আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১ আগস্ট ২০২৫ ● ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১ আগস্ট ২০২৫

সবুজের বারান্দায় একখণ্ড সবুজ: শিক্ষার্থীর হাতে গড়া নীরব প্রকৃতির আশ্রয়

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, দুপুর ১০:০২

Advertisement

মো: শফিকুল ইসলাম ইরফান: নগরজীবনের যান্ত্রিকতা ও শহুরে ছাত্রজীবনের ব্যস্ততা, একঘেয়েমি ও কংক্রিটের ঘেরাটোপের মাঝেও যখন কেউ প্রকৃতিকে ভালোবাসে, তখন ছোট একটি বারান্দাও হয়ে ওঠে প্রাণের আশ্রয়স্থল। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সবুজ ঠিক তেমনই একজন প্রকৃতিপ্রেমী, যিনি নিজ কক্ষের সামান্য একটি বারান্দায় গড়ে তুলেছেন এক মনোরম ছাদ বাগান।

মুখতার এলাহী হলের অন্যান্য কক্ষের তুলনায় সবুজের ৫০২ নম্বর রুমের সামনে দাঁড়ালেই বোঝা যায় তার আলাদা পরিচয়। হলের কংক্রিটের একঘেয়েমির মাঝে গাছগুলো যেন মুগ্ধতা ছড়ানো শিল্পকর্ম। বারান্দা জুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা জাতের গাছ। ছোট বড় টবে সাজানো ফিকাস,কাটা মুকুট,মানি প্ল্যান্ট, ক্যাকটাস, পাতাবাহার, ডলার গাছ, ফুল ও ঔষধি গাছ—সব মিলিয়ে এক প্রাণবন্ত সবুজ জগত। পুরোনো প্লাস্টিক বোতল, এমনকি ব্যবহৃত মগ ও রূপ পেয়েছে উদ্ভিদের বাসস্থানে। এটি শুধু সৃজনশীলতা নয়, বরং পরিবেশবান্ধব চিন্তারও বহিঃপ্রকাশ।
 
সবুজ জানান,“বাগানের শুরুর কৃতিত্ব তার সাবেক রুমমেট মামুন ভাইয়ের,তার কাছ থেকেই গাছের প্রতি মায়া জন্মেছিল। সে শুধু সেই ছোট উদ্যোগটাকে বড় করেছে”।
তিনি আরো বলেন “আমি যখন ক্লাসের চাপ কিংবা মানসিক চাপের মধ্যে থাকি, তখন এই গাছগুলো আমার সঙ্গী হয়। প্রতিদিন সকালে পানি দেওয়া, নতুন পাতা গজানো দেখা কিংবা ফুল ফোটার অপেক্ষায় থাকা—এসবই আমার দিনের এক অপরিহার্য অংশ,ঘরের জানালা খুললেই দেখা মেলে সবুজের ছোঁয়া, যা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।”
 
শুধু নিজেকে নয়, পাশের কক্ষের শিক্ষার্থীরাও যখন ক্লান্ত বা মন খারাপ থাকে,তখন এই বাগান থেকে প্রশান্তি খুঁজে নেয়।
একাউন্টিং ১৪ ব্যাচের নয়ন নামে এক শিক্ষার্থী জানান, “সবুজ ভাইয়ের রুমের সামনের গাছগুলোর দিকে তাকালেই মনে হয় যেন প্রকৃতির এক কোণেই দাঁড়িয়ে আছি। এটা আমাদের সবারই একটা ‘ফ্রেশ জোন’।"
 
“যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপানের ‘শিনরিন-ইয়োকু’ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, দিনে মাত্র ২০ মিনিট গাছপালার সান্নিধ্যে থাকলে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, যা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। পাশাপাশি NASA-এর গবেষণায় প্রমাণিত, ইনডোর গাছ বাতাসকে বিশুদ্ধ করতেও সহায়তা করে।”
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন তরুণ শিক্ষার্থীর হাতে গড়ে ওঠা এই বাগান যেন শহরজীবনের প্রাত্যহিক ক্লান্তির মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায়। সবুজের এই উদ্যোগ অনুপ্রেরণা হতে পারে দেশের অন্য শিক্ষার্থীদের কাছেও, যারা অল্প পরিসরে হলেও নিজেদের মতো করে গড়ে তুলতে পারে প্রকৃতির এক চিরসবুজ কোণ।

মন্তব্য করুন


Link copied