বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)-এর আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘নীল দলের’ সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০২৩ সালের ২ আগস্ট রংপুরের সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক মাসুদ রানা এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে দাপুটে শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।
শেখ হাসিনার সেই সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষক মাসুদের সঙ্গে ছবিতে আবু সাইদ হত্যা মামলার আসামি ও গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, নীল দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. আপেল মাহমুদসহ আওয়ামীপন্থী আরও পাঁচজন শিক্ষককে দেখা যায়।
নতুন উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পরপরই এই শিক্ষক অবস্থান পরিবর্তন করে বাগিয়ে নেন পরিবহন প্রধানের দায়িত্ব। এরপর থেকেই ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন দিবস উদ্যাপন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের এই শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই আওয়ামীপন্থী হলেও, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর অবস্থান পাল্টে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়ে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন।
২০১৭ সালে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নীল দলের প্যানেল থেকে কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হন তিনি। তখন আওয়ামী আমলের প্রভাবশালী শিক্ষক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষকদের একটি উপস্থিতিপত্রে 'মুজিব বর্ষ' এর লোগো থাকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষকদের ডিউটি রোস্টার কমিটির প্রধান ছিলেন শিক্ষক মাসুদ।
সম্প্রতি কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার কক্ষে শাড়ি ও চুড়ি রেখে আসার ঘটনায় চাপে পড়ে তাঁরা। শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ তাঁদের পদত্যাগ দাবি করলে, গুঞ্জন উঠে—প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা উপাচার্যের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এই সুযোগে মাসুদ রানা উপাচার্যের সান্নিধ্য বাড়িয়ে ওই দুটি পদের যেকোনোটি বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও, উপাচার্যের কক্ষে এই শিক্ষককে নিয়মিত দেখা যায় বলেও অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা।
আওয়ামী প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর তার বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী নাম ও বেনামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাম্বার টেম্পারিং ও যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। পরবর্তীতে মাসুদ তার ঘনিষ্ঠ কিছু শিক্ষার্থীকে মানববন্ধনে নামিয়ে এসব অভিযোগ ধামাচাপা দেন।
বেরোবি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মুরসালিন মুন্না বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অতীতে আওয়ামীপন্থী থাকলেও নিজের অবৈধ নিয়োগের বৈধতা, মামলা থেকে অব্যাহতি এবং প্রশাসন থেকে সুবিধা নেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমানে বিএনপিপন্থী অবস্থানে ঝুঁকছেন কিছু শিক্ষক। যার একটি উদাহরণ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক এবং পরিবহন পুলের পরিচালক মাসুদ স্যার। তিনি আওয়ামী লীগের নীল দলের সদস্য ছিলেন এবং দলীয় সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন, কিন্তু বর্তমানে নিজেকে বিএনপিপন্থী শিক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করছেন।
মুন্না আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের আচরণ নিন্দনীয়। এতে শিক্ষার পরিবেশ এবং শিক্ষক সমাজে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের প্রশাসনের দায়িত্বে রাখা।
এ বিষয়ে শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল শিক্ষকই আওয়ামীপন্থি। সবাই এখানে দুইটা দলের সাথে যুক্ত ছিল। একটা নীল দল আর একটা হলুদ দল। যদি আওয়ামীলীগ না করতেন তাহলে শেখ হাসিনার জনসভায় আবু সাইদ হত্যা মামলার আসামি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি মশিউরের সাথে গিয়েছিলেন কেনো প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কোনো প্রোগ্রাম হলে মানুষ যেতেই পারে। তাই আমিও গিয়েছি। আর ছবি তো তুলতেই পারি। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের পর থেকে আমাকে নীল দলের কোনো সদস্যের তালিকায় দেখাতে পারবেন না।