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর কেউ কি যোগাযোগ করেছে? জানতে চাইলে শিখা বলেন, ‘না, কেউ যোগাযোগ করেনি। তবে দুজন ডিরেক্টর ফোন করে ডেট নিয়েছেন। জানি না তারা স্ট্যাটাস দেখেছেন কি না। ওই নাটকে আমার কো-আর্টিস্ট আবুল হায়াত।’
মৌ শিখা অভিনীত সিনেমা ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘ছায়াবৃক্ষ’, ‘লকডাউনের ভালোবাসা’, ‘মন বোঝে না’, ‘সোলমেড’, ‘লিডার, আমিই বাংলাদেশ’। মুক্তির অপেক্ষায় আছে সিনেমা ‘জমজ ভূতের গল্প’।